অর্ধ-কূর্মাসন
যোগশাস্ত্রে বর্ণিত আসন বিশেষ।

কূর্ম শব্দের অর্থ হলো কচ্ছপ। দৃশ্যত এই আসনটির ক্ষেত্রে দেহ ভঙ্গিমা আংশিকভাবে কচ্ছপের মতো দেখায়। তাই এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। প্রাচীন ভারতীয় যোগীরা একে পবিত্র আসন হিসাবে বিবেচনা করতেন। কারণ বিষ্ণর একটি অবতার ছিল কূর্ম। এই আসনটিকে কূর্মাসন -এর অর্ধরূপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

পদ্ধতি
১. প্রথমে হাঁটু মুড়ে সমতল স্থানে বসুন। এবার দুই হাঁটু ও দুই পায়ের পাতা একত্রিত করে নিন। এই অবস্থায় নিতম্ব থাকবে দুই গোড়ালির উপর। এবার দুই হাঁটুর উপর দুই হাত আলতো করে রাখুন।
২. এবার দুই হাত সোজা করে কানের পাশ দিয়ে মাথার উপরের দিকে টেনে তুলুন। দুই হাত মাথার উপর সোজা অবস্থানে রেখে, হাতের তালু দুটিকে নমস্কারের মতো করে একত্রিত করুন।
৩. একটি হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে অপর হাতের বুড়ো আঙুলকে আঁকড়ে ধরুন। লক্ষ্য রাখবেন এই অবস্থায় যেন হাত বাঁকা না হয়। এর জন্য হাতের পাশ্ববর্তী অংশ কান ঘেঁষে রাখার চেষ্টা করুন। একই সাথে মেরুদণ্ড সোজা রাখুন।
৪. এবার বুকের ভিতর ধীরে ধীরে বাতাস টেনে নিতে থাকুন এবং হাত দুটোকে যতটা সম্ভব উপরের দিকে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। এই অবস্থায় কোনক্রমেই যেন হাঁটু ভূমি ছেড়ে উপরের দিকে না উঠে। বুক ভরে পুরো বাতাস নেবার পর, শরীরেরকে সামনের দিকে বাঁকিয়ে মাটি স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। এই অবস্থায় হাতকে ভাঁজ করা যাবে না এবং নিতম্ব পায়ের গোড়ালির উপরে থাকবে। হাত লম্বালম্বিভাবে মাটিতে স্পর্শ করার সময়, এবং কপাল ভূমি স্পর্শ করবে। চিবুকটা থাকবে হাঁটু থেকে দূরে। এই অবস্থায় বুক আর পেট পুরোপুরিভাবে উরুর উপর চেপে বসবে। এই অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড স্থির থাকুন। সময় নিরুপণের জন্য মনে মনে সেকেন্ডের বিরতীর হিসাবে ৩০ পর্যন্ত গুণতে পারেন। তবে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে।
৫. ৩০ সেকেন্ড অতিক্রান্ত হওয়ার পর, ধীরে ধীরে হাত ও মাথাকে সোজা রেখে উঠে বসুন। লক্ষ্য রাখবেন, উঠে বসার সময় যেন কোনো ক্রমেই হাত বাঁকা না হয়। এরপর ৩০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিন।
৬. শবাসন শেষ করে, পুনরায় পুরো প্রক্রিয়াটি আরও দুইবার করুন। ফলে আপনার সাধনাটি তিনবার সম্পন্ন হবে।
বিশেষ সতর্কতা
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য এই আসন নিষিদ্ধ।

এই আসনের উপকারিতা
১. মনে প্রশান্তি আনে। এই কারণে হিন্দু যোগীরা এই আসনকে পবিত্র মনে করতেন। ভয়, উৎকণ্ঠা, ক্রোধ উপশমে এই আসন বিশেষ সহায়তা প্রদান করে থাকে।
২. মেরুদণ্ড সবল হয়। পায়ের পেশী ও হাড়ের বাতের উপশম হয়। কাঁধের পেশীর ব্যাথা দূর হয়।
৩. পরিপাক তন্ত্র সবল হয়। ফলে অজীর্ণ, অক্বল ও পেটের বায়ু দূর হয়। হজম শক্তি বৃদ্ধির কারণে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয় জাতীয় পেটের রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।
৪. বহুমুত্র ও হাঁপানি রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৫. পেটের ও নিতম্বের চর্বি কমে। একই সাথে উরু সবল হয়।
সূত্র :