ধ্রুবগান
ভারতীয় রাগসঙ্গীতের প্রবন্ধগানের একটি ধারা। 

খ্রিষ্টীয় ২০০ অব্দের দিকে নিবদ্ধ প্রবন্ধ গানের ক্রমবিবর্তনের ধারায় সৃষ্ট হয়েছিল সালগ সুড় প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধগানের বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছিল তুক বিভাজনে। আদি প্রবন্ধগানের আদর্শিক বিভাজন ছিল-

সালগ সুড় প্রবন্ধ গানে- উদগ্রাহ দুই অংশ বিভক্ত ছিল। এছাড়া ধ্রুব ও আভোগের মাঝখানে একটি  ভিতরে একটি অতিরিক্ত তুক যুক্ত হয়েছিল। এই ধাতুটির নাম ছিল অন্তর। অন্তর অংশটুকু উচ্চস্বরে পরিবেশন করা হতো। এই গানের উদ্‌গ্রাহ দুটি খণ্ড এবং অন্তর দুইবার গাওয়ার রীতি ছিল। আবার আভোগের অংশ দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এর প্রথম ভাগের চেয়ে দ্বিতীয় ভাগ উচ্চস্বরে গাওয়া হতো। সব মিলিয়ে সালগ সুড়ের ভাগগুলোর বিন্যাস দাঁড়ায়- উদ্‌গ্রাহ (দুই খণ্ড), অন্তর, এবং আভোগ (দুই খণ্ড। এই গানে মেলাপক নেই।

সালগসূড় প্রবন্ধ গানের একটি ধারায়, বাহুল্য বিবেচনা করে উদ্‌‌গ্রাহ ও মেলাপক অংশ বর্জন করে ধ্রব নামক তুকটিকে গানের শুরুতে রাখা হয়েছিল। মূলত ধ্রুব ও আভোগ নিয়ে ধ্রুবগানের সূচনা হয়েছিল। কালক্রমে ধ্রুব ও অভোগের মাঝখানে 'অন্তর' তুকটি যুক্ত হয়েছিল। এই সময় আভোগ দুটি অংশে পরিবেশন করা হতো। কালক্রমে আভোগের প্রথম অংশকে পৃথক তুক হিসবে পরিবেশন করা শুরু হয়। তখন তার নাম দেওয়া হয়েছিল সঞ্চারী। মতঙ্গ, পার্শ্বদেব এবং শার্ঙ্গদেব তাঁদের রচিত গ্রন্থাদিতে ধ্রুবগানের বর্ণনা পাওয়া যায়।

ধ্রুবগান বৃহৎ পরিসরে পরিবেশিত হতো। ভরতের নাট্যশাস্ত্রে- ক্ষুদ্র পরিসরে নাটকের জন্য রচিত ধ্রবগানকে বলা হয়েছে ধ্রুবা গান। ভরতে নাট্যশাস্ত্রে পাওয়া যায় ধ্রুবাগানের বিস্তারিত পরিচয়।

বিভিন্ন গ্রন্থাদি অনুসরণে জানা যায়- সুলতান আলাউদ্দীনের রাজত্বকালে (১২৯৬-১৩১৬ খ্রিষ্টাব্দ) সুলতানের রাজদরবারে গোপাল নায়ক, ওই বৈজু বাওরা সালগসূড়ের ধ্রুবা গান পরিবেশন করতেন।