আবির
বানান বিশ্লেষণ: আ+ব্+ই+র্+অ
উচ্চারণ:
a.bir (আ.বির্)
শব্দ-উৎস: সংস্কৃত অভ্র>হিন্দি আবীর> বাংলা আবির, তুলনীয় আরবি (عبیر) আবীর (সুগন্ধি)
পদ: বিশেষ্য  

অর্থ: অভ্র ও লৌহ চূর্ণের মিশ্রিত রক্তিম চূরহণ বা রঞ্জক পদার্থ। এটি সাধারণত লাল বা কমলা রঙের গুঁড়োর মতো দেখায়। এই রঙ সুগন্ধিত হয়ে থাকে। আবির তৈরি করার অভ্র-লৌহচূর্ণের সাথে  অপরাজিতা, গাঁদা, বিট, গাজর, এবং কমলালেবুর খোসার মতো বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় গাড় রঙের আবির তৈরির জন্য কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করা হয়।

ভারতের সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সাধারণত হোলি উৎসবে রং খেলার জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়া দুর্গাপূজা, নানা লোকজ উৎসব,  হিন্দু বিবাহে রঞ্জক দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক উপদানে তৈরি আবির ত্বকের জন্য ক্ষিকারক নয়। তেব যে সব আবিরে কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করা হয়, তা ত্বকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

আবির ব্যবহারের প্রাধমিক পর্যায়ে ব্যবহৃত হতো লাল বা কমলা রঙের আবির। বর্তমানে ভেষজ আবির হিসেবে নানা রঙের আবির তৈরি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ভেষজ উপকরণও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
  • হলুদ আবির: হলুদ গুঁড়ো ও ময়দা ১:২ অনুপাতে মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়া কাঁচা হলুদ শুকিয়ে তার গুঁড়োর সাথে হলুদ গাঁদা ফুল মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়া হলুদ আবির তৈরি করতে হলুদ চন্দ্রমল্লিকা পাঁপড়ি গুঁড়ো করে তৈরি করা যেতে পারে।
  • লাল আবির: রক্ত জবাফুল শুকিয়ে গুঁড়ো করে, এর সাথে মিহি অভ্র ও লৌহচূর্ণ মিশিয়ে তৈরি করা যায়। শুধু রক্তচবা ও লাল চন্দনের গুঁড়ো মিশিয়ে যে আবারি তৈরি করা হয়, তাতে চন্দনের সুগ্ধ থাকেন এবং ত্বকের উপাকরীয়ও বটে। একে অনেক সময় ফাগ বলা হয়।
  • কমলা আবির: কমলা রঙের গাঁদাফুলের পলাশফুলের গুঁড়ো মিশিয়ে এই আবির তৈরি করা হয়। তবে এর সাথে সামান্য  সুগন্ধী ট্যালকম পাওডার মিশিয়ে সুগন্ধী গোলাপী আবিড় তৈরি করা হয়ে থাকে। এছাড়া লাল ও হলুদ আবিরের মিহি কণা পরিমাণ মতো মিশিয়ে কমলা আবির তৈরি করা যায়। অতিরিক্ত উপাদন হিসেবে শিউলি ফুলের বৃন্ত ব্যবহার করা যায়। 
  • গোলাপী আবির: শুকনো বিটের গুঁড়ো হচ্ছে গোলাপী আবিরের মূল উপাসান। এই আবিরকে সুগন্ধিত করা ও ঔজ্জ্বল্যের জন্য গোলাপি রঙের গোলাপ ফুলের গুঁড়ো ব্যবহার করা হয়। মাদার গাছের ছালের গুঁড়ো অতিরিক্ত উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
  • খয়েরি আবির: বাজার থেকে কেনা কফি পাউডারের সাথে ময়দা মিশিয়ে মণ্ড করে নিতে হয়। পরে এই মণ্ড শুকিয়ে গুঠ করে নিলে- খায়ের আবির তৈরি হয়ে যায়।
  • নীল আবির: অপরাজিতা ফুলের গুঁড়ো দিয়ে নীল আবির তৈরি করা হয়।
  • সবুজ আবির: মেহেদি পাতার গুঁড়ো দিয়ে সবুজ আবির তৈরি করা হয়। এছাড়া এর সাথে পালং শাকের গুঁড়ো ব্যবহার করা যায়।

সূত্র:
  • চলন্তিকা। রাজশেখর বসু। এমসি সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিঃ। ১৪০৮। পৃষ্ঠা: ৩৪২
  • বঙ্গীয় শব্দকোষ (প্রথম খণ্ড)। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্য অকাদেমী। ২০০১। পৃষ্ঠা: ১১৩২।
  • বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান। মার্চ ২০০৫। পৃষ্ঠা: ২৩৬।
  • বাঙ্গালা ভাষার অভিধান (প্রথমখণ্ড)। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস। সাহিত্য সংসদ। নভেম্বর ২০০০। পৃষ্ঠা: ১১০২।
  • শব্দবোধ অভিধান। আশুতোষ দেব। দেব সাহিত্য কুটির। মার্চ ২০০০। পৃষ্ঠা: ৪৭১।
  • শব্দসঞ্চয়িতা। ডঃ অসিতকুমার বন্দোপাধ্যায়। নিউ সেন্ট্রাল বুক এজেন্সি প্রাঃ লিমিটেড। ২৩শে জানুয়ারি, ১৯৯৫। পৃষ্ঠা: ৪৬৬।
  • শব্দার্থ প্রকাশিকা। কেশবচন্দ্র রায় কর্মকার। দেব সাহিত্য কুটির। মার্চ ২০০০।
  • পৃষ্ঠা: ২৮৬।
  • সংসদ বাংলা অভিধান। বৈদ্যুতিন সংস্করণ। শিশির শুভ্র সম্পাদিত। পৃষ্ঠা: ৪২১।
  • সংস্কৃত বাংলা অভিধান। শ্রীঅশোক কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার। ১৪০৮ বঙ্গাব্দ। পৃষ্ঠা: ২২২।
  • সরল বাঙ্গালা অভিধান (সপ্তম সংস্করণ, নিউবেঙ্গল প্রেস ১৯৩৬)। সুবলচন্দ্র মিত্র।
  • পৃষ্ঠা: ৬৮২।