শিখা সতের
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৭ জন মুক্তিকামী শহিদ যুবকের স্মরণে প্রতিষ্ঠিত স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধটি স্থাপিত হয়েছে ছাতক-সিলেট সড়কের মাধবপুর-লালপুর সেতু সংলগ্ন স্থানে।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর,  ১৭ জন যুবক ছাতকের সুরমা নদী হয়ে ভারতের চেলায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ২৬শে মে এঁরা ছাতকের নোয়ারাই গ্রাম হয়ে বেতুরা গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময়, ওই এলাকার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চর, স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান মতছির আলী ওরফে ফকির চেয়ারম্যান, গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর এদেরকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা ১৭জন যুবককে হাত-পা বেঁধে ছাতক থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তাদের উপর রাতভর নির্যাতন চালানো হয়। পরের দিন এদেরকে ছাতক-সিলেট সড়কের পশ্চিম পাশে মাধবপুর গ্রামের লাল পুলের কাছে নিয়ে আসে এবং এঁদেরকে গুলি করে হত্যা করে। কোনো কোনো মতে ১০ দিন নির্যাতন চালানোর পর হত্যা করা হয়েছিল। পরে এঁদের দেহ গর্তের নিক্ষেপ করে পুঁতে ফেলা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানী এই বধ্যভূমিটি চিহ্নিত করে রেখেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই সুনামগঞ্জ মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতিট্রাস্টের অর্থায়নে ও থানা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে এখানে নির্মিত হয় স্মৃতিসৌধ। এই সময় লোহার তৈরি সূর্যের অবয়বে গোলাকৃতি ধাতব স্থাপনার উপরি ভাগে রড দিয়ে ১৭ শহিদের প্রতীক সতেরটি সূর্যরশ্মি তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণীয় রাখার প্রয়াস ছিল এই স্মৃতিসৌধে।

এই ১৭জন শহিদের গণকবরের চারপাশে ১০ ইঞ্চি পুরু, ৪.৫ ফুট উঁচু ১৫ ফুট লম্বা দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে। এর পূর্বদিকের দেওয়ালের উপর রয়েছে ছয়টি স্তম্ভ। মাঝখানের দুটি স্তম্ভের উচ্চতা ৮ ফুট, তারপরের দুটি স্তম্ভের উচ্চতা ৬.৫ ফুট এবং সবশেষ দুটি স্তম্ভের উচ্চতা ৫ ফুট। এছাড়া রয়েছে ১৫ ফুট জুড়ে রয়েছে একটি শাপলা ফুল। মাঝখানের দুটি স্তম্ভের মাঝ-বরাবর রয়েছে একটি সূর্যের প্রতিকৃতি। প্রাথমিকভাবে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলেও পরে, পুরানো অবকাঠামো পরিবর্তন করে আরও বড় পরিসরে বর্তমান স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়। এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণে প্রায় ‌১৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত পত্রিকা সমূহ