আর্ট থিয়েটার
১৯২৩-১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, হাতিবাগানের স্টার থিয়েটারের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যায়। বিশেষ করে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দর ২রা মার্চ আদলতের আপত্তিতে স্টার থিয়েটারেএ 'কিন্নরী'র অভিনয় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এই অপরেশ মুখোপাধ্যায় প্রবোধচন্দ্র গুহের সহায়তায় স্টার থিয়েটারের মঞ্চ ভাড়া নিয়ে মঞ্চাভিনয় চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই সময় তাঁদের সাথে যুক্ত হন তারাসুন্দরী। কিছুদিন পর, অপরেশ মুখোপাধ্যায় এবং প্রবোধচন্দ্র গুহ 'আর্ট থিয়েটার লিমিটেড নামে একটি যৌথ প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। এই কোম্পানি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছিলেন তৎকালীন বেঙ্গল ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের পরিচালক ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে এঁদের সাথে যুক্ত হন সতীশচন্দ্র সেন, কুমারকৃষ্ণ মিত্র, হরিদাস চট্টোপাধ্যায়, নির্মলচন্দ্র চন্দ। এই যৌথ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হন অপরেশ মুখোপাধ্যায় এবং সেক্রেটারি হন প্রবোধচন্দ্র গুহ। এই প্রতিষ্ঠানের আংশিক মালিক হিসেবে থাকেন তারাসুন্দরী।

এই আর্ট থিয়েটার প্রায় টানা দশ বছরে অপরেশচন্দ্রের ২১টি, রবীন্দ্রনাথের ৯টি এবং অন্যান্য নাট্যকারদের ২২টি নাটক মঞ্চস্থ করেছিল। সব মিলিয়ে নাটকের সংখ্যা ছিল ৫২টি।

এই প্রতিষ্ঠানটি শুরুর দিকে কিছুদিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ে 'পল্লীসমাজ' উপন্যাসের নাট্যরূপ মঞ্চস্থ করে। এরপর ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুন (শনিবার, ১০ পৌষ ১৩৩৩), অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের রচিত 'কর্ণার্জুন' নাটক মঞ্চস্থ করে। মূলত এই নাটকের মধ্য দিয়েই 'আর্ট থিয়েটার' তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরে করে। এই নাটকের বিভিন্ন  অভিনয় করেছিলেন-
কর্ণ-তিনকড়ি চক্রবর্তী, অর্জন-অহীন্দ্র চৌধুরী, শকুনি-নরেশ মিত্র, পরশুরাম-অপরেশচন্দ্র, বিকর্ণ- দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, পদ্ম-কৃষ্ণভামিনী,  নিয়তি- নীহারবালা, দ্রৌপদী-নিভাননী। এছাড়া ইন্দু মুখোপাধ্যায়, তুলসী বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোরমা প্রভৃতিও অংশ গ্রহণ করেন। পরে গিরিশচন্দ্রের পুত্র দানীবাবু এই নাটকে যোগ দিয়ে নানা ভূমিকায় অভিনয় করেন।

এই নাটকটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। নাটকটি ২৬০ রাত্রি একাদিক্রমে অভিনীত হয়ে অন্যন্য রেকর্ড স্থাপন করেছিল। যুগান্তকারী ঘটনা। এরপর প্রায় দশবছর ধরে সগৌরবে আর্ট থিয়েটার অভিনয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছিল। নিচে আর্ট থিয়েটারের নাটকের কালানুক্রমিক সূচি তুলে ধরা হলো।


এই থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম সদস্য প্রবোধকুমার গুহ আগষ্ট মাসে আর্ট থিয়েটার ছেড়ে চলে  গিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে দানীবাবু তথা সুরেন্দ্রনাথ ঘোষের সহযোগিতায় আর্ট থিয়েটার সচল ছিল। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ নভেম্বর দানীবাবুর মৃত্যুর পর আর্ট থিয়েটার দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় দেনার দায়ে আর্ট থিয়েটার বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ মে অপরেশ মুখোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন। এরপর এই থিয়েটার চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।


সূত্র: