ইটাখোলামুড়া বিহার

বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

বাংলাদেশের কুমিলা জেলার
উত্তর-পশ্চিম কালিবাজার সড়কের সংলগ্ন উত্তর কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত। এখানে পাশাপাশি দুটি প্রাচীন প্রত্নস্থাপনার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এর একটি মন্দির ও অপরটি বিহার। কোটাবাড়ি সড়কের উল্টোদিকে রয়েছে  রূপবানমুড়া। টিলাটি সড়কপথ থেকে ১১মিটার উঁচুতে তিনটি স্তরে বিন্যস্ত।  এটি বহুদিন ধরে এই অঞ্চলের মানুষ এখান থেকে ইট তুলে ব্যবহার করে আসছে। প্রাচীন ইটের প্রচুর প্রাপ্তির সূত্রে স্থানীয়ভাবে একে ইটাখোলামুড়া বলা হয়ে থাকে।

প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার সূত্রে এখানে বৌদ্ধ স্তূপ এবং স্তূপগুলো থেকে ৪২ মিটার উত্তরে একটি বৌদ্ধ মঠের সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, এই স্থানে পাঁচটি সাংস্কৃতিক স্তর অতিক্রান্ত হয়েছে। পূর্ববর্তী তিন সাংস্কৃতিক কালপর্যায়ের নিদর্শন পরবর্তীকালের ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে গেছে।

আদিতে ইটাখোলামুড়া স্তূপটি ১৩.১ বর্গমিটার ভিতের উপর দৃঢ়ভাবে নির্মিত হয়েছিল। এ স্তৃপের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর একটি ক্ষুদ্রাকৃতির পীঠস্থান। এর দৈর্ঘ্য ২.৪ মিটার এবং প্রস্থ ২.১ মিটার। এটি স্তূপের পূর্ব বা সম্মুখভাগের মধ্যস্থলে অবস্থিত। এখানেই একটি চুন-সুরকি নির্মিত পূর্ণাবয়ব অক্ষোভ্যের ক্ষতিগ্রস্থ মূর্তি পাওয়া গেছে। সৌধের এ অংশটি বেশ সুসংরক্ষিত। পরে নানা নির্মাণ কাঠামো যোগ করে ও রদবদলের মাধ্যমে এ মন্দিরসৌধের বিশদ সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। বিশেষ করে, পুরনো পীঠস্থান বা দেবমূর্তির অধিষ্ঠানস্থলটি বন্ধ করে দিয়ে পূর্বদিকে তিনটি নতুন লম্ব ও সকীর্ণ ভজনালয় নির্মাণ করা হয়েছিল। ফলে গোটা সৌধ কাঠামোটির আকৃতি আয়তাকার-এ পরিণত হয়েছিল। নতুন বিন্যাসে এর আয়তন হয়েছিল দৈর্ঘ্যে ৪১.৪মিটার এবং প্রস্থে ২৪ মিটার। ফলে এটি রূপবানমূড়ার মন্দিরের বিন্যাসশৈলীর মতো দাঁড়িছেল। একসময় আর পার্শ্ববর্তী ভজনালয়গুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কেবল মন্দিরের অন্যান্য অংশের মতো এখানেও বিশেষ ধর্মীয় মতবাদপন্থিদের পূজ্য দেবমূর্তি রাখার জন্য কয়েকটি ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ ছিল।

এ স্থাপনার চারদিকে পরিবেষ্টিত ২.৬ মিটার চওড়া বৃত্তাকার এক পরিক্রমণপথ আছে। এর বাইরে দিকে রয়েছে ১.২ মিটার সীমানা প্রাচীর। কিছুটা নিচে পাহাড়ের দ্বিতীয় স্তর বা সোপানে আরও দীর্ঘ। এটির দৈর্ঘ্য ৭৯ মিটার এবং প্রস্থ ৫৬ মিটার। এর সীমানার বাইরে দিকটা প্রাচীর পরিবেষ্টিত। এই স্তরে রয়েছে তিনটি গৌণ মন্দির। এগুলির দুটির অবস্থান পূর্বদিকের দুকোণায় ও অপেক্ষাকৃত বড় আকারের মন্দিরটি পশ্চিমে। পূর্বদিকে মধ্যস্থলে ২২ সোপানের সিঁড়িযুক্ত সুপরিসর প্রবেশপথ রয়েছে। এ সিঁড়িটি চলে গেছে আরও নিচের তৃতীয় সোপান বা স্তরে। তৃতীয় স্তরে সামনের দিকে একটি ক্ষতিগ্রস্ত বেষ্টনী দেওয়াল লক্ষ্য করা যায়। এর বহির্ভাগে রয়েছে খোপাকৃত নকশা, ও নানা ডিজাইনের অলঙ্করণ। দীর্ঘ সিঁড়ির শেষে রয়েছে পাঁচটি পূজা স্তূপ। এর সবগুলির আকৃতি আধা ক্রুশাকার। এর তিনটি রয়েছে বেষ্টনীর মধ্যে উত্তর-দক্ষিণে সারিবদ্ধভাবে। ধারণা করা হয়, এখানকার এক নির্মাণ কাঠামোগুলো  খ্রিষ্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতকের।

মাঝারি আকারের বৌদ্ধ মঠটি গতানুগতিক বর্গাকার। এর আয়তন ১৬.২ বর্গমিটার। এতে রয়েছে ১৯টি কক্ষ। এর হলঘরের মতো প্রবেশকক্ষটি একটা খোলা আঙিনার চারদিকে নির্মিত। এটি একটি পৃথক ঢিবির উপরে নির্মিত হয়েছিল। মঠের প্রবেশপথটি বিশাল। এর দৈর্ঘ্য ১৭.৬ মিটার এবং প্রস্থ  ৮.৫ মিটার। এর সামনের দিকের প্রবেশপথটি পূর্বশাখার মধ্যস্থলে অবস্থিত। মঠের কয়েকটি কক্ষে ইটনির্মিত শয়ন খাট রয়েছে। এ মঠটি ১৯৪৪-৪৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইট সংগ্রহকারীদের উৎপাতে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখান থেকে যে উল্লেখযোগ্য নির্দশন পাওয়া গেছে, তা হলো
খাঁটি নিরেট সোনার ৩টি গুলি (১৯ তোলা) ও একটি তাম্রশাসন। এর পাঠোদ্ধার এখনও হয় নি। এ ছাড়া চুন-সুরকির তৈরি কিছু মূর্তিও পাওয়া গেছে।

 


সূত্র: বাংলাপেডিয়া