সূর্যবংশীয় রাজা ত্রিশঙ্কু
সসরীরে স্বর্গে যাবার ইচ্ছাকে কার্যকরী করার সূত্রে তিনি নিজ তপোবলে শূন্যে দ্বিতীয় স্বর্গ তৈরি করা শুরু করেন।
এই সময় সপ্তর্ষিমণ্ডলেরও জন্ম হয়। দেবতারা এই দৃশ্য দেখে অত্যন্ত ভীত হয়ে
বিশ্বামিত্রের কাছে আসেন। অবশেষে স্থির হয় যে- ত্রিশঙ্কু জ্যোতিশ্চক্রের বাইরে
দেবতুল্য নক্ষত্ররূপে বিরাজ করবে এবং অন্যান্য নক্ষত্রসমূহ তাঁকে অনুসরণ করবে।
অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে তপস্যার বিঘ্ন হওয়ায় বিশ্বামিত্র পশ্চিমাংশের
পুস্করতীর্থবনে তপস্যা শুরু করেন। এই সময় অযোদ্ধার রাজা
অম্বরীষ এক যজ্ঞের আয়োজন করেন। ইন্দ্র এই যজ্ঞের পশু হরণ করলে- যজ্ঞের পুরোহিত এর বিকক্প হিসাবে নরবলি দিতে বলেন।
অম্বরীষের অনুসন্ধান করে বলির উপযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে ঋচীকের মধ্যমপুত্র
শুনঃশেফকে নির্বাচন করেন। রাজা
শুনঃশেফকে ধরে আনার সময় বিশ্বামিত্রের আশ্রমে উপস্থিত হলে-
শুনঃশেফ বিশ্বামিত্রের কাছে প্রাণভিক্ষা করেন। বিশ্বমিত্র তখন
শুনঃশেফকে
অগ্নির স্তব করতে বলেন।
বিশ্বামিত্রের উপদেশ অনুসারে
শুনঃশেফ
অগ্নির স্তব
করা শুরু করেন।
শুনঃশেফ
স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে যজ্ঞের আগুন থেকে তিনি রক্ষা
পান । পরে বিশ্বামিত্র তাঁকে পোষ্যপুত্র হিসাবে
গ্রহণ করেন। এরপর বিশ্বামিত্রের কঠোর তপস্যায় সন্তষ্ট হয়ে
ব্রহ্মা তাঁকে ঋষিত্ব প্রদান করেন। কিন্তু বিশ্বামিত্র এবারেও সন্তুষ্ট না হয়ে আবার তপস্যা শুরু করেন।
ইন্দ্র বিশ্বামিত্রের
এই কঠোর তপস্যা দেখে ভীত হয়ে-
তাঁর তপস্যা ভঙ্গের জন্য
মেনক নামক এক অপ্সরাকে পাঠান।
প্রথমে তেজস্বী বিশ্বামিত্রের কাছে
মেনকানকা
যেতে রাজি হন নাই। কিন্তু ইন্দ্রের আদেশে তাঁকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বামিত্রের কাছে
যেতেই হয়। তবে যাবার আগে
মেনকা
ইন্দ্রের কাছে এরূপ বর প্রার্থনা করেন, যেন বিশ্বামিত্রের
ক্রোধাগ্নি তাকে দগ্ধ করিতে না পারে। এরপর
মেনকার অনুরোধে তাকে
সাহায্য করার জন্য, বায়ু তার সাথে যায়।
মেনকা
তপস্যারত বিশ্বামিত্রের সামনে গিয়ে
ক্রীড়া-কৌতুক শুরু করে। একসময়
বায়ু
মেনকার বসন অপহরণ করলে বিশ্বামিত্র তা দেখে মুগ্ধ হন এবং
মেনকার
সাথে মিলিত হন হন।
কিছুদিন পর
মেনকা
গর্ভবতী হলে, মেনকা হিমালয়ের পাদদেশে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে
এবং সদ্যজাতা কন্যাকে মালিনী
নদীর তীরে নিক্ষেপ করিয়া দেবরাজসভায় প্রস্থান করে।
এই সময় কিছু শকুন এই কন্যাকে রক্ষা করেন।
কণ্ব মুনি শকুন পাখি পরিবেষ্টিত অবস্থায় এই কন্যাকে পেয়ে আশ্রমে নিয়ে আসেন।
শকুন্ত পাখি দ্বারা রক্ষিত হয়েছিল বলে কন্যার নাম রাখেন
শকুন্তলা।
[মহাভারত।
আদিপর্ব।
দ্বিসপ্ততিতম অধ্যায়। বিশ্বামিত্রের তপোভঙ্গ ।
শকুন্তলার জন্মবৃত্তান্ত ]
বিশ্বামিত্র
এবার স্থান ত্যাগ করে উত্তরদিকে যান এবং হিমালয়ের কৌশিকী নদীর তীরে আশ্রম নির্মাণ
করে তপস্যা করতে থাকেন ।
এবার তিনি
ব্রহ্মার তিনি
মহর্ষিত্ব লাভ করেন।
সেই সাথে
ব্রহ্মা
তাঁকে ইন্দ্রিয় জয় করতে বললেন।
ব্রহ্মার কথা অনুসারে তিনি আবার তপস্যা শুরু করেন।
ইন্দ্র
এই তপস্যা ভাঙার জন্য রম্ভা নামক অপ্সরাকে পাঠান
এবার তিনি রম্ভাকে সহচরী হিসাবে গ্রহণ না করে অভিশাপের দ্বারা পাথরে পরিণত করেন ।
কিন্তু ক্রোধের বশে এই অভিশাপ দেওয়ায় তাঁর তপস্যার ফল নষ্ট হয়- ফলে তিনি আবার
তপস্যা শুরু করেন।
দীর্ঘ তপস্যার পর
ব্রহ্মা
তাঁকে ব্রাহ্মণত্ব দান করেন।
বশিষ্ঠ মুনি
রাজা হরিশচন্দ্রের প্রশংসা করলে- তি নি তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য কৌশলে রাজার সকল
সম্পত্তি হরণ করেন । এরপর তি নি রাজার কাছে দক্ষিণা প্রার্থনা করেন
।
দক্ষিণার অর্থ সংগ্রহ করার জন্য হরিশচন্দ্র কাশীতে উপস্থিত হন ।
সেখানে যথাসময়ে দক্ষিণার অর্থ সংগ্রহ করতে না পেরে রাজা তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে এক
ব্রাহ্মণের কাছে এবং নিজেকে এক চণ্ডালের কাছে বিক্রয় করেন ।
এই সময় রাজার পুত্র সাপের কামড়ে মৃত্যুবরণ করলে- মৃত পুত্রকে নিয়ে রাজমহিষী শ্মশানে
আসেন ।
শ্মশানে হরিশচন্দ্রের সাথে রাজমহিষীর দেখা হলে উভয়ই বিলাপ করতে থাকেন ।
এরপর বিশ্বামিত্র উপস্থিত হয়ে হরিশচন্দ্রের আত্মত্যাগের প্রশংসা করে ,
তাঁর মৃত
পুত্রের জীবনদান করেন এবং রাজ্যপাট ফিরিয়ে দেনখ মার্কেণ্ডয়
পুরাণের হরিশচন্দ্রের উপাখ্যান মতে-
বশিষ্ঠ মুনি বার বৎসর গঙ্গায় বসবাসের পর জল থেকে
উঠে এসে হরিশচন্দ্রের বিবরণ শুনে- বিশ্বামিত্রকে বক পাখি হওয়ার অভিশাপ দেন ।
বিশ্বামিত্রও তাঁকে আড়ি পাখি হওয়ার অভিশাপ দেন ।
পরে আড়ি-বক যুদ্ধ শুরু করলে- পৃথিবী ধ্বংসের উপক্রম হয় ।
পরে
ব্রহ্মার
মধ্যস্থতায় এই বিরোধের অবসান ঘটেটে ।
এরপরে বিশ্বামিত্র ও বশিষ্ঠ পরস্পরের মিত্র হয়ে যান।
রামায়ণের মতে-
বিশ্বামিত্রের যজ্ঞনাশের জন্য রাক্ষসেরা সচেষ্ট হলে- রাজা দশরথের অনুমতিক্রমে
তি নি
রাম-লক্ষ্মণকে নিজের আশ্রমে নিয়ে যান ।
পথে তিনি এঁদের দুজনকে অবলা ও অতিবলা মন্ত্রসহ বিভিন্ন অস্ত্রদান করেন ।
রাম এই সকল অস্ত্রের সাহায্যে তাড়কা রাক্ষসীকে হত্যা করেন ।
এরপর বিশ্বামিত্র এই দুই ভাইকে নিয়ে মিথিলা নগরীর পথে রওনা হন ।
পথে তি নি রামের স্পর্শ দ্বারা অহল্যার অভিশাপ মোচন করান ।
মিথিলা নগরীতে পৌঁছে ইনি রামকে দিয়ে হরধনু ভঙ্গ করান এবং সীতার সাথে রামের এবং
লক্ষ্মণের সাথে উর্মিলার বিবাহ দেন । তি নি শীলাবতীর
সাথে মিলিত হলে এঁর একটি পুত্র সন্তান জন্মে ।
এই পুত্রের নাম রাখা হয়েছিল কতি ।
পরবর্তী সময় কতি থেকে কাত্যায়নি বংশের পত্তন হয়েছিল।