উচ্চ প্রস্তরযুগ
(Upper Palelithic stage)
ব্যাপ্তী ৫০ হাজার থেকে ১০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
বর্তমান
আলজেরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের
সাহারা মরুভূমিতে ১২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে মানব বসতি গড়ে উঠেছিল।
এরা এই অঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় নব্য প্রস্তর যুগের সূচনা
করেছিল। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তাসিলি ন'আজের পার্বত্য এলাকা থেকে প্রায় ১৫০০ শিল্পকর্মের নমুনা পাওয়া গেছে।
এর ভিতরে রয়েছে
প্রস্তর-খোদিত চিত্র
এবং পাথরে উপরে অঙ্কিত চিত্র। এই চিত্রকর্মটি 'তাসিলি ন'আজের গুহাচিত্র' নামে
পরিচিত। এই গুহচিত্রে পাওয়া গেছে, নৃত্যরত কিছু মানুষের চিত্র। এছাড়া পাথরের তৈরি যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে এই অঞ্চলে।
এই সময় ইউরেশিয়া অঞ্চলের মানুষ কাদামটি দিয়ে ইট তৈরি করা শিখেছিল। এই ইট এরা বাড়ির
দেয়াল তৈরির কাজে ব্যবহার করতো। এরা নিম্ন পর্যায়ের কৃষিকাজ শুরু করেছিল। কৃষির
পাশাপাশি এরা বন্য প্রাণী শিকার করতো। এরা মৃতব্যক্তিদের কবর দিত। এর জন্য তাদের
কোনো পৃথক কবরস্থান ছিল না। এরা সাধারণ বাসগৃহের ভূমির গভীরে মৃতদেহ কবর দিত।
নব্যপ্রস্তর যুগে পাওয়া গেছে- এন্টিলোপ, জিরাফ, উট, কুকুর, গবাদি পশুর ছবি-সহ নানা ধরনের
মনুষ্য চিত্র, শিকারের দৃশ্য, পৌরাণিক প্রাণীর ছবি ইত্যাদি। মনুষ্য ছবিগুলোতে দেখা
যায় নৃত্যরত মানুষ। এছাড়া কিছু ছবিতে দেখা
যায় পোশাক পরিহিত মানুষ। নারীরা অলঙ্কার পরতো এবং নারী-পুরুষ উভয়ই সাজসজ্জায়
অভ্যস্থ ছিল। কিছু কিছু চিত্র থেকে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, এরা পশু পালন করতো এবং
ঘোড়ায় চড়া শিখেছিল।
এ ছাড়া এই সময়ে তাদের পশুর সংখ্যা নির্ধারক মৃত্তিক-নির্মিত টোকেন ব্যবহার করতো।
গোড়ার দিকে এ সকল টোকেন ছিল বলের মতো গোলাকার। পরে চ্যাপ্টা টোকেন ব্যবহার করা হতো।
তবে এই বিবর্তন ঘটেছিল আরো পরে।
স্ক্যাণ্ডেনেভিয়ান অঞ্চল:
প্রাচীন নোমাডিক জনগোষ্ঠী নরওয়েতে বসতি স্থাপন করেছিল- খ্রিষ্ট-পূর্ব ৯৩০০ অব্দের
দিকে।
প্যালেস্টাইন অঞ্চল
বৃহত্তর প্যালেস্টাইন অঞ্চলের বিকশিত একটি প্রাচীন সভ্যতা।
এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের লেভান্ট অঞ্চলে বিকশিত
প্রাচীন সভ্যতা। ধারণা করা হয়, ১২,০০০ থেকে ৯,৫৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এই
সভ্যতার প্রাথমিক অধ্যায়ের বিকাশ ঘটেছিল।
এই আমলে আধুনিক মানুষ
হোমো স্যাপিয়েন্স
-এর একটি উপপ্রজাতি আফ্রিকার ইথিওপিয়া অঞ্চলে বসবাস করতো। এই
উপ-প্রজাতিটির নাম ছিল
হোমো স্যাপিয়েন্স ইডালটু।
অস্ট্রেলিয়ায় মনুষ্য বসতি
প্রায় ১ লক্ষ থেকে ৭৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
হোমো স্যাপিয়েন্স
-এর একটি দল
আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে আসে এবং কালক্রমে এরা দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে
পড়েছিল। ৭৫ থেকে ৬০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এদেরই একটি শাখা
অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিল। পরবর্তী ৫৩ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এরা
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। ৩০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে উত্তর
অস্ট্রেলোয়ার আর্হেম অঞ্চলের পাথুরে অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছি। এই অঞ্চলের উবির (Ubirr)
পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীদের ভিতরে তিনটি পর্যায়ে শিল্পকলার বিকাশ ঘটেছিল।
অবশ্য এসব নমুনার ভিতরে হিসেবে শুধুই কিছু চিত্রকর্মের কথা জানা যায়।
এই আমলের ৪০ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে শেষে বর্তমান
ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলে বসবাসকারী
হোমো স্যাপিয়েনর্স-রা
পর্বতগুহায় চিত্র অঙ্কনের সূত্রপাত করেছিল। বর্তমানে এগুলোকে
মারোস-এর গুহাচিত্র
নামে অভিহিত করা হয়।
১২০০০-৯৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে একদল মানুষ প্যালেস্টাইন অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। এই
সময়ে এই অঞ্চলের দুটি বিশেষ বসতিকে
নাটুফিয়ান সভ্যতা
(Natufian culture)
ও
জেরিকা সভ্যতা
( Jericho
civilization) নামে অভিহিত করা হয়। এই দুটি সভ্যাতার ভিতরে
সম্ভবত
জেরিকা সভ্যতার
সূচনা হয়েছিল এই যুগের শেষের দিকে। এবং তা নব্য-প্রস্তরযুগে পূর্ণ অবয়বে বিকশিত
হয়েছিল।
উচ্চ-প্রস্তর যুগের শেষে শুরু হয়েছিল
নব্য-প্রস্তর যুগ। এই ব্যাপ্তীকাল ছিল- ১০,০০০ থেকে ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।