পদার্থ
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{|
দৈহিক সত্তা
|
সত্তা
|}
ইংরেজি :
matter,
substance।
সমার্থক শব্দাবলি : পদার্থ, বস্তু।
আমাদের চারপাশের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যে সকল সত্তা আছে, সাধারণভাবে এগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এই ভাগ দু’টি হলো‒ পদার্থ ও বিকীর্ণ শক্তি (radient energy)। এর ভিতরে পদার্থ হলো– ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যে কোন বস্তু, যার ভর আছে, যা কোন স্থান দখল এবং যার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে, তাকে পদার্থ বলে। যেমন‒ বই, পাথর, কাগজ, কলম, ইত্যাদি।
তাপ ও চাপের উপর নির্ভর করে পদার্থ সাধারণত তিনটি ভৌত দশায় থাকতে পারে।
তবে এক্ষেত্রে সহনীয় কক্ষ-তাপমাত্রা এবং চাপকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। পদার্থের
আকার
আয়তনের উপর ভিত্তি করে পদার্থকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
এই ভাগগুলো হলো—
১. কঠিন পদার্থ। যেমন : লোহা, কাঠ, কাঁচ ইত্যাদি। দেখুন :
কঠিন পদার্থ।
২. তরল পদার্থ। যেমন : পানি, তেল ইত্যাদি। দেখুন :
তরল পদার্থ।
৩. বায়বীয় পদার্থ। যেমন : বাতাস, অক্সিজেন, হহিড্রোজেন ইত্যাদি। দেখুন
:
গ্যাসীয় পদার্থ (gas)।
এ ছাড়া পদার্থ আরও দুটি বিশেষ দশায় থাকতে পারে। বিচারে পদার্থকে অতিরিক্ত দুটি ভাগে
ভাগ করা হয়। যেমন—
১. তরল-স্ফটিকার পদার্থ
২. প্লাজমা পদার্থ।
সাধারণ বিচারে পদার্থ তিন অবস্থায় (কঠিন,তরল,ও বায়বীয়) থাকলেও একই পদার্থ সাধারণ তাপমাত্রায় একটি মাত্র অবস্থায় থাকতে পারে। সাধারণ তাপীয় অবস্থা হতে কোন পদার্থকে নিম্ন বা উচ্চ তাপীয় অবস্থায় আনলে, পদার্থ তার দশা পরিবর্তন করে। এই পরিবর্তিতনশীল দশার নিম্ন তাপীয় অবস্থায় কঠিন এবং উচ্চ তাপীয় অস্থায় বায়বীয় ধর্ম লাভ করে। পদার্থের এই রূপান্তরকে পদার্থের অবস্থান্তর বলে। যেমন– সাধারণ তাপমাত্রায় পানি একটি তরল পদার্থ। একে শীতল করলে এটি ০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বরফে পরিণত হয়। আবার এই বরফকে তাপ দিলে, এটি পানিতে এবং আরো তাপ দিলে একই পানি ১০০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিণত হয়। অন্যদিকে, বাষ্পকে শীতল করলে, পানিতে এবং পানিকে আরো শীতল করলে বরফে পরিণত হয়। অর্থাৎ পানি, বরফ ও জলীয়বাষ্প একই পদার্থ, যা সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। পানির এইরূপ পরিবর্তনকে পানির তাপীয় অবস্থা বলে।
পদার্থের ভৌত পরিবর্তন
(Physical Change Of Matter)
যে সকল
পরিবর্তনের ফলে পদার্থের ভৌত অবস্থা, গঠন-প্রকৃতি, স্থিতিস্থাপকতা, বৈদ্যুতিক ও
চৌম্বক ধর্ম প্রভৃতির পরিবর্তন হয়, কিন্তু উপাদানগত
কোন পরিবর্তন হয় না অর্থাৎ কোন নূতন পদার্থের সৃষ্টি হয় না, সেই সকল পরিবর্তনকে ভৌত
পরিবর্তন বলা হয়। যেমন–
বরফকে তাপ দিলে তা প্রথমে পানিতে পরিণত হয় এবং তরল পানিকে আরও তাপ দিলে তা
জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়। এই জলীয়বাষ্পকে আবার শীতল করা হলে তরলে পরিণত হয় এই তরলকে আরও
শীতল করলে তা পুনরায় বরফে পরিণত হয় । কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় পানির ধর্ম ভিন্ন
। কিন্তু তিন অবস্থাতেই পানি
H2O
অণুর সমন্বয়ে গঠিত
। সুতরাং পানির এইরূপ পরিবর্তন হল ভৌত পরিবর্তন। এই
পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্যেসমজূহকে পদার্থের ভৌত পরিবর্তনের ধর্মাবলি (Physical
Properties Of Matter)
বলা হয়।
যেমন–
বর্ণ, গন্ধ, ঘনত্ব, গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক দ্রাব্যতা, ভঙ্গুরতা ইত্যাদি ভৌত ধর্ম ।
পদার্থের
রাসায়নিক পরিবর্তন
(Chemical Change Of Matter)
এক বা একাধিক
পদার্থের উপাদানগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ওই পদার্থের নিজস্ব সত্তা হ্রাস পায় এবং নূতন
এক বা একাধিক পদার্থ সৃষ্টি হয়, এরূপ পরিবর্তনকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। যেমন–
লঘু সালফিউরিক এসিডের সাথে জিংক যুক্ত করলে হাইড্রোজেন গ্যাস ও জিংক সালফেট সৃষ্টি
হয়। এই পরিবর্তনের সময় জিংক ও সালফিউরিক এসিডের সত্তা হ্রাস পায় এবং নূতন ধর্ম
বিশিষ্ট হাইড্রোজেন ও জিংক সাকফেট সৃষ্টি হয় ।
Zn +
(লঘু)
H2SO4 = ZnSO4 + H2
এটি একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।
অনুরূপ ক্যালসিয়াম কার্বনেটকে
তাপ দিলে তা ক্যালসিয়াম অক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইডে পরিণত হয় । এখানে ক্যালসেয়াম
কার্বনেট ভেঙ্গে সম্পূর্ন নূতন ধর্ম বিশিষ্ট দুটি পদার্থ তৈরি হয়।
CaCO3 = CaO + CO2
সুতরাং এটিও একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।
মৌলিক, যৌগিক ও মিশ্র পদার্থ
প্রতিটি
পদার্থ গঠিত হয় অতি ক্ষুদ্র কণার দ্বারা। পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কণাকে অণু বলা
হয়। এই অণুগুলো গঠিত হয় এক বা একাধিক পরমাণুর দ্বারা। পদার্থের অণুগুলোর গঠন
বিন্যাসের বিচারে পদার্থ হতে পারে তিন প্রকার। এই প্রকার তিনটি হলো–
মৌলিক, যৌগিক ও মিশ্র।
মৌলিক পদার্থ
(element) যৌগিক পদার্থ
(compound
matter) মিশ্র পদার্থ
(compound
matter) |
মৌলিক পদার্থের পর্যায় সারণি
মৌলিক পদার্থসমূহের
১. ১৭৮৯ সালে অ্যান্টনি ল্যাভোসিয়ে প্রথম ৩৩টি মৌলের একটি সারণি প্রকাশ করেন।
২. ল্যাভোসিয়ের পর্যায় সারণিকে পাঁচটি উপভাগ গ্যাস, ধাতু, অধাতু ও ভূধাতু হিসেবে
ভাগ করেছিলেন।
৩. জার্মান রসায়নবিদ জুলিয়াস লোথার মেয়ার ২৮টি মৌলের তালিকা ১৮৬৪ সালে প্রকাশ করেন।
৪. ১৮৭০ সালে রাশিয়ান রসায়ন শিক্ষক দিমিত্রি ইভানোভিচ মেন্দেলিফ ৬৪টি জানা ও ২৯টি
অজানা মৌল নিয়ে সারণি প্রকাশ করেন।
৫. ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পিউর অ্যান্ড অ্যাপলাইড কেমিস্ট্রি (আইউপ্যাক) ১৯১৮
সালে মৌলের পর্যায় সারণির অফিসিয়াল নিয়ন্ত্রক।
৬. ২০১২ সাল পর্যন্ত আইউপ্যাক ১১৪টি মৌলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আরও দুটি মৌল স্বীকৃতির
অপেক্ষা করছে।
৭. নামকরণের দিক থেকে সর্বশেষ ১১২তম মৌলের নামকরণ করা হয়েছে কোপারনিসিয়াম।