ৎপুরুষ সমাস

বাংলা ও সংস্কৃত ব্যাকরণে বর্ণিত সমাস বিশেষ। পাণিনি ব্যাকরণ থেকে এই সূত্র বাংলাতে গৃহীত হয়েছে। বিদ্যাসাগর রচিত ব্যাকরণ কৌমুদীতে এর ইংরেজি সমার্থক শব্দ হিসাবে বলা হয়েছে- Determinative Compound। সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকে বাংলা ব্যাকরণের তৎপুরুষ সমাসে পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে বিভক্তি চিহ্নের বিচারে সংস্কৃত ও বাংলা তৎপুরুষ একই আঙ্গিকে পাওয়া যায় না। আধুনিক বাংলায় এর সরলতম সংজ্ঞা হলো যে সমাসে উত্তর পদের অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়, এবং ব্যাসবাক্যের পূর্বপদের সাথে যুক্ত দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত বিভক্তি বা বিভক্তি নির্দেশক অনুসর্গ লুপ্ত হয়।
 

বিভক্তির প্রকৃতি এবং ভাবগত অর্থের বিচারে এই সমাসকে ১০টি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-

 

.

 দ্বিতীয় তৎপুরুষ সমাস

 

পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি ( কে, রে) লোপ পায় বা ব্যাপিয়া অর্থ প্রকাশ করে এমন সমাসকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলা হয়
ক. বিভক্তর বিলুপ্ত হওয়ার কারণে : সাহায্যকে প্রাপ্ত= সাহায্যপ্রাপ্ত
খ. ব্যাপিয়া বা বিরাজমান অর্থে : 
      
চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী=চিরসুখী;
       যথা দ্রুত তথা গামী= দ্রুগামী।

   

তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস

 

পূর্ব-পদের তৃতীয়া বিভক্তি স্থানীয় অনুসর্গ  (দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক) লোপ হয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
        
মন দ্বারা গড়া=মনগড়া;
         জল দ্বারা পূর্ণ=জলপূর্ণ।

   

চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস

 

যে সমাসের পুর্বপদের চতুর্থী বিভক্তির(কে, রে) লোপ হয় এবং নিমিত্তার্থ ভাব প্রকাশ করে তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
       
পাঠের জন্য শালা=পাঠশালা;
         সর্বের জন্য হিত=সর্বহিত।

   

পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস

 

পূর্বপদের পঞ্চমী বিভক্তি স্থানীয় অনুসর্গ (হতে, থেকে, চেয়ে) লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
       
স্নাতক থেকে উত্তর=স্নাতকোত্তর;
        সর্ব হতে শ্রেষ্ঠ= সর্বশ্রেষ্ঠ ।

   

ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস

 

পূর্বপদের ষষ্ঠী বিভক্তির ( র, এর) লোপ পেয়ে যে সমাস হয় তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন-
          নরের পতি= নরপতি;
          সংখ্যার অতীত= সংখ্যাতীত।

   

সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস

 

পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে) লোপ পেয়ে যে সমাস হয়, তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
         পূর্বে অদৃষ্ট= অদৃষ্টপূর্ব;
         বিশ্ব বিখ্যাত=বিশ্ববিখ্যাত।

   

অলুক তৎপুরুষ সমাস

 

পূর্বপদের বিভক্তি লোপ না পেয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
       চোখের বালি= চোখের বালি
       হাতে কাটা=হাতে কাটা ।

   

.

নঞ তৎপুরুষ সমাস

 

যে তৎপুরুষ সমাস পূর্বপদে নঞ (নয়, নাই, না) এই নিষেধার্থক ব্যয় থাকে তাকে, নঞ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
  অঋণ=
অ (ন) ঋণ/নঞ্ তৎপুরুষ সমাস
        নয় অতি দীর্ঘ=নাতিদীর্ঘ ।

   

.

উপপদ তৎপুরুষ সমাস

 

উপপদের সাথে কৃদন্ত পদের যে সমাস হয় তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন-
       
জলে চরে যে= জলচর;
        বর্ণ চুরি করে যে=বর্ণচোরা ।

   

১০.

 প্রাদি সমাস

 

তৎপুরুষ সমাসে যদি প্র, প্রতি, উৎ প্রভৃতি উপসর্গ বিশেষ অর্থে পূর্ব পদ হয়ে বসে তবে তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমন-
         প্র (প্রকৃষ্টৃরূপে ভাত) ভাত= প্রভাত

   
.

 সুপসুপা সমাস

  বিভক্তিযুক্ত পদের সাথে অন্য বিভক্তিযুক্ত পদের সমন্বয়ে সৃষ্ট সমাসকে সুপসুপা সমাস বলে। এই সমাসে ব্যাসবাক্যে ব্যবহৃত শব্দ সমস্তপদে ভিন্নরূপ লাভ করে। যেমন-
         পূর্বে ভূত ভাত= ূতপূর্ব

তৎসম
তৎসম একটি প্রতীকী শব্দ। কারণ এই নামের সাথে সংস্কৃত শব্দের কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু পরিভাষা হিসাবে তৎসম শব্দের মূল্য আছে। এখানে তৎ হলো তার, এই তৎদ্বারা সংস্কৃত ভাষাকে নির্দেশিত করা হয়ে থাকে। তৎ (সংস্কৃত) এর সম (সমান)
এই অর্থে, তৎসম শব্দের অর্থ দাঁড়ায় সংস্কৃতের সমান। যে সকল শব্দ সংস্কৃত থেকে সরাসরি বাংলাতে প্রবেশ করেছে, তাদেরকে তৎসম শব্দ বলা হয়। যেমন  চন্দ্র, সূর্য, সমুদ্র, পৃথিবী ইত্যাদি। উচ্চারণ, শব্দ নির্বাচন ও বাক্য রীতির বিচারে সংস্কৃত ও বাংলার মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকলেও, সংস্কৃত শব্দ বাংলার সাথে স্বচ্ছন্দে খাপ খেয়ে যায়। তাই এখনো বিদেশী শব্দকে বাংলা মোড়কে আনতে গেলে প্রথমে সংস্কৃত শব্দ ভাণ্ডারের দিকেই হাত বাড়াতে হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে- আমরা শব্দ-সংগ্রহে বিমুখ হই না।