কুমিল্লা
বাংলাদেশ-এর চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা।

ভৌগোলিক অবস্থান: ২৩°০১' থেকে ২৩°৪৭' ৩৬" উত্তর অক্ষাংশে এবং ৯০°৩৯' থেকে ৯১°২২' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত। উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, দক্ষিণে ফেনী ও নোয়াখালী জেলা, পূর্বে ভারত-এর ত্রিপুরা প্রদেশ, পশ্চিমে চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলা।

আয়তন: ৩০৮৭.৩৩ বর্গ কিলোমিটার।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত দৈর্ঘ্য: ১০৬ কিলোমিটার
প্রশাসনিক কাঠামো: উপজেলা সংখ্যা ১৭ টি। এগুলো হলো- আদর্শ কুমিল্লা সদর, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম, বরুড়া, নাংগলকোট, মনোহরগঞ্জ, চান্দিনা, তিতাস, দাউদকান্দি, হোমনা, মেঘনা, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও লালমাই।
জনসংখ্যা: ৫৩,৮৭,২৮৮ জন (২০১১ খ্রিষ্টাব্দ)

ইতিহাস:
প্রাচীনকালে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত ছিল। পরে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অধীনে চলে যায়। এ অঞ্চলের প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শনাদি সূত্র অনুসরণে যতদূর জানা যায় খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরা গুপ্ত সম্রাটদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল। খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে অষ্টম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত এ অঞ্চলে বৌদ্ধ দেববংশ রাজত্ব করে।

৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চন্দ্রবংশীয় রাজা ত্রৈলোক্যচন্দ্র সমতট দখল করেন এবং  সমতট-এর রাজধানী দেবকোট অধিকার করেন। এই সূত্রে ত্রৈলোক্যচন্দ্র একজন সার্বভৌম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। এই সময় কুমিল্লা হরিকেলের রাজাগণের শাসনাধীনে আসে। প্রত্নপ্রমাণ হতে পাওয়া যায় যে, দশম হতে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বছর এ অঞ্চল চন্দ্র রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছে। মধ্যবর্তী সময়ে মোঘলদের দ্বারা শাসিত হয়। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লা'র পতনের পর কুমিল্লা মীরজাফরের শাসনাধীনে আসে। ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে ি ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি কৌশলে   মীরজাফরকে ক্ষমতাচ্যুত করে মীরকাশিমকে সিংহাসনে বসায়। অবশ্য এজন্য মীরকাশিম ইংরেজদেরকে দুই লক্ষ পাউন্ড উৎকোচ প্রদান করে। মীরকাশিমের সাথে ইংরেজদের স্বার্থ-সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের সূত্রে উভয় বাহিনীর ভিতর যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠে। ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে মীরকাশিমের অধিকার খর্ব করার জন্য, ইংরেজরা মীরজাফরকে পুনরায় সিংহাসনে বসায়।

১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হলে, তাঁর পুত্র নাজিম-উদ-দৌলা সিংহাসন লাভ করেন। এই সময় ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি কুমিল্লা-সহ সমতট হরিকেলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অধিকার লাভ করে। ১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে কোম্পানী প্রদেশে একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। এই সময় কুমিল্লা ঢাকা প্রদেশের অন্তর্গত করা হয়। ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লাকে কালেক্টরের অধীনস্থ করা হয়।

১৭৯০ ত্রিপুরা জেলা গঠনের মাধ্যমে ত্রিপুরা কালেক্টরেটের যাত্রা শুরু হয়। ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দের তৃতীয় রেগুলেশন অনুযায়ী ত্রিপুরা জেলার জন্য একজন পৃথক দেওয়ানি জজ নিযুক্ত করা হয় এবং সে বছরই তাঁকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়।

১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরের পদগুলিকে পৃথক করা হয়। কিন্তু ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে আবার এই দুটি পদকে একত্রিত করা হয়।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাক-ভারত বিভাজনের সময় কুমিল্লা তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ সময় কুমিল্লা ত্রিপুরা জেলার অংশ।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরা জেলার পূর্ব-পাকিস্তানের নামকরণ করা হয় কুমিল্লা এবং তখন থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর পদটির নামকরণ হয় ডেপুটি কমিশনার। এই সময় এই চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই জেলার মহকুমা ছিল।
১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লার দু'টি মহকুমা চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পৃথক জেলা হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়।

সূত্র :