চীন
সাধারণ পরিচিতিমূলক নাম চীন (China)।
দাপ্তরিক নাম :
চীন গণপ্রজাতন্ত্র (People's Republic of China)
সরকার পদ্ধতি : সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
রাজধানী : বেইজিং, চীনা ভাষা পেইজিং, পূর্ব নাম পিকিং।


জনসংখ্যা ও জন্ম-মৃত্যু হার (জুলাই ২০১২) :

মোট জনসংখ্যা : ১,৩৪৩,২৩৯,৯২৩ জন
জন্মহার
: প্রতি ১০০০ জনে ১২
.৩১ জন
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার
: প্রতি ১০০০ জনে ৪.৮১জন
মৃত্যুহার : প্রতি ১০০০ জনে ৭.১৭জন

সর্বোচ্চ আদালত: সুপ্রিম পিউপিলস কোর্ট
মুদ্রা : ইউয়ান (yuan)
টেকিফোন সঙ্কেত :
+৮৬।
 

বিষয় সূচি

আয়তন
জাতীয় বিষয়াবলি
প্রশাসনিক ব্যবস্থা
পর্বতমালা
নদ-নদী

চীনের ইতিহাস
চীনের কৃষি ও পশু সম্পদ
 চীনের দর্শনীয় বিষয়াবলি
চীনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ

আয়তন
আয়তনের দিক থেকে চীন এশিয়ার বৃহত্তম দেশ এবং রাশিয়া আর কানাডার পর চীন বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। চীনের স্থলভাগের আয়তন প্রায় ৯৬লক্ষ বর্গ কিলোমিটার ।

এশিয়া মহদেশের পূর্ব অঞ্চলে এবং প্রশান্ত মহা সাগরের পশ্চিমতীরে অব্স্থিত। এর উত্তর দিকে মোহো অঞ্চলের উত্তরের হেইলুংচিয়াং নদীর কেন্দ্রস্থল অর্থাৎ উত্তর দ্রাঘিমা রেখার ৫৩.৩০ ডিগ্রি থেকে দক্ষিণ দিকের নানসা দ্বীপপুঞ্জের চেনমু-আনসা অর্থাৎ উত্তর দ্রাঘিমা রেখার ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত। দক্ষিণ আর উত্তর চীনের সীমান্তের মধ্যবর্তী দূরত্ব প্রায় ৫৫০০কিলোমিটার । আর পূর্ব দিক থেকে হেইলুংচিয়াং নদী আর উসুলিচিয়াং নদীর সঙ্গমস্থল অর্থাৎ পূর্ব অক্ষাংশ ১৩৫.০৫ ডিগ্রি থেকে পশ্চিম দিকের পামির মালভূমি অর্থাৎ পূর্ব অক্ষাংশ ৭৩.৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত। পূর্ব আর পশ্চিমের মধ্যকার দূরত্ব প্রায় ৫০০০ কিলোমিটার ।

চীনের স্থল সীমার দৈর্ঘ্য প্রায় ২২৮০০ কিলোমিটার, এর পূর্ব দিকে উত্তর কোরিয়া, উত্তর দিকে মঙ্গোলিয়া, উত্তর -পূর্ব দিকে রাশিয়া, উত্তর- পশ্চিম দিকে কাজাকিস্তা, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, পশ্চিম আর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভূটান, দক্ষিণ দিকে মায়ানমার, লাওস ও ভিয়েতনাম এবং পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে দক্ষিণ কোরিয়া , জাপান, ফিলিপাইন, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সমুদ্র সীমারেখা রয়েছে।

চীনের মূলভূভাগের তটরেখা উত্তর দিকের ইয়ালুচিয়াং নদীর মোহনা থেকে দক্ষিণ দিকের কুয়াংসি স্বায়তশাসিত অঞ্চলের পেইলুন হো নদীর মোহনা পর্যন্ত। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার। চীনের জলসীমাতে রয়েছে পোহাই সাগর, হুয়াংহাই সাগর, পূর্বসাগর, নানহাই সাগর। আর তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। এগুলোর মধ্যে পোহাই সাগর চীনের অভ্যন্তরীণ সাগর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাইওয়ানের পূর্বদিকের প্রশান্ত মহা সাগরীয় অঞ্চল পূর্বদিকে জাপানের রিইউকিয়ু দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিমের সাখি সীমাদ্বীপপুঞ্জ থেকে দক্ষিণ দিকের বাস প্রণালী পর্যন্ত বিস্তৃত।

চীনের অভ্যন্তরীণ নদী আর সামুদ্রিক জলসীমা নিয়ে গঠিত চীনের সামুদ্রিক অঞ্চলের মোট আয়তন ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। চীনের অভ্যন্তরীণ নদীর অর্থ হল চীন গণ প্রজাতন্ত্রের স্বীকৃত সামুদ্রিক সীমানা থেকে স্থল ও তটরেখা পর্যন্ত সামুদ্রিক অঞ্চল। চীনের সামুদ্রিক অঞ্চলে ৫০০০-এর বেশি দ্বীপ রয়েছে। এর মোট আয়তন প্রায় ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার। দ্বীপগুলোর তটরেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার । দ্বীপগুলোর মধ্যে বৃহত্তম তাইওয়ান দ্বীপের আয়তন ৩৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। এটি বর্তমানে একটি পৃথক রাষ্ট্র। দ্বিতীয় বৃহৎ দ্বীপের নাম হাইনান। এর আয়তন ৩৪ বর্গকিলোমিটার। তাইওয়ান দ্বীপের উত্তর-পূর্বসমুদ্রে অবস্থিত তিয়াও ইয়ু তাও দ্বীপ ও ছিওয়েই ইয়ু দ্বীপ চীনের সবচেয়ে পূর্বাঞ্চলের দ্বীপ। দক্ষিণ সমুদ্রে রয়েছে প্রবাল-প্রাচীর ঘেরা নানহাই দ্বীপপুঞ্জ্ বলা হয়। অব্স্থান অনুযায়ী এগুলোকে তুঙসা দ্বীপপুঞ্জ,সিসা দ্বীপপুঞ্জ,চুংসা দ্বীপপুঞ্জ আর নানসা দ্বীপপুঞ্জ ডাকা হয়। এছাড়া রয়েছে বিখ্যাত দ্বীপ হংকং।

চীনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা
বর্তমানে চীনে ৪টি কেন্দ্র শাসিত মহানগর ২৩টি প্রদেশ,পাঁচটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল আর ২টি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল সহ মোট ৩৪টি প্রদেশে বিভাজিত। এর কেন্দ্রীয় বা জাতীয় প্রশাসনিক নগর হলো- রাজধানী বেইজিং।

প্রদেশ এবং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলগুলো কয়েকটি জেলাতে বিভক্ত। এই জেলাগুলো মহকুমা এবং ক্ষুদ্র নগরকেন্দ্রিক প্রশাসনিক আঙ্গিকে সাজানো। তবে এই সকল প্রশাসিনক এলাকাগুলো সমাজতান্ত্রিক বিধিতে স্বাশাসিত একক সৃষ্টি করেছে।


চীনের কৃষি ও পশু সম্পদ

কৃষিভূমি ও কৃষি সম্পদ : বর্তমানে চীনের প্রায় ১২ লক্ষ ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার কৃষি জমি আছে। এর ভিতরে  ৪৩.২ ভাগ কৃষি জমি চীনের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। সেই তুলনায় পূর্ব আর পশ্চিম অঞ্চলে কৃষি-জমির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম (২৮.৪ ভাগ)। চীনের কৃষি জমিগুলো চীনের উত্তর-পূর্ব সমতল-ভূমি , উত্তর-চীন সমতলভূমি, ছাংচিয়াং নদীর মধ্য আর নিম্ন অববাহিকার সমতলভূমি, চুচিয়াং নদী ব-দ্বীপ আর সিছুয়ান বেসিন অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত। উত্তর-পূর্ব সমতলভূমির মাটির বেশির ভাগহলো কালো রঙয়ের উর্বর জমি। এই জমিতে গম, ভূট্টা, কাওলিয়াং, সয়াবিন, পাট ও বীট উৎপন্ন হয়। উত্তর-চীনের সমতলভূমির বেশিভাগ হলো বাদামী রঙয়ের জমি। এই জমিতে গম, ভূট্টা, জোয়ার, কাওলিয়াং, তুলা ও চীনাবাদাম উৎপন্ন হয়। ছাংচিয়াং নদীর মধ্য আর নিম্ন অববাহিকার সমতলভূমিতে ধান, কমলা আর সরিষা প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। সিছুয়ান বেসিন অঞ্চলে ধান, সরিষা, আখ, চা, কমলা প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।

চীনের বন সম্পদ : বর্তমান চীনের বনাঞ্চলের আয়তন প্রায় ১৫ কোটি ৮৯ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর। চীনের মোট আয়তনে বনের অনুপাত মাত্র ১৬.৫৮ শতাংশ। এই বিচারে চীনের বনভূমি যথেষ্ঠ নয়। চীনের বেশির ভাগ প্রাকৃতিক বনাঞ্চল উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ছড়িয়ে আছে । পক্ষান্তরে লোকসংখ্যা বহুল আর শিল্পোন্নত পূর্বাঞ্চলের সমতলভূমি এবং প্রশস্ত উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে বনাঞ্চল সামান্য।

চীনের বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে এমন প্রায় ২৮০০ ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে। এর ভিতর গিংকোমেটাসিফিয়া নামক কিছু মূল্যবান গাছ জন্মে। পরিবেশ রক্ষা করা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমের আওতায় চীনে কৃত্রিমভাবে বনায়ন কার্যক্রম চলানো হচ্ছে। বর্তমানে চীনে কৃত্রিম বনাঞ্চলের আয়তন ৩ কোটি ৩৭ লক্ষ ৯০ হাজার হেক্টর । 

চীনের প্রধান প্রধান বনাঞ্চলের মধ্যে আছে বড় সিং আনলিন পর্বত, ছোটো সিং আন লিন পর্বত ও ছাং পাইশ্যান পর্বতের বনাঞ্চল সহ উত্তর-পূর্ব বনাঞ্চল চীনের বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। হেংতুয়ানশ্যান পর্বত, হিমালয় পর্বত,ইয়ালুচাংবু চিয়াং নদীর মোড় এলাকা প্রভৃতি অঞ্চলের বনাঞ্চল সহ দক্ষিণ-পশ্চিম বনাঞ্চল চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। ছিনলিন পর্বত-হুয়াই নদীর দক্ষিণ দিকে আর ইয়ুন্নান-কুইচৌ মালভূমির পূর্বাঞ্চলের ব্যাপক ক্ষুদ্র পাহাড়ী এলাকা সহ দক্ষিণ-পূর্ব বনাঞ্চল চীনের প্রধান কৃত্রিম বনাঞ্চল। উত্তর-পূর্ব চীন, উত্তর চীন আর উত্তর-পশ্চিম চীন আবৃত বন সুরক্ষা ব্যবস্থায় প্রায় ৭০০০কিলোমিটার গাছ লাগানো হয়েছে। এর আয়তন প্রায় ২৬ কোটি হেক্টর। চীনের স্থলভাগের আয়তনের চার ভাগের এক ভাগ অধিকার করে আছে বলে একে বিশ্বের বৃহত্তম পরিবেশ প্রকল্প হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

তৃণাঞ্চল ও তৃণভূমি : চীনের মোট আয়তনের চার ভাগের প্রায় এক ভাগ হলো চারণ-ভূমি। এর পরিমাণ প্রায় ২৬ কোটি ৬০ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর। এই তৃণভূমিগুলো  বিভিন্ন মৌসুমে গৃহ পালিত পশু চারণভূমি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।  তৃণভূমির আয়তনের দিক থেকে চীন বিশ্বের বৃহত্তম দেশগুলোর মধ্যে একটি । চীনের প্রাকৃতিক চারণ-ভূমি প্রধানতঃ বড় সিংআনলিন পর্বত-ইনশ্যান পাহাড়-ছিংহাই তিব্বত মালভূমি লাইনের পশ্চিম ও উত্তর দিকের ব্যাপক অঞ্চলে বিন্যস্ত,কৃত্রিম চারণ ভূমি প্রধানতঃ দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ছড়িয়ে কৃষি-জমি আর বনাঞ্চলের সঙ্গে পরস্পরের সংযোগ তৈরি করে নিয়েছে ।

চীনের চীনের বৃহত্তম চারণ-ভূমি হলো আন্তঃমঙ্গোলিয়া চারণ-ভূমি। এখানে সানহ্য নামের ঘোড়া আর স্যানহ্য নামের গরু প্রভৃতি উন্নতমানের পশু পালন করা হয়। সিনচিয়াং চারণ-ভূমিতে উন্নতমানের সিনচিয়াং উত্তম-উল ভেড়া, আলথাইর বড় লেজ-মেষ আর ইলি-ঘোড়া পাওয়া যায়। ছিংহাই চারণ-ভূমির প্রধান প্রধান উন্নতমানের পশু হলো চমরী-গাই, তাছাড়া এখানে দেশেবিদেশে বিখ্যাত হ্যছু নামক ঘোড়াও পালিত হয়। তিব্বত চারণ-ভূমি চমরী-গাইয়ের প্রধান উৎস ।