বাংলা শব্দ
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দকে সাধারণভাবে বাংলা শব্দ বলা যায়। অন্যান্য ভাষার মতওই বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সমুদয় শব্দকে উৎসের বিচারে ভাগ করতে গেলে
দেখা যায়, সকল শব্দ একই ভাবে বা একই আদর্শে বাংলা শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে নি।
বাংলা ভাষার আদি স্তরে শব্দ গৃহীত হয়েছিল ভারতবর্ষে বসবাসকারী বিভিন্ন অনার্য
নৃগোষ্ঠীর শব্দ, আর্য (বৈদিক ও সংস্কৃত) ভাষার শব্দ এবং আর্য শব্দের বিকৃত শব্দরূপ।
এই বিচারে আদি বাংলা শব্দকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। এই ভাগ চারটি হলো-
- তৎসম শব্দ: যা তৎ বা আর্য ভাষার
শব্দের সম (অনুরূপ) তাই তৎসম শব্দ। সাধারণভাবে বলা হয় যে সকল শব্দ আর্য ভাষা
থেকে সরাসরি বাংলাতে প্রবেশ করেছে। চন্দ্র, সূর্য সমুদ্র ইত্যাদি। কিছু আর্য
শব্দ বাংলাতে ব্যবহারের সময়, লেখ্যরূপের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে, তারপরেও
এগুলোকে তৎসমই বলা হয়ে থাকে। যেমন- আর্য ভাষার 'ধর্ম্ম' শব্দটি, বাংলা বানান
সংস্কাররীতিতে হয়ে গেছে 'ধর্ম'।
- অর্ধ তৎসম শব্দ: লোকমুখে কিছু
আর্য শব্দ সামান্য পরিবর্ত হয়ে সরাসরি বাংলা শব্দভাণ্ডারে যুক্ত হয়েছে। আধা
আর্য অর্থে এগুলোকে অর্থ তৎসম বলা হয়ে থাকে। যেমন আর্য শব্দ 'কৃষ্ণ' বাংলাতে
আধা-বিকৃত হয়ে 'কেষ্ট' হয়েছে।
- তদ্ভব শব্দ: ভারতবর্ষের
ভাষা-বিবর্তনের ধারায়, ভারতবর্ষের স্থানীয় ভাষার সৃষ্টি হয়েছিল। সাধারণভাবে এই
শব্দগুলোকে প্রাকৃত ভাষা বলা হয়। এই সময় বহু আর্য শব্দ কিছুটি পরিবর্তিত হয়ে
প্রাকৃত ভাষায় প্রবেশ করেছিল। আনুমানিক ৫০০- ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে যখন বাংলা
ভাষার আদি রূপ গড়ে উঠছিল, সেই সময় এই বিকৃত আর্যশব্দসমূহ আরও কিছুটা পরিবর্তিত
হয়ে বাংলা ভাষার অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এই শব্দগুলোকে তদ্ভব বলা হয়। তৎসম শব্দের
তৎ-এর অর্থ যদি আর্য (বৈদিক ও সংস্কৃত) ধরা যায়, তাহলে তৎদ্ভব শব্দের তৎ হবে
'বৈদিক থেকে প্রাকৃত'। এই জাতীয় অনেক শব্দ বাংলাতে বর্তমানে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
আর্য চন্দ্র>প্রাকৃত চন্দ>বাংলা চাঁদ।
- দেশী শব্দ: তৎসম, অর্ধ-তৎসম,
তদ্ভব ও নব্যসৃষ্ট শব্দসমূহ বাদ দিলে, যে সকল শব্দ পাওয়া সেগুলোকে দেশী শব্দ
বলা হয়।
[দেখুন: দেশী শব্দ]
- বিদেশী শব্দ: আর্য, বিকৃত আর্য
এবং দেশী শব্দ ছাড়া অন্য সকল শব্দকে বিদেশী শব্দ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
বাংলাতে নানাভাবে বিদেশী শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। শব্দের মূল রূপ ও বিকৃত রূপ
অনুসারে বিদেশী শব্দগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
- কৃতঋণ তৎসমশব্দ: যে সকল শব্দ
সরাসরি ভার্তবর্ষের বাইরের কোন ভাষা থেকে গৃহীত হয়েছে। যেমন- হার্ডডিস্ক,
মনিটর ইত্যাদি।
- কৃতঋণ অর্ধতৎসম: যে সকল বিদেশী
শব্দ উচ্চারণে বিচারে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলাতে প্রবেশ করেছে। যেমন-
ইংরেজি Table হয়েছে টেবিল।
- কৃতঋণ তদ্ভব: নানা
ভাষা ঘুরে বাংলাতে যে সকল বিদেশী শব্দ বাংলা শব্দভাণ্ডারে যুক্ত হয়েছে।
যেমন- গ্রিক দ্রাখমে (মুদ্রা)>সংস্কৃত দ্রম্য>প্রাকৃত দম্ম>বাংলা দাম।
- মিশ্র শব্দ: একাধিক
ভাষার শব্দ যুক্ত হয়ে যে সকল শব্দ তৈরি হয়েছে। যেমন- ইংরেজি হেড+সংস্কৃত
পণ্ডিত= মিশ্র হেডপণ্ডিত।
- মুণ্ডমাল: কিছু
কিছু শব্দের প্রথম ধ্বনি নিয়ে যে সকল অব্দ তৈরি হয়ে থাকে। যেমন- জাতীয়
সমাজতান্ত্রিক দল=জাসদ।
্য
প্রত্যয়িত বিশেষণ
প্রত্যয়ী বিশেষণ