বারশিয়া
বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁও, বগুড়া, পাবনার মধ্যবর্তী অঞ্চলে প্রচলিত লোক গান। বারশিয়া  নামের উৎস এবং এই গানের ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না।
মূলত উল্লেখিত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের আনন্দ-বেদনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির অনুভূতি আঞ্চলিক সুরে নিবদ্ধ হয়েছে।

বারশিয়া গানের শব্দরূপ

বারশিয়াকে সাধারণত রাজাশাহীর লোক গান হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বারশিয়া গানের শব্দসমূহকে আঞ্চলিকতার বিচারে পর্যবেক্ষণ করলে, রাজশাহীর আঞ্চলিক ধ্বনি এই গানে তেমন পাওয়া যায় না। যেমন রাজশাহীর গম্ভীরা গানে রাজশাহীর ধ্বনিরূপ স্পষ্ট ধরা পরে, কিম্বা ভাওয়াইয়া গানে রংপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ধ্বনিরূপ পাওয়া যায়, কিন্তু এই গানে তেমনটা পাওয়া যায় না। বরং বেশি পাওয়া যায় রাজশাহীর আশপাশের এলাকার আঞ্চলিক শব্দ ও ধ্বনিরূপ পাওয়া যায়। মূলত রাজশাহী সংলগ্ন পাবনা জেলার ঈশ্বরদী, নাটোর, বগুড়া এবং নওগাঁ অঞ্চলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে যে মিশ্র ভাষারীতি রয়েছে, এই গানের শব্দরূপে তারই আভাষ পাওয়া যায়। তবে এই অঞ্চলের কিছু আঞ্চলিক শব্দ ছাড়া এই গানের অধিকাংশ শব্দ এবং এর ধ্বনিরূপ প্রমিত বাংলার মতই।

বারশিয়া গানের সুরাঙ্গ:
পাবনা, নাটোর, বগুড়া অঞ্চলের লোকগানে ভাটিয়ালি সুরের প্রভাব রয়েছে। পাবনার পদ্মসংলগ্ন অঞ্চলে বাউল সুরের প্রভাব থাকলেও, এই জেলার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ভাটিয়ালি গানের প্রভাব রয়েছে। এই প্রভাব পড়েছে বারশিয়া গানেও। যদিও কোনো কোনো গানে ভাওয়াইয়া গানের সুরভঙ্গ সামান্য নমুনা পাওয়া যায়। তবে এই সুরভঙ্গের কারণে বারশিয়া ভাওয়াইয়া গানের মতো হয়ে উঠে নি। আবার পূর্ববাংলার ভাটিয়ালি গানের মতো সরল ও উদাত্ত রূপও এই গানের সুরে সুষ্পষ্টভাবে ধরা পরে না। কিন্তু সুরের চলনের মধ্যে ভাটিয়ালির সুররূপ উঁকি মারে। অনেকটা পূর্ব বাংলার বয়াতিদের গানের মতো, যা পরিপূর্ণভাবে ভাটিয়ালি সুর হয়ে উঠতে উঠতে হয়ে উঠতে পারে নি। সব মিলিয়ে বারশিয়া ভাটিয়ালির সহোদরা না হয়ে, জ্ঞাতিগোষ্ঠীর মতো হয়ে রয়েছে।

বারশিয়া গানের বিষয়াঙ্গ
এই গানে পাওয়া যায় গ্রামীণ জীবনের আনন্দ-বেদনার চিত্র। বিশেষ করে মানবিক প্রেমের মিলন, বিরহ, অভিমান ইত্যাদি পাওয়া যায় এই গানে। মেয়ে মহলে এই গান দলগতভাবে গাওয়া হয় মেয়েলি গীত হিসেবে। এর বাইরে পুরুষরা বাড়ির আঙিনার বাইরে পরিবেশন করে থাকেন  আসরে। আসরে গান একক পরিবেশনার পাশাপাশি, কবি গানের মত করে পরিবেশনের রীতি প্রচলিত আছে। তবে মেয়ে মহল ছাড়া দলগতভাবে এই গান গাওয়া হয় না।

বারশিয়ার বাদ্যযন্ত্র
এই গানে উত্তরবঙ্গের লোকজ বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এর ভিতরে রয়েছে দোতারা, বাঁশি, ঢোল, সারিন্দা। একালের বারশিয়া গানে লোকজ বাদ্যযন্ত্রের এই গানে বাইরে ব্যবহৃত হয় হারমোনিয়াম, তবলা, বেহালা।