বৌদ্ধ সঙ্গীত
গৌতম বুদ্ধের প্রবর্তিত বৌদ্ধধর্মের সাথে সম্পর্কিত সঙ্গীত।

গৌতম বুদ্ধের ধর্মীয় দর্শনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা ধর্মীয় মতবাদ, সনাতন ধর্মেকে ভিন্নতর দর্শনের সন্ধান দিয়েছিল। সেই সূত্রে ভারতীয় সঙ্গীতের ভাবগত বিষয়ের নতুনত্বের সৃষ্টি হয়েছিল। বুদ্ধের মৃত্যর পর, তাঁর পূর্বজন্মের কাহিনি অবলম্বনে রচিত গ্রন্থ জাতক লিখিত হয়েছিল আনুমানিক ৩৭০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে। প্রায় ৫০০টি জাতকের মধ্যে ১৫টি জাতকে গান সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। এই জাতকগুলো হলো- নৃত্য, ভেরীবাদক, বিশ্বম্ভর, কুশ, অসদৃশ্য, সর্বদ্রষ্ট, গুপ্তিল, ভদ্রঘট, বীণাস্থূণা, চুল্লু-প্রলোভন, ক্ষান্তিবাদি, কাকবতী, শঙ্খ, মৎস, বিদুরপণ্ডিত। এসকল জাতকে সঙ্গীতে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় না। গুপ্তিল জাতকে উত্তম ও মধ্যম মূর্ছনার নাম পাওয়া যায়। তবে এ সকল গ্রন্থে কোনো রাগের নাম পাওয়া যায় না।

মূলত বৌদ্ধ ধর্মের দ্রুত বিকাশে, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। গান্ধর্বরা ছিল মূলত বৈদিক ধর্মে দীক্ষিত। এঁরা সঙ্গীতকে গ্রহণ করেছিল ধর্মাচরণের অনুষঙ্গ হিসেবে। বৌদ্ধ ধর্ম সঙ্গীত-চর্চা নিষিদ্ধ ছিল না। এঁদের ধর্মগুরুরা গানের মধ্য দিয়ে ভক্তি প্রকাশের চেয়ে ধ্যন ও জ্ঞানের  চর্চার মধ্য দিয়ে নির্বাণ লাভের চেষ্টায় নিমগ্ন হয়ে পড়েছিল। সম্রাট অশোক (৩০৪-২৩২ খ্রিষ্টাপূর্বাব্দ) এবং সম্রাট কনিষ্ক (রাজ্যত্বকাল (৭৮-১৫১ খ্রিষ্টাব্দ)-এর রাজত্বকালে বৌদ্ধ ধর্ব প্রবলভাবে প্রচারিত হয়েছিল। এই সময় সনাতন হিন্দুধর্ম অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। ফলে সামগানের চর্চা কমে গিয়েছিল। এই সময় সনাতন ধর্মের গান্ধর্ব গানের বিকাশে ব্যাঘাত ঘটেছিল।

ভারত, বাংলাদেশ,  শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, ভিয়েৎনাম প্রভৃতি বৌদ্ধ-প্রধান দেশে  নিজেদের ভাষা বৌদ্ধসঙ্গীতের প্রচলন রয়েছে। বৌদ্ধ মন্ত্রাদি ও সাহিত্য-সঙ্গীতাদি রচিত হয়েছিল পালিভাষায়। বৌদ্ধ সাধকরা গান রচনা করেছিলেন ধর্মের প্রচার প্রসারের জন্য লৌকিক গানেই আবদ্ধ ছিল। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা ততটা পৃষ্ঠপোষকতাও পায় নি সেকালের রাজাদের কাছে। বঙ্গদেশে বৌদ্ধগান রচিত হয়েছিল ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে ভিতরে। এই ভাষায় রচিত হয়েছিল- চর্যাগীতি। সহাজিয়া মতাদর্শে রচিত এই গানগুলো ছিল অনিবদ্ধ প্রবন্ধ গান। এই গানগুলোতে রাগের নাম পাওয়া যায়, কিন্তু তালের পরিচয় নেই। বাংলার বাইর রয়েছে তিব্বতী ভাষায় বৌদ্ধগানের বিশাল ভাণ্ডার। বর্তমানে বাঙালি বৌদ্ধরা তাঁদের প্রার্থনার অংশ হিসেবে বাংলায় রচিত বৌদ্ধগানের চর্চা করে থাকেন। বাংলাদেশ এবং ভারতে বসবাসকারী বৌদ্ধধর্মালম্বীদের মধ্যে এই গানের প্রচলন রয়েছে।