রবীন্দ্রসঙ্গীত
পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর অগ্রজদের সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রহ্মসঙ্গীত দিয়ে তাঁর গানের খাতা খোলেন। তাঁর রচিত প্রথম ব্রহ্মসঙ্গীতটি ছিল গান '
গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বলে'। মঙ্গলবার, ১১মাঘ ১২৮১ বঙ্গাব্দ [২৫ জানুয়ারি ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দ], আদি ব্রাহ্মসমাজের পঞ্চচত্বারিংশ (৪৫) সাংবৎসরিক মাঘোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসব রবীন্দ্রনাথকৃত এই গানটি সন্ধ্যাবেলার উপাসনায় পরিবেশিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ এই অনুবাদটি ঠিক কোন সময় করা হয়েছিল, তা জানা যায় না। কিন্তু অনুমান করা যায়- অনুবাদকৃত এই কবিতাটিতে সুরারোপ করা হয়েছিল পঞ্চচত্বারিংশ (৪৫) সাংবৎসরিক মাঘোৎসবের কিছু আগে। এই বিচারে বলা যায়- এই ভজনটি বাংলা গান হিসাবে তৈরি হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের ১৩ বৎসর বয়সে। এই গানটি অনুবাদকৃত একটি শিখভজন। এঁরপর ১২৯২ বঙ্গাব্দে (১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে) তাঁর রবিচ্ছায়া নামক গীতিগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে ৭৪টি ব্রহ্মসঙ্গীত গৃহীত হয়েছিল। প্রথমদিকের গ্রন্থগুলিতে রবীন্দ্রনাথের রচিত ব্রহ্মসঙ্গীতগুলো আলাদা শিরোনামে থাকতো।  এই গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে গানের বহি ও বাল্মীকি প্রতিভা  (১৮৯৩), কাব্যগ্রন্থাবলী (১৮৯৬), কাব্যগ্রন্থ (১৯০৩), রবীন্দ্রগ্রন্থাবলী (১৯০৪) গান (১৯০৮।

 

গান গ্রন্থের ১৯০৯ সংস্করণে ভাবের বিচারে গানগুলোকে সাজানোর প্রথম উদ্যোগ নেন। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে এই গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণে ব্রহ্মসঙ্গীত অংশের নতুন নাম দেওয়া হয়েছিল 'ধর্মসঙ্গীত'। পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথের সকল গান নিয়ে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে গীতবিতান -এর প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড এবং ১৩৩৯ বঙ্গাব্দে এর তৃতীয় খণ্ড প্রকাশিত হলো। তিনখণ্ডের এই গ্রন্থে 'ব্রহ্মসঙ্গীত' বা 'ধর্মসঙ্গীত' শিরোনামে কোনোটিই রইলো না। গীতবিতান-এর ১৩৪৮ সংস্করণে 'পূজা' পর্যায়ে অধিকাংশ ব্রহ্মসঙ্গীত গৃহীত হলেও, কিছু গান ভিন্ন শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ গীতবিতানের পূজা পর্যায়ের গানগুলোকে এক কাতারে রেখেছিলেন বটে, কিন্তু তিনি নিজেই এতে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। ফলে তিনি এই গানগুলোকে আরও কিছু উপভাগে বিভক্ত করেছিলেন। এই ভাগগুলো হলো- গান, বন্ধু, প্রার্থনা, বিরহ, সাধনা ও সংকলন, দুঃখ, আশ্বাস, অন্তর্মুখে, আত্মবোধন, জাগরণ, নিঃসংশয়, সাধক, উৎসব, আনন্দ, বিশ্ব, বিবিধ, সুন্দর, বাউল, শেষ, পরিণয় (আনুষ্ঠানিক)।

তিনি অদ্বৈতবাদ ব্রহ্মসঙ্গীতের জ্ঞানভিত্তিক প্রকাশকে ভক্তিবাদে পরিণত করেছিলেন। ঠাকুরবাড়ির সাথে সম্পৃক্ত বিষ্ণ চক্রবর্তী, যদুভট্ট, রামপতি বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজচন্দ্র রায়, রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামীদের কলাবিদদের হাতে ব্রহ্মসঙ্গীত পৃথকধারায় ধ্রুপদ সঙ্গীতে পরিণত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সমৃদ্ধ করেছিলেন গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণীজনেরা। এঁরা খেয়াল গান করলেই ব্রহ্মসঙ্গীতে সে ধ্রুপদের গম্ভীর চালটা বজায় রেখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মসঙ্গীতে ধ্রুপদের চলনে রাগাশ্রয়ী ব্রহ্মসঙ্গীতের পাশাপাশি লোকসঙ্গীতের সুরও এসেছে।


সূত্র :
চর্যাগীতি পদাবলী, সুকুমার সেন, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৯৫
চর্যাগীতি পরিক্রমা। দে'জ সংস্করণ। জানুয়ারি ২০০৫।
চর্যাগীতিকোষ। নীলরতন সেন সম্পাদিত। সাহিত্যলোক। কলকাতা। জানুয়ারি ২০০১।
বড়ুচণ্ডীদাসের কাব্য । মুহম্মদ আব্দুল হাই ও আনোয়ার পাশা সম্পাদিত। স্টুডেন্ট ওয়েজ। আশ্বিন ১৩৮৮ সন।
বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত
। ডঃ মুহম্মদ শহীদউল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স। জুলাই ১৯৯৮
বাংলা সাহিত্যের কথা
। ডঃ মুহম্মদ শহীদউল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স।
ভারতীয় সঙ্গীতকোষ। শ্রীবিমলাকান্ত রায়চৌধুরী। কথাশিল্পী প্রকাশ। বৈশাখ ১৩৭২
রবীন্দ্রনাথের কীর্তনাঙ্গের গান
। স্মৃতি চট্টোপাধ্যায়। জুলাই ২০০৯।
সাধারণ ভাষা বিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা
। ডঃ রামেশ্বর শ।
হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা বৌদ্ধ গান ও দোঁহা, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, ১৩২৩ 
http://en.wikipedia.org/wiki/Indo-Aryan_languages
http://en.wikipedia.org/wiki/Magadhi_Prakrit