মগধ
প্রাচীন ভারতের  ষোলটি মহাজনপদের একটি। বর্তমান ভারতের পাটনা এবং গয়া জেলা নিয়ে মগধ সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। অথর্ব বেদে এই জনপদের নাম পাওয়া যায়। হিন্দু পুরাণ ও সিংহলের বৌদ্ধগ্রন্থাবলিতে মগধের নাম পাওয়া যায়। মহাভারতের মতে ভরত বংশীয় বৃহদ্রথ মগধের রাজা ছিলেন। বৃহদ্রথের পুত্র জরাসন্ধ পিতার কাছ থেকে রাজ্য লাভ করেন। কিন্তু ভীম তাঁকে হত্যা করেছিলেন। এই অঞ্চলে কীকট্ নামক একটি অনার্য জাতি বাস করতো।  কালক্রমে আর্যরা এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করা শুরু করে। এই সময় ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের সমন্বয়ে একটি মিশ্র জাতির উদ্ভব হয়। আর্যরা এদেরকে ব্রাত্য নামে অভিহিত করে। এই রাজ্য হর্যঙ্ক, শৈশুনাগবংশ, নন্দবংশ এবং মৌর্যবংশ শাসন করেছিল।

মগধের রাজবংশ

শৈশুনাগ বংশ
 

খ্রিষ্ট-পূর্ব সপ্তম শতকে ষোড়শ মহাজনপদগুলোর ভিতরে অন্তর্দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এই অন্তর্দ্বন্দ্বের ভিতর সৃষ্টি হয় চারটি মহাজনপদ শক্তিশালী হয়ে উঠে। এই চারটি জনপদ হলো কোশল, অবন্তী, বৎস এবং মগধ। পরে এই রাজটি রাজ্যের ভিতর সার্বভৌম রাজত্ব লাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত মগধ এই প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে সার্বভৌম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে। বৌদ্ধমহাবংশ থেকে জানা যায়, মগধের একজন দুর্বল রাজা ছিলেন ভট্টিয় বা মহাপদ্ম। অঙ্গরাজ তাঁকে পরাজিত করে, মগধকে অঙ্গের করদ রাজ্যে পরিণত করেন। এই মহাপদ্মের পর মাত্র পনের বৎসর বয়সে  বিম্বিসার মগধের রাজা হন। সিংহলী প্রাচীন গ্রন্থমতে  বিম্বিসার রাজা হয়েছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫৪ অব্দে তিনি তাঁর পিতার পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শুরুতে তাঁর সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করেন। সেই সময়ের অঙ্গরাজ্যের রাজা উদয়নকে পরাজিত করে বিম্বিসার অঙ্গরাজ্য জয় করেন। এই সময় মগধের রাজধানী ছিল রাজগৃহ।

সিংহলী প্রাচীন গ্রন্থানুসারে জানা যায় বিম্বিসারের রাজত্বের সূচনা হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪৫ অব্দে। এই বিচারে বলা হয়, তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪০ (মতান্তরে ৫৫৮) অব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর তাঁর মৃত্যু হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৪৯০-৪৯৩ অব্দের দিকে। কথিত আছে বিম্বিসারের পুত্র অজাতশত্রু রাজ্যলোভে পিতা বিম্বিসারকে উপবাস করিয়ে হত্যা করেন।  অজাতশত্রু কোশলরাজ প্রসেনজিৎকে পরাজিত করেন। সন্ধির শর্তানুসারে তিনি প্রসেনজিতের কন্যাকে বিবাহ করেন এবং যৌতুক হিসেবে কাশী অঞ্চলের অধিকার করেন। এরপর তিনি প্রায় ১৬ বৎসর যুদ্ধ করে বৈশালী রাজ্য জয় করেন।

খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬০ অব্দের দিকে মৃত্যবরণ করেন। এরপর তাঁর পুত্র দারসেকো এবং তাঁর পুত্র উদয়িন রাজত্ব করেন। উদয়িনের পরবর্তী তিনটি রাজাই পিতাকে হত্যা করে সিংহাসন অধিকার করেন। এই সব রাজাদের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। তবে এই বংশের শেষ রাজা নাগদাসকে হত্যা করে তাঁর মন্ত্রী শৈশনাগ। এই শৈশনাগের সূত্রের মগধের সিংহাসনে শৈশুনাগ বংশের রাজত্ব শুরু হয়। সম্ভবত এই বংশের রাজত্ব শুরু হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০ অব্দ থেকে। এই সময় মগধের সীমানা ছিল একালের ভারতের প্রদেশের তূল্য।


সূত্র :
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।