হিন্দোল
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি প্রাচীন রাগ। বর্তমানে উত্তর ভারতীয়
সঙ্গীত পদ্ধতিতে
কল্যাণ ঠাটের অন্তর্গত রাগ বিশেষ।
খ্রিষ্টাব্দের দিকে প্রাচীন শাস্ত্রীয় গীতসমূহকে সাতটি ভাগে ভাগ
করা হয়েছিল। এই ভাগগুলো ছিল- চোক্ষ (শুদ্ধ), ভিন্না, গৌড়ী, রাগ, সাধারণী, ভাষা ও
বিভাষা। এর ভিতরে হিন্দোলকে গৌড়ীগীতির অন্তর্ভুক্ত রাগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
প্রাচীন ভারতে এই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিচারে এই রাগটি উৎপন্ন হয়েছিল ষড়্জ গ্রামের
ষাড়্জী
ও
নৈষাদী এবং
মধ্যম গ্রামের
গান্ধারী,
মধ্যমা,
ও
পঞ্চমী।
উভয় গ্রামের মিশ্রণ হলেও তিনটি মধ্যম গ্রামের প্রাধ্যনের কারণে একে মধ্যম গ্রামের
রাগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ভরত, কোহল প্রমুখ সঙ্গীতাচার্যরা একে মধ্যম গ্রামের রাগ
হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তারপরেও এই রাগের গ্রাম নিয়ে সংশয় ছিল। কারণ ষড়্জ
গ্রামে পঞ্চম ছিল চার শ্রুতির, পক্ষান্তরে মধ্যমগ্রামের পঞ্চম তিন শ্রুতির। হিন্দোল
মধ্যম গ্রামের রাগ হলেও ত্রিশ্রুতির ছিল। সেকালের হিন্দোলের অংশস্বর, গ্রহস্বর ও
ন্যাসস্বর ছিল ষড়্জ। একালের হিন্দোলের বাদী স্বর ধৈবত। সেকালের
হিন্দোলে ধৈবত ও ঋষভ বর্জিত ছিল। একালের হিন্দোলেও এই দুটি স্বর বর্জিত। অর্থাৎ
হিন্দোল ঔড়ব-ঔড়ব জাতির রাগ। নাট্যগীতি বা ধ্রবা গানে বীররসের গানে ব্যবহৃত হতো। তবে
কখনো কখনো শৃঙ্গার রসের গানে এই রাগ ব্যবহৃত হতো। ধ্রুবাগানে এই গান পরিবেশিত হতো-
চচ্চৎপুট তালে চিত্র, বার্তিক ও দক্ষিণ মার্গে।
আধুনিক কালে এর প্রকৃতি গম্ভীর। এই রাগে ঋষভ
ও পঞ্চম বর্জিত। এই রাগে বিস্তার হয় মধ্য ও তার সপ্তক। এতে নিষাদ বক্রভাবে এবং
দুর্বলভাবে ব্যবহৃত হয়। এই রাগে গমকের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। অনেকে মনে করেন এর
বাদী গান্ধার এবং সমবাদী ধৈবত। এই বিচারে রাগটিকে পূর্বাঙ্গের বলে বিবেচনা করা হয়।
এই রাগের সাথে ঋষভ যুক্ত করলে,
সোহিনী'র
কাঠামো পাওয়া যায়। ব
আরোহণ:
স, গ হ্ম ধ র্স
অবরোহণ: র্স ন ধ হ্ম গ স
ঠাট:
কল্যাণ
জাতি: ঔড়ব-ঔড়ব।
বাদীস্বর: ধৈবত
সমবাদী স্বর: গান্ধার
অঙ্গ: উত্তরাঙ্গ।
সময়: দিবা প্রথম প্রহর।
পকড় : স, গ, হ্ম ধ ন
ধ, হ্ম গ, স।
তথ্যসূত্র:
-
নাট্যশাস্ত্র (চতুর্থ খণ্ড)। ভরত। বঙ্গানুবাদ সুরেশচন্দ্র
বন্দ্যোপাধ্যায়। নবপত্র প্রকাশন। পঞ্চম মুদ্রণ ডিসেম্বর ২০১৪।
-
রাগশ্রেণী। পণ্ডিত ভীমরাও শাস্ত্রী। ১৩৫৩। পৃষ্ঠা:
২৮-৩১।
-
বৃহদ্দেশী। মতঙ্গ। রাজ্যেশ্বর মিত্র সম্পাদিত। সংস্কৃত
পুস্তক ভাণ্ডার। কলকাতা। ১৯৯২।
-
শ্রীহিন্ডোল (পরিচয়)। সেখ কাদের বক্স।
সঙ্গীতবিজ্ঞান প্রকাশিকা। ৫ম বর্ষ, অগ্রহায়ণ ১৩৩৫)
-
সঙ্গীত পরিচিতি
(উত্তরভাগ)। শ্রীনীলরতন বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫ই ভাদ্র' '৮০। ২১
আগষ্ট '৭৩
-
সঙ্গীতরত্নাকর। সুরেশচন্দ্র অনূদিত। রবীন্দ্রভারতী
বিশ্ববিদ্যালয়। কলকাতা। ২২ শ্রাবণ ১৪০৮।
- সঙ্গীত শাস্ত্র। তৃতীয় খণ্ড। শ্রীইন্দু ভূষণ রায়।