গণসঙ্গীত
জনসাধারণের স্বদেশ-প্রেম ও সমাজচেতনা ভিত্তিক আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে সংগ্রামী বা প্রতিবাদী সঙ্গীত বিশেষ। এই কারণে একে গণসঙ্গীত আন্দোলনের গান হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে।

গণসঙ্গীতের শব্দচয়নে থাকে দৃপ্ততা এবং সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করার উপযোগী তীব্র ধ্বনিগত এবং ভাবগত রূপ পাওয়া যায়। আর সুরের চলনে থাকে প্রবহমান অভিঘাত। আর বাণী ও সুরের যুগপৎ মিশ্রণে গণসঙ্গীত হয়ে উঠে প্রতিবাদী উপস্থাপন। গণসঙ্গীত রাজপথে নেমে আসা গণমানুষের উদ্বুদ্ধ করার গান। তাই এই গান সমবেত কণ্ঠের জন্যই তৈরি হয়ে থাকে। এই গানের সমবেত মানুষের পরিবেশনায় থাকে আমার প্রতিবাদ এবং আমাদের প্রতিবাদ।

গণসঙ্গীত স্বদেশী সঙ্গীতের মতো হলেও অনেক সময়ই, স্বাদেশিকতার ঊর্ধে উঠে আন্তর্জাতিক হয়ে উঠে। তাই গণসঙ্গীতকে শুধু স্বদেশী নাম দিয়ে বাধা যায় না। কোনো দেশের স্থানীয় কোনো ঘটনা কোনো সুনির্দিষ্ট গণসঙ্গীতের রচিত হলেও, তার ভিতরে থাকে সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার। তাই শুধু দেশাত্মবোধক বলেও একে বাধা যায় না।

মানব সমাজের আদিম দশা থেকেই সাধারণভাবে শাসক গোষ্ঠীর দ্বারা সাধারণ মানুষ নিগৃহীত হয়ে প্রতিবাদ করে আসছে। তবে এই প্রতিবাদের ধরন একই রকমের ছিল না। মধ্যযুগের সাহিত্যকিদের কোনো রচনায় অত্যাচারের আহাজারি ছিল বটে, কিন্তু তা গণমানুষের আন্দোলনের উপকরণ হয়ে উঠে নি। সে সময়ে প্রতিবাদ হতো অস্ত্র দিয়েই। মধ্যযুগ পেরিয়ে যখন রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণমানুষের বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল, এবং সেই সূত্রে তা শিল্পকর্মের ভিতর দিয়ে প্রকাশিত হওয়া শুরু হলো- তখন থেকেই গণশিল্পকর্মে রূপ নিয়েছিল। যদিও এরূপ চিত্রকর্ম, উপন্যাস, কবিতাকে এরূপ কোনো বিশেষ নামে অভিহিত করা হয় না। কিন্তু সঙ্গীতের ক্ষেত্রে এই পরিভাষাটা তৈরি হয়েছিল।