সন্ধ্যভাষা
বাংলা কাব্য ও সঙ্গীতে ভাষার একটি বিশেষ শৈল্পিক উপস্থাপন রূপ। এই জাতীয় কবিতা বা গানে সাধারণ অর্থের পিছনে লুকিয়ে থাকে মূল অর্থ। এর আদি নমুনা পাওয়া যায় চর্যাগীতি

চর্যাগীতিগুলোর ভিতরে রয়েছে নানা ধরনের দুর্বোধ্য ভাব। এর আক্ষরিক অর্থের সাথে ভাবগত অর্থের ব্যাপক ব্যবধান আছে। ফলে এই পদগুলোতে বুঝা-না-বুঝার দ্বন্দ্ব রয়ে যায়। সেই কারণে চর্যায় ব্যবহৃত ভাষাকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন সন্ধ্যাভাষা। তাঁর মতে-
'সহজিয়া ধর্মের সকল বই-ই সন্ধ্যা ভাষায় লেখা। সন্ধ্যা ভাষার মানে আলো-আঁধারি ভাষা, কতক আলো, কতক অন্ধকার, খানিক বুঝা যায়, খানিকটা বুঝা যায় না। অর্থাৎ, এই সকল উঁচু অঙ্গের ধর্মকথার ভিতরে একটা অন্য ভাবের কথাও আছে। সেটা খুলিয়া ব্যাখ্যা করিবার নয়। যাঁহারা সাধনভজন করেন তাঁহারাই সে কথা বুঝিবেন, আমাদের বুঝিয়া কাজ নাই।'
বজ্রযানী ও সহজযানী গ্রন্থকাররাও একে  'সন্ধ্যাভাষয়া বোদ্ধব্যম্' বলে এক রহস্যের ইঙ্গিত দিতেন। বজ্রযানী গ্রন্থগুলিতে 'সন্ধ্যাভাষা' শব্দটি বহুল-ব্যবহৃত। তিব্বতি ভাষায় 'সন্ধ্যাভাষা'র অর্থ 'প্রহেলিকাচ্ছলে উক্ত দুরুহ তত্ত্বের ব্যাখ্যা'। ম্যাক্সমুলার 'সন্ধ্যা'র অর্থ করেছিলেন 'প্রচ্ছন্ন উক্তি'
(hidden saying)

কাব্যিক এবং সন্ধ্যাভাষার উপস্থাপনায় এক ধরনের কৃত্রিম ভাষারীতির সৃষ্টি হয়েছে। একথা বলার কারণ নেই যে, সেকালের বাঙালিরা এই ভাবে কথা বলতেন। তবে এই পদগুলোতে ব্যবহৃত শব্দের বিচারে, ভাষার শব্দগত একটি পরিচয় পাওয়া যায়।

ঐতিহ্যগতভাবে এই ভাষারীতি বাংলা প্রচলিত ধাঁধাঁ, খনার বচন, ডাক- এ এর আভাষ মেলে। বাংলা বাউল গানের গীতিকাররা সন্ধ্যাভাষার  আশ্রয়ে বহু গান রচনা করেছেন। যেমন-
সূত্র: