মেরিনার (মহাকাশযান)
ইংরেজি: Mariner।
 

• মেরিনার ১:

  মেরিনার ১

  ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জুলাই শুক্র গ্রহের উদ্দেশ্যে এই মহাকাশ যানটি, Cape Canaveral, United States, Launch Complex 12 থেকে  উৎক্ষেপণ করা হয়। এর ওজন ছিল ২০২.৮ কেজি।

  যন্ত্রপাতি

  • মাইক্রোওয়েভ রেডিওমিটার
  • ইনফ্রারেড রেডিওমিটার
  • ফ্লাক্সগেট ম্যাগনেটোমিটার
  • সোলার প্লাজমা স্পেকটোমিটার
  • এনার্জিটিক পার্টিকেল ডিটেক্টর

  সফলভাবে এটি পৃথিবীর কক্ষপথ ত্যাগ করে। তবে উৎক্ষেপণের পরপরই এর সকল গবেষণার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। শুক্রের-এর প্রায় ২৯,০০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে উড়ে যায়। এই মহাকাশযান দ্বারা প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায় নাই বলে, একে নাসার বিজ্ঞানীরা সফল অভিযান বলেন না।  

• মেরিনার ২:

  মেরিনার ২

  ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে আগষ্ট শুক্র গ্রহের উদ্দেশ্যে এই মহাকাশ যানটি, Cape Canaveral, United States, Launch Complex 12 থেকে  উৎক্ষেপণ করা হয়। এর ওজন ছিল ২০৩.৬ কেজি।

  যন্ত্রপাতি

  • মাইক্রোওয়েভ রেডিওমিটার
  • ইনফ্রারেড রেডিওমিটার
  • ফ্লাক্সগেট ম্যাগনেটোমিটার
  • কসমিক ডাস্ট ডিটেক্টর
  • সোলার প্লাজমা স্পেকটোমিটার
  • এনার্জিটিক পার্টিকেল ডিটেক্টর

  সফলভাবে এটি পৃথিবীর কক্ষপথ ত্যাগ করে। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই ডিসেম্বর ৩৪,৭৬২ কিলোমিটার দূর দিয়ে শুক্রের পাশ দিয়ে উড়ে যায়। এই সময় প্রায় ৪২ মিনিট ধরে এই নভোযান শুক্রের উপরিভাগে পর্যবেক্ষণ করে। এই নভোযানের দ্বারা জানা যায় যে, এর উপরিভাগের ৪২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সময় শুক্রের আকাশে প্রায় মেঘের স্তর ধরা পড়ে। এই মেঘ শুক্রের উপরিতল থেকে ৫৬-৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই গ্রহটি সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের বিপরীত দিকে আবর্তিত হয়, তা এই নভোযান দ্বারা স্বীকৃত হয়।
  
  ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জানুয়ারি পর্যন্ত এটি সঙ্কেত পাঠিয়েছিল। এই সময় পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ছিল ৮,৭৪,০০,০০০ কিলোমিটার।  

• মেরিনার ৩ :

  মেরিনার ৩ ও ৪-এর ছবি একই রকম

  ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে এই মহাকাশ যানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। সফলভাবে এটি পৃথিবীর কক্ষপথ ত্যাগ করে। ৮ মাসের ভিতরে এটি ৩২৫,০০০,০০০ মাইল পথ অতিক্রম করে। তবে এর প্রতিরক্ষক ব্যবস্থা চালু না হওয়া এর অভ্যন্তরীণ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। কোনো তথ্যাদি প্রেরণ ছাড়াই এই মহাকাশযানটি পরে হারিয়ে যায়। এর ওজন ছিল ২৬০ কেজি।

  যন্ত্রপাতি

  • টেলিভিশন
  • ম্যাগনেটোমিটার
  • প্লাজমা প্রোব
  • কসমিক রে টেলিস্কোপ
  • ট্রাপেড রেডিয়েশান ডিটেক্টর
  • কসমিক রে আয়োনাইজেশান
  • কসমিক ডাস্ট
     
• মেরিনার ৪ : ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ নভেম্বর মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে এই মহাকাশ যানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এই মহাকাশযানটি মঙ্গলগ্রহের ৯,৮৪৬ কিলোমিটারের (৬,১১৮ মাইল) ভিতরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এই নভোযান মঙ্গলের খাদ এবং এর ধূলিময় রুক্ষ প্রান্তরের ছবি তুলে পাঠায়। সব মিলিয়ে ২২টি টেলিভিশন ক্যামেরায় মঙ্গল-পৃষ্ঠের ছবি তোলে। এগুলো নভোযানের ৪-ট্রাকের একটি রেকর্ডারে সংরক্ষিত হয়। এই ছবি পৃথিবীতে পাঠাতে প্রায় ৪ দিন সময় লেগেছিল। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই ডিসেম্বর এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

  যন্ত্রপাতি

  • মঙ্গলের জন্য টিভি ক্যামেরা
  • হিলিয়াম ম্যাগনেটোমিটার
  • প্লাজমা প্রোব
  • কসমিক রে টেলিস্কোপ
  • লো এনার্জি কসমিক রে
  • কসমিক রে আয়োনাইজেশান
  • কসমিক ডাস্ট
  • অকুলেশান
  • সেলেস্টিয়াল ম্যাকানিক্স
     
• মেরিনার ৫:

  মেরিনার ৫

  এই নভোযানটি তৈরি করা হয়েছিল মেরিনার ৪-এর সহযোগী হিসেবে। যদি মেরিনার ৪ ব্যর্থ হয়, তাহলে, এই নভোযানটি পাঠানো হবে। কিন্তু মেরিনার ৪ কাঙ্ক্ষিত ফলাফল প্রদান করতে সক্ষম হলে, মেরিনার ৫-কে পুনর্বিন্যাস করে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন নভেম্বর শুক্র গ্রহের জন্য প্রেরণ করা হয়। এই নভোযানটি শুক্রের ২০০০ কিলোমিটার দূর থেকে, এই নভোযান শুক্রের বায়ুমণ্ডল পরীক্ষা করে।

  যন্ত্রপাতি

  • এস-ব্যান্ড অকুলেশান
  • টু-ফ্রিকুয়েন্সি বিকন রিসিভার
  • ইন্টারপ্ল্যানেটরি আয়োন প্লাজমা প্রোব ফর ই/কিউ অফ ৪০ টু ৪০০ ভোল্টস
  • ট্র্যাপেড রেডিয়েশান ডিটেক্টর
  • ট্রায়াক্সিয়াল লো ফিল্ড হিলিয়াম ম্যাগনেটোমিটার
  • আল্ট্রাভায়োলেট ফটোমিটার
  • সেলেস্টিয়াল ম্যাকানিক্স
     
• মেরিনার ৬ এবং ৭:

  মেরিনার ৬

  এই নভোযান দুটি তৈরি করা হয়েছিল পরস্পরের সহযোগী হিসেবে। তবে দুটি নভোযান একই দিনে উৎক্ষেপণ করা হয় নি। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি মেরিনার ৬ এবং ২১শে মার্চ মেরিনার ৭ উৎক্ষেপণ করা হয়। এই দুটি নভোযান মঙ্গলের বিষুব অঞ্চলএবং দক্ষিণ গোলার্ধে অনুসন্ধান করে। এই দুটি নভোযান ৩,৪৩০ কিলোমিটার (২,১৩০ মাইল)-এর ভিতরে পৌঁছায়। এই নভোযান দুটি মঙ্গলের ১৪৩টি ছবি প্রেরণ করে। মঙ্গল-পৃষ্ঠ ছাড়াও এই দুটি নভোযান মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল পরীক্ষা করে।

  যন্ত্রপাতি

  • মঙ্গলের জন্য টিভি ক্যামেরা
  • আইআর স্পেক্ট্রোমিটার
  • টু চ্যানেল আইআর রেডিওমিটার মার্স সারফেস টেম্পারেচর
  • ইউভি স্পেক্টোমিটার
  • সেলেস্টিয়াল ম্যাকানিক্স
  • এস ব্যান্ড অকুলেশান
  • থার্মাল কন্ট্রোল ফ্লাক্স মনিটর (কোনিক্যাল রেডিওমিটার
  • জেনারেল রিলেটিভিটি
     
• মেরিনার ৮ এবং ৯:

  মেরিনার ৯

  এই নভোযান দুটি তৈরি করা হয়েছিল পরস্পরের সহযোগী হিসেবে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই মে মেরিনার ৮ উৎক্ষেপণ করা হয়। আর ৩০শে উৎক্ষেপণ করা হয় মেরিনার ৯। যথাযথ উৎক্ষেপণের ত্রুটির কারণে মেরিনার ৮ ব্যর্থ হয়। ফলে মেঢরিনার ৯-ই উভয় নভোযানের ভূমিকা পালন করে? মেরিনার ৯ মূলত মঙ্গল-পৃষ্ঠের তথ্যাদি পাঠায়। এই নভোযান থেকে মঙ্গলের উপগ্রহ ফোবোস ও ডিমোস সম্পর্কে তথ্য পাঠায়।

  মেরিনার ৯-এর যন্ত্রপাতি

  • ইনফ্রারেড রেডিওমিটার
  • আল্ট্রাভায়োলেট স্পেক্টোমিটার
  • ইনফ্রারেড ইন্টারফেরোমিটার স্পেক্ট্রোমিটার
  • টেলিভিশন ফটোগ্রাফি
  • সেলেস্টিয়াল ম্যাকানিক্স
  • এস ব্যান্ড অকুলেশান
  
  
• মেরিনার ১০:

  মেরিনার ১০

  এই নভোযানটি ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা নভেম্বর উৎক্ষেপণ করা হয়। এই নভোযানটি পাঠানো হয়েছিল বুধ ও শুক্র  গ্রহের উদ্দেশ্য। এটি প্রথমে শুক্র গ্রহে উপস্থিত হয়। পরে শুক্র গ্রহের অভিকর্ষকে কাজে লাগিয়ে নভোযানটি বুধ গ্রহ পরিদর্শনে যাত্রা শুরু করে।
  
  এই নভোযানটি তিনবার বুধের খুব সন্নিকটে যেতে পেরেছিল। নভোযানটি বুধের ৩২৭ কিমি কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল। প্রথমবার বুধের কাছে যাওয়ার মাধ্যমে মেরিনার ১০, গ্রহটিতে একটি অভাবনীয় চৌম্বক ক্ষেত্রের অস্তিত্ব আবিষ্কার করে। এই সময় বুধের ধীর ঘূর্ণন বেগ ধরা পড়ে। এই সময় বুধের ধীর ঘূর্ণন বেগ ধরা পড়ে। দ্বিতীয়বার মেরিনার ১০ বুধের খুব সন্নিকটে যায় এবং এর পৃষ্ঠদেশের প্রচুর আলোকচিত্র গ্রহণ করে। তৃতীয় বার গ্রহটির চৌম্বক ধর্ম সম্বন্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত জানা সম্ভব হয়। উপাত্তগুলো থেকে বোঝা যায়, গ্রহটির চৌম্বক ক্ষেত্র অনেকটা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের মত যা গ্রহের চারপাশের সৌর বায়ুকে পথচ্যুত করতে পারে। তৃতীয়বার বুধের সন্নিকটে যাওয়ার পর এর জ্বালানী প্রায় ফুরিয়ে যায়। এর ফলে পৃথিবী থেকে এই অভিযানের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। অবশেষে পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অভিযানের কার্যকলাপ বন্ধ করে দেয়। ধারণা করা হয় মেরিনার ১০ এখনও সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এবং প্রতি কয়েকমাসে একবার করে বুধ গ্রহের সন্নিকটে যাচ্ছে।

  মেরিনার ১০-এর যন্ত্রপাতি

  • টেলিভিশন ফটোগ্রাফি
  • সেলেস্টিয়াল ম্যাকানিক্স এন্ড রেডি্প সায়েন্স
  • স্ক্যানিং ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক এ্যানলাইজার এন্ড ইলেক্ট্রোন স্পেক্টোমিটার
  • এক্সট্রিম আল্ট্রাভায়োলেট স্পেক্টোমিটার
  • টু-চ্যানেল ইনফ্রারেড রেডিওমিটার
  • এনার্জিটিক পার্টিকেল এক্সপেরিমেন্ট

  এটিই ছিল মেরিনার নভোযান সিরিজের শেষ নভোযান। মেরিনার ১১ এবং ১২ কে ভয়েজারের সাথে যুক্ত করা হয়। এই কারণে মেরিনার ১১ এবং ১২ নভোযান দুটি ভয়েজার-১ এবং ভয়েজার-২ নামে পরিচিত।

সূত্র :
http://www.nasa.gov/