স্বাধীনতা সংগ্রাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের সড়কদ্বীপে অবস্থিত একটি ভাস্কর্যভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন ভাস্কর শামীম সিকদার।

১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে শামীম সিকদার ফুলার রোডে অবস্থিত সেকেলে বাংলো স্টাইলের বাড়ির (বর্তমানে প্রোভিসির বাসভবন) সামনের পরিত্যক্ত জায়গায় এই ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু করেন। তখন এর নাম ছিল অমর একুশে।

১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমদ শরীফ এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে এর উদ্বোধন করেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ওই স্থানে উদয়ন স্কুলের একটি ভবন নির্মাণ শুরু হলে ভাস্কর্যটিকে পাশের সড়ক দ্বীপে স্থানান্তর করা হয়। পরে শামীম সিকদার অমর এর অববয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আলোকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেন। তখন এর নামকরণ করা হয় ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’। একই সঙ্গে তিনি সড়কদ্বীপটিকে নতুন রূপে বিভিন্ন ছোটছোট ভাস্কর্য দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন।

এই ভাস্কর্যে তিনি উপস্থাপন করেছেন ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের মহান ভাষা আন্দোলন, ’৬৬ খ্রিষ্টাব্দের স্বাধিকার আন্দোলন, ’৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণঅভ্যুত্থান, ’৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান, ২৫শে মার্চের কালরাত্রি, ২৬শে মার্চের বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা, ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন। প্রতিটি আন্দোলনে নিহত হয়েছেন এমন ১৮ জন শহিদের মুখাবয়ব দিয়ে পুরো ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে। সবার নিচে রয়েছে ভাষা শহিদের আর সবার ওপরে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যে শীর্ষদেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

এছাড়া ত্রিকোণাকৃতির সড়কদ্বীপ জুড়ে দেশ-বিদেশের সেরা সব মানুষের আবক্ষ প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। এসব ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, লালন ফকির, জগদীশ চন্দ্র বসু, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূধন দত্ত, সুকান্ত ভট্টাচার্য, শিল্পী এসএম সুলতান, সুভাষ বোস, মহাত্মা গান্ধী, কামাল আতাতুর্ক, রাজা রামমোহন রায়, মাও সেতুং, ইয়াসির আরাফাত, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী, কর্নেল এমএজি ওসমানী, তাজউদ্দিন আহমেদ, সিরাজ সিকাদার প্রমুখের প্রতিকৃতি। এছাড়া ভাস্কর্যটির তিন কোণে আছে আরো তিনটি প্রতিকৃতি। এর একটি নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ নূর হোসেনের।

একটি হাতির চিত্তাকর্ষক ভাস্কর্য ও ভাস্কর শামীম শিকদারের দুটি প্রতিকৃতিসহ স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যে মোট ১১৬টি ভাস্কর্য রয়েছে। শ্বেতবর্ণের এ ভাস্কর্যটির উচ্চতা ৬০ ফুট। আর পরীসীমা ৮৫.৭৫ ফুট। একটি গোলাকার ফোয়ারার মাঝখানে উপস্থাপিত স্বাধীনতা সংগ্রাম নামক ভাস্কর্যটির আশপাশের ছোটছোট ভাস্কর্যগুলোর উচ্চতা ৩-৪ ফুট। মূল ভাস্কর্যটির নিচে নামফলকে লেখা রয়েছে “স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য”।