কানাডা
Canada
পৃথিবীর
উত্তর আমেরিকা
মহাদেশের
অন্তর্গত একটি দেশ। আয়তনের বিচারে এই দেশটি মহাদেশের
প্রথম স্থান অধিকার করে আছে।
এর
রাজধানীর নাম অটোয়া। রাষ্ট্রীয় ভাষা ইংরেজি ও ফরাসি।
কানাডার কেবেক
(Quebec)
প্রদেশে ফরাসি ভাষা প্রাদেশিক সরকারি ভাষা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাধারণত ইংরেজি
ভাষা ব্যবহার করা হয়। ইংরেজি ও ফরাসি ভাষা ছাড়া এছাড়াও প্রচলিত আছে তিনটি জার্মান
ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভাষা−
হাটারীয়, মেনোনীয়, এবং পেনসিলভেনীয়। এছাড়া প্রায় দেড় লক্ষ আদিবাসী
৭০টিরও বেশি আমেরিকান আদিবাসী ভাষায় কথা বলে। এই স্থানীয়
ভাষাগুলির মধ্যে ব্ল্যাকফুট, চিপেউইয়ান, ক্রে, ডাকোটা, এস্কিমো, ওজিবওয়া
উল্লেখযোগ্য। এখানকার স্থানীয় প্রধান প্রধান ভাষাপরিবারের মধ্যে আছে আলগোংকিন,
আথাবাস্কান, এস্কিমো-আলেউট, ইরোকোইয়ান, সিউয়ান এবং ওয়াকাশান ভাষাপরিবার।
ধারণা করা হয়, ১৫৩৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে, বর্তমান ক্যুবেক শহরের বসবাসকারীরা
অভিযাত্রী জ্যাক কার্তিয়ার (Jacques
Cartier) স্টেইডাকোনা
(Stadacona)
গ্রামের দিকে পথনির্দশনের সুবিধার্থে কানাড
শব্দটি ব্যবহার করেছিল। এই সময় কার্তিয়ার
'কানাডা' শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন স্টেইডাকোনা এবং গ্রাম্য-প্রধান ডোন্নাকোনা
(Donnacona)
সম্পর্কিত সব কিছু নির্দেশিত করার জন্য। ১৫৪৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইউরোপের ভূগোল এবং
মানচিত্রে এই অঞ্চলকে 'কানাডা' হিসেবে নির্দেশিত করা শুরু হয়।
কানাডা হলো পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং শীতলতম দেশ। শীতকালে সারাদেশই বরফাচ্ছন্ন
হয়ে পড়ে
এবং ব্যাপক তুষারপাত ঘটে। এছাড়া উত্তরমেরু
কেন্দ্রিক শৈত প্রবাহ সারা শীতকাল জুড়েই থাকে। এই জলবায়ুটি রাশিয়ার সাইবেরিয়ার
সাথে তুলনা করা যায়। সব মিলিয়ে প্রায় ৮ মাস বরফাচ্ছন্ন থাকে।
ইউরোপীদের উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে পদার্পর্ণের সূত্রে, ১৫শ শতকের শুরুতে
ইংরেজ ও ফরাসিরা আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে পৌঁছেছিল। এরপর উত্তর আমেরিকা জুড়ে
এদের বসতি গড়ে উঠে। শুরু থেকেই বর্তমান কানাডার সেন্ট লরেন্স নদী থেকে গ্রেইট
লেইকসের উত্তর উপকূল অঞ্চল পর্যন্ত ফরাসিরা বিশাল বসতি গড়ে তোলে। এই কারণে,
এক সময় কানাডীয় ফরাসি উপনিবেশকে বলা হতো 'নব্য ফ্রান্স'।
আধিপত্যের সংঘাতে ১৭৬৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ফরাসি ও ইংরেজদের মধ্যে যুদ্ধ হয়। বেশ
কিছু গুরুত্ভবপূর্ণ যুদ্ধে ফরাসির পরাজাতি হলে, উত্তর আমেরিকার ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে
উত্তর আমেরিকার কিছু অংশ ফরাসিদের হাতে ছেড়ে দেয়। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে "উচ্চ কানাডা"
এবং "নিম্ন কানাডা" নামক দুটি ইংরেজ উপনিবেশে বিভক্ত হয়ে যায়। ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে
চুক্তির মাধ্যমে চারটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ নিয়ে গঠিত হয় কানাডা নামক রাষ্ট্রের
উদ্ভব হয়। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে জারিকৃত কানাডা চুক্তি অনুসারে, দশটি প্রদেশ এবং তিনটি
অঞ্চল নিয়ে গঠিত কানাডা সংসদীয় গণতন্ত্র এবং আইনগত রাজ্যতন্ত্রের সূচনা হয়। এই
সময় 'কানাডা' নামটি সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়। এই সূত্রে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি
ছুটি 'ডোমিনিয়ান ডে' কে পরিবর্তন করে 'কানাডা ডে' করা হয়। কানাডার বর্তমান
সংবিধান ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দেই রচিত হয়।
কানাডার রাষ্ট্র পরিচালন পদ্ধতিতে সংসদীয় গণতন্ত্রভিত্তিক সরকারব্যবস্থা এবং
একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র লক্ষ্য করা যায়। প্রাশাসনিক দিক থেকে রাষ্ট্র কেন্দ্রীয়
সরকার এবং প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সরকার ব্যবস্থায় বিভক্ত।