পৃথিবীর নিকটতম নিউট্রন তারা
 '
PSR J0108-1431'
পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৭৭০ আলোকবর্ষ।

নিউট্রন তারা
ইংরেজি : neutron star
 

চন্দ্রশেখর সীমা অনুসারে, যদি কোনো নক্ষত্রের মোট ভর সূর্যের ১.৪৪ গুণের সমান বা তার চেয়ে কম হয়, তাহলে ওই নক্ষত্র শ্বেত বামন (white dwarf) তারায় পরিণতি হয়। কিন্তু যে সকল নক্ষত্রের ভর চন্দ্রশেখর সীমা চেয়ে বেশি হয়, অর্থাৎ সূর্যের ভরের চেয়ে ১.৪ বা ৩.২ গুণ বেশি হয়, সেগুলো নিউট্রন তারা বা কোয়ার্ক তারায় পরিণত হয়। এক্ষেত্রে এই নক্ষত্রের অভ্যন্তরের অক্সিজেন নিঃশেষ হয়ে গেলে, নক্ষত্রটি প্রাথমিক পর্যায়ে শ্বেত বামন তারা হওয়ার পথে অগ্রসর হয়। কিন্তু নক্ষত্রের অভ্যন্তরে সঞ্চিত কার্বনের আধিক্য এবং মাধ্যাকর্ষণের চাপে নক্ষত্রগুলো  কার্বন তারা (Carbon star)-এ পরিণত হয়।

 

এরপর কার্বন দহন প্রক্রিয়া, নিওন দহন প্রক্রিয়া, অক্সিজেন দহন প্রক্রিয়া, সিলিকন দহন প্রক্রিয়া অতিক্রম করে, নক্ষত্রটি একটি লৌহ সমৃদ্ধ নক্ষত্রে পরিণত হয়। মূলত এই অবস্থায় নক্ষত্রের অভ্যন্তরে লৌহ-নিকেলের একটি ভারি কেন্দ্র তৈরি হয়। নক্ষত্রের অভ্যন্তরে অত্যধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কেন্দ্রের গামা রশ্মির প্রভাবে লৌহ-৫৬ ভেঙে যায় এবং ১৩টি হিলিয়াম এবং ৪টি নিউট্রন তৈরি করে।


নিউট্রোনের কোনো আধান নেই (
charge) নেই। তাই এই কণা অন্য কোনো নিউক্লিয়াসে সহজেই প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে এই নিউট্রন বিভিন্ন নিউক্লিয়াসকে ভারি করে তোলে। এই কারণে লৌহের ২৬ প্রোটন-যুক্ত ৫৬ ভরের লৌহের নিউক্লিয়াসে নিউট্রোন প্রবেশ করে ৮০ ভর বিশিষ্ট লৌহে পরিণত করে। এই ঘটনা অত্যন্ত দ্রুত ঘটে বলে একে বলা হয় rapid-process বা r-process
 

মূলত স্বল্পসময়ের জন্য কিছু বিক্রিয়া লৌহ নক্ষত্রের অভ্যন্তরে চললেও শেষপর্যন্ত নক্ষত্রটি এক সময় লৌহ-দহনের সকল ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এর ফলে নক্ষত্রটি সঙ্কোচনের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এই সময় নক্ষত্রটির অভ্যন্তরে ১০০০০ কোটি কেলভিনের বেশি তাপ উৎপন্ন হয় এবং এর লৌহ পরমাণুগুলো পারস্পরিক সংঘর্ষে ধ্বংস হয়ে যায়। এই সংঘর্ষের ফলে নক্ষত্রের কেন্দ্রে নিউট্রন জমা হতে থাকে। একই সাথে এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই সংঘর্ষের কারণের উৎপন্ন শক্তিকে নক্ষত্রের মাধ্যকর্ষণ শক্তি পরাভূত করে। এর ফলে নক্ষত্রের কেন্দ্র সঙ্কুচিত হলেও কুণ্ডলিত হয়ে পড়ে। এই কুণ্ডলিত শক্তি নক্ষত্রকে আবদ্ধ করে ফেলে এবং প্রবলভাবে ধাক্কা দেয়। এর প্রবল ঘাত-তরঙ্গের (shock wave) সৃষ্টি করে এবং নক্ষত্রের বাইরের স্তরকে উত্তপ্ত করে তোলে। এই অবস্থায় নক্ষত্রের বাইরের স্তরে নতুন মৌলিক পদার্থ এবং তেজস্ক্রিয় সমস্থানিক পরমাণু তৈরি করে। এই অবস্থায় এই সকল পদার্থ নক্ষত্র থেকে প্রচণ্ড গতিতে বাইরে ছিটকে পড়ে। এই অবস্থায় নক্ষত্রটি তীব্র আলো প্রদান করে এবং দূর থেকে নক্ষত্রটিকে বিস্ফোরিত অবস্থায় দেখা যায়। নক্ষত্রের এই দশাকেই অতি নবতারা বলা হয়।
 

সূর্যের চেয়ে বড় নক্ষত্রগুলোর ভিতরে Type II, Type Ib বা Type Ic ধরনের নক্ষত্র নিউট্রন তারায় পরিণত হয়। এদের উপাদানের অধিকাংশই থাকে নিউট্রন নামক পরমাণুর মৌলিক কণা। এদের ভর এবং ঘনত্ব থাকে অত্যন্ত বেশি। এর ঘনত্ব প্রায় ৮×১০১৩ থেকে ২×১০১৫ গ্রাম প্রতি ঘনসেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। কিন্তু পাউলির বর্জন বিধি অনুযায়ী নিউট্রনসমূহের খুব বেশি ঘনত্বে পোঁছাতে পারে না। তবে এই নক্ষত্রগুলো বেশ উত্তপ্ত থাকে।

 

এর ব্যাসার্ধ্য ২০ থেকে ১০ কিলোমিটারের মত হয় যা সূর্যের ব্যাসার্ধ্যের তুলনায় ৩০,০০০ থেকে ৭০,০০০ গুণ কম। এ কারণে ঘনত্বের এই মান পরমাণুর কেন্দ্রীনের প্রায় সমান।
 


সূত্র :
তারা পরিচিত। মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশান। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪
বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান বিশ্বকোষ।
১-৫ খণ্ড।

http://en.wikipedia.org/wiki/
contemporary Astronomy/ Jay M. Pasachoff 2nd edition
A Brief history of time / Stephen Hawking
Essays about Univesre/Boris A. Vorontrov-Vel'Yaminov/Mir Pulishers Moscow/1985
http://scienceray.com/astronomy/pulsar-2/