সাধারণভাবে হোমো গণের প্রজাতিসমূহের তৎকালীন জনগোষ্ঠীর দ্বারা
লিখিত ইতিহাসের সূত্রে ঐতিহাসিক অধ্যায়ের শুরু। প্রায় ২৬ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
দিকে মানুষ তাদের জীবনযাত্রার কাহিনি লেখা শুরু করেছিল। তাই এই সময়ের আগের সকল
কিছুই প্রাগৈতিহাসিক।
প্রাগৈতিহাসিক জনগোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য এবং নান্দনিক
বোধের তাড়নায় নানা ধরনের উপকরণ তৈরি করেছিল। এসবের ভিতরে শুধু জীবনযাত্রা নির্বাহের
জন্য ব্যবহৃত উপকরণগুলোকেই প্রাগৈতিহাসিক যন্ত্রপাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
পূর্ব অধ্যায়ের যন্ত্রপাতিকে প্রাগৈতিহাসিক যন্ত্রপাতিকে বুঝায়। অতীতের যে সময় থেকে তথ্যাদি তৎকালীন জনগোষ্ঠীর দ্বারা লিখিত হওয়া শুরু হয়েছিল, তখন থেকে ঐতিহাসিক অধ্যায়ের শুরু হয়েছে। পক্ষান্তরে নান্দনিক বোধের তাড়নায় সৃষ্ট উপকরণকে বলা হয় প্রাগৈতিহাসিক শিল্পকর্ম (Prehistoric art) ।
প্রাগৈতিহাসিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা শুরু হয়েছিল পাথুরে
যন্ত্রপাতির ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। এরা শিকারের জন্য এবং অন্যের শিকারে পরিণত
হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পাথরে অস্ত্র তৈরি করেছিল। আদি জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার
শুরু দিকে, ব্যবহৃত হতো- কাঠ, গাছের ডাল বা বাঁশ জাতীয় উদ্ভিদ। একই সাথে এরা দূর
থেকে ঢিল জন্য ব্যবহার করতো পাথরের টুকরো। এগুলো তারা প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে
অবিকৃতভাবেই ব্যবহার করতো। এরপর এরা শিকারকে সহজে হত্যা করার জন্য কাষ্ঠাল উপকরণের
মাথা পাথরে ঘষে সরু বা তীক্ষ্ণ করে নিয়েছিল। কিন্তু সেকালের বড় বড় প্রাণীদের সাথে
যুদ্ধে এসকল উপকরণ সহজেই ভেঙে যেতো। এই সূত্রে তারা পাথর বেছে নিয়েছিল। এছাড়া
শিকারকৃত পশুর হাড় ভাঙা, শিকারকৃত পশুর হাড় থেকে মাংস ছড়ানোর জন্য পাথরের টুকরো
ব্যবহার করতো। ব্যবহারের সুবিধার কথা বিবেচনা করে এরা কোনো কোনো চ্যাপটা পাথরের
প্রান্তভাগ ঘষে ঘষে তীক্ষ্ণ করে নিয়েছিল। এই সূত্রে তৈরি হয়েছিল পাথুরে কুঠার।
একালের কুঠারের মতো এসকল কুঠারের সাথে হাতল যুক্ত ছিল না। তাই এরা হাতের কব্জির জোরে
এ সব কুঠার চালিয়ে কাঙ্ক্ষিত কাজটি করে নিত। প্রাগৈতিহাসিক যুগের সেই আদি লগ্নের
কাঠ বা বাঁশের অস্ত্রগুলো কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও, আদিম পাথরের অস্ত্রগুলোর নমুনা
পাওয়া গেছে। তাই প্রাগৈতিহাসিক অস্ত্র বলতেই আমরা পাথরের অস্ত্রকেই বুঝে থাকি।
আদিম পাথুরে কুঠারগুলো এরা ব্যবহার করতো- শিকারের পশুকে আঘাত করা, হাড় থেকে মাংস
ছড়ানো, মাংস কাটা ও থেঁৎলানো ইত্যাদির জন্য। এছাড়া এই কুঠারের সাহায্যে শক্ত খোলসের
ফল ভেঙে ভিতরের শাঁস খাওয়ার জন্য, ডালপালা ভাঠার জন্য। হোমো গণের পাথরের যন্ত্রপাতি
ব্যবহারের সূত্রে পাথুরে যুগের পত্তন হয়েছিল।
উদ্ধারকৃত যন্ত্রপাতির নমুনা অনুসারে বিজ্ঞানীরা প্রস্তরযুগকে তিনটি প্রধান ভাগে
ভাগ করেছেন। ভাগগুলো হলো- নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ প্রস্তর যুগ।
নিম্ন প্রস্তরযুগ: এর সময় সীমা ৩৩ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এখন পর্যন্ত
এই যুগের যে সকল পাথুরে যন্ত্রপাতির উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তার কালানুক্রমিক তালিকা দেওয়া হলো।
![]() |
লোমেক্উই প্রত্নক্ষেত্র থেকে উদ্ধারকৃত পাথুরে যন্ত্রপাতি। |
|
ওল্ডুভিয়ান সভ্যতার হস্ত-কুঠার |
![]() |
মরোক্কোর জেবেল ইর্হৌদে-তে প্রাপ্ত আদিম অস্ত্রের নমুনা |
আদিম লেভালয়িস যন্ত্রপাতি: প্রায় ৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে আধুনিক মানুষ তথা হোমো সেপিয়েন্সদের হাতে পত্তন ঘটেছিল আদিম প্রস্তরযুগের। পাথুরে যন্ত্রপাতি বা অস্ত্রের বিশেষ কৌশলের আদিম রূপ লেভালয়িস যন্ত্রপাতি' তৈরির কৌশল এদের দ্বারই সূচিত হয়েছিল। বিভিন্ন স্ফটিক পাথরের ফলকের প্রান্তভাগ তীক্ষ্ণ করে এরা যে অস্ত্র তৈরি করেছিল, তার সাহায্যে শিকারকে আঘাত করে গভীর ক্ষত তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। এছাড়া এই জাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করে এরা শিকারকৃত পশুর মাংস হাড় থেকে করতে পারতো। সম্ভবত কচি ডালাপালা কাটা বা থেঁৎলানোর জন্য এই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করতো। সম্ভবত সাধারণ পাথরের পরিবর্তে এরা রঙবেরঙে বাহারি স্ফটিক পাথরে ব্যবহার করতো, এদের কাঠিন্য ধারালো করার সহজতর বলেই।
![]() |
ফ্রান্সে প্রাপ্ত আশুলিয়ান কুঠারের নমুনা |
মধ্যপ্রস্তর যুগ: এই যুগের সূচনা হয়েছিল ৩ লক্ষ থেকে ৪৫ হাজার
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এখন পর্যন্ত এই যুগের যে সকল পাথুরে যন্ত্রপাতির উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তার কালানুক্রমিক তালিকা দেওয়া হলো।
সূত্র