বগা হ্রদ
সমার্থক নাম : বগাকাইন হ্রদ, বগা হ্রদ।

বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা 'নাইতং' মৌজায় অবস্থিত
একটি হ্রদ। সাধারণভাবে একে আবদ্ধ হ্রদ বলা হয়। কারণ, এই হ্রদ থেকে সরাসরি পানি বেরিয়ে যেতে পারে না বা এই হ্রদে অন্য কোনো জলপ্রবাহ প্রবেশ করে না। তবে এই হ্রদের উপরিতল থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝর্ণার উৎস আছে। এই ঝর্ণাটি বগা ছড়া নামে পরিচিত। আর বৃষ্টির পানি এই হ্রদের পানির মূল উৎস।

বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এবং রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান।

এই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট হ্রদ। এর নিকটবর্তী পাহাড়টি হলো কেওকারাডাং। এই পাহাড়ের উচ্চতা ৩,১৭২ ফুট। আর এই হ্রদের উচ্চতা প্রায় ২০০০ ফুট। এই হ্রদটির তিনদিক পর্বতশৃঙ্গ দ্বারা বেষ্টিত। এই শৃঙ্গগুলো পাহাড়ী বাঁশঝাড়ে আবৃত।
এর গড় গভীরতা ৩৮ মিটার। আয়তন প্রায় ১৫ একর। এই হ্রদের রঙ নীল। হ্রদের পানি কখনও পরিষ্কার আবার কখনওবা ঘোলাটে হয়ে যায়।  অনেকে মনে করেন এর তলদেশে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে এবং এই প্রস্রবণের কারণে হ্রদের পানির রঙ বদলে যায়।

বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিকগণের মতে এই হ্রদটি একটি মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ। কারো কারো মতে উল্কাপিণ্ডের পতনে এই হ্রদ সৃষ্টি হয়েছে। তবে স্থানীয় বম, মুরং, ম্রো, তঞ্চংগ্যা ক্ষুদ্রজাতিসত্তাদের উপকথা অনুসারে মনে হয়, বহু আগে এখানে আগ্নেয়গিরি ছিল। বম ভাষায় বগা শব্দের অর্থ হলো ড্রাগন। এদের মতে- বহুকাল আগে একটি পাহাড়ে অগ্নিবর্ষণকারী ড্রাগন দেবতা বসবাস করতো। এই দেবতার ক্রোধ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য স্থানীয় অধিবাসীরা গবাদী পশু উৎসর্গ করতো। একবার কিছু মানুষ এই দেবতাকে হত্যা করে। ফলে দেবতার অভিশাপে এই হ্রদের সৃষ্টি হয় এবং আশপাশের বহু এলাকা প্লাবিত করে। কখনো কখনো এর পানি বেশ অম্লধর্মী হয়ে উঠে। সম্ভবত এই হ্রদের তলদেশের উষ্ণ প্রস্রবণের কারণে এর পানি অম্লধর্মী হয়ে উঠে।