মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ
(১৮৬৮-১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দ)
সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক এবং ইসলামী পণ্ডিত।  

১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই জুন পশ্চিম বঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার হাকিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আলহাজ গাজী মাওলানা আব্দুল বারি খাঁ ছিলেন মুসলমানদের আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের শিক্ষিত সুপণ্ডিত মওলানা। মায়ের নাম বেগম রাবেয়া খাতুন।  পিতামহ তোরাব আলী খাঁয়ের পিতামহ ছিলেন সৈয়দ হাজী নিসার আলী তিতুমীরের সহযোদ্ধা। 

১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মাতা-পিতা একই দিনে কলেরায় মৃত্যুবরণ করেন। এই কারণে নানীর কাছে তিনি প্রতিপালিত হন।

শৈশবে গ্রামের মক্তবে শিক্ষারম্ভ করেন। প্রথমে তিনি আহলে হাদিস নামক মুসলিম গোষ্ঠীর মসজিদে আশ্রয় নেন। এই সূত্রে আহলে হাদিস গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত হন। এই সময় তাঁর নাম ছিল- ইসমাইল। প্রাবন্ধিক নূরুল আনাম মিঠুর বয়ান পাওয়া যায়। যার মতামতে

'জনৈক ইসমাইল সাহেব মাদরাসা ও স্কুল উভয় পরীক্ষায় বার বার ফেল করে বিধবা ফুফুর একমাত্র অবলম্বন ছাগলটি বিক্রি করে দিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। সেখানে তিনি একটি মসজিদে আশ্রয় নেন। এটি ছিল আহলে হাদিস গোষ্ঠীর। তিনি পূর্বে আহলে হাদিস বিরোধী হলেও এখানে এসে আহলে হাদিসপন্থী হয়ে যান। তথাকথিত হানাফিদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়ে ধনাঢ্য হাজী পরিবারে উঠে আসেন এবং হাজী সাহেবকে বুঝিয়ে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করতে সক্ষম হন। তথাকথিত হানাফি বিদ্বেষ ছড়াতে ছড়াতে এক সময়ে পত্রিকাটি ব্রিটিশ সরকারেরও সমালোচনা শুরু করে। পুলিশী হামলার ভয়ে অতঃপর হাজী সাহেব পত্রিকা অফিস স্থানান্তরের পরামর্শ দিলে ইসমাইল সাহেব অন্যত্র চলে গিয়ে পত্রিকার মাথায় লিখতে শুরু করেন ‘মওলানা মোহাম্মদ ইসমাইল প্রতিক্ষিত'। অতঃপর তিনি 'আঞ্জুমান' নামের সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে হাজার হাজার টাকা চাঁদা তুলতে শুরু করেন। সেই টাকার হিসাব কোনোকালেও পাওয়া যায়নি। মওলানা এবার যোগ দেন খেলাফত আন্দোলন ও রাজনৈতিক সংগঠন কংগ্রেসে। পত্রিকার বেশ কাটতি হয় তার। এক সময় তিনি জেলে যান এবং ভগ্ন স্বাস্থ্যের অজুহাতে মুক্তিও পান। এরপর তিনি ইসলামী পুস্তক লেখার ঘোষণা দিয়ে অগ্রিম মূল্য পাঠানোর জন্য আবেদন জানান দেশবাসীর কাছে।'

পরবর্তী সময়ে আবুল মনসুর আহমদ, আবু জাফর শামসউদ্দিন প্রমুখের রচনা থেকে ধারণা করা হয়, ইসমাইল সাহেবই ছিলেন আকরাম খাঁ। সম্ভবত আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তিনি প্রথম জীবনে অসৎ পথ বেছে নিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সে পথ পরিহার করে শুদ্ধতম মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেছেন।

১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এফএম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তবে মওলানা আকরম খাঁর জ্ঞানসাধনা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় আটকে ছিল না। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন জ্ঞানের অনুরাগী ও সাধক। বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট আবুল কাসেম ফজলুল হকের ভাষায়, 'তিনি বাংলা, সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, ফারসি, উর্দু' এই ছয়টি ভাষা জানতেন এবং নানা বিষয়ে অসাধারণ পণ্ডিত ছিলেন। তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিল ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম, ইহুদি ধর্ম, ধর্মতত্ত্ব, বাংলার ইতিহাস, ভারতের ইতিহাস, ইংরেজ জাতির ইতিহাস, ইতিহাসতত্ত্ব, রাজনীতি ও রাষ্ট্রতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ে। তাঁর রচনাবলিতে তাঁর পাণ্ডিত্য ও বিদ্যাবত্তার পরিচয় আছে। রাজনীতিবিদ হিসেবেও তিনি প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। (প্রবন্ধ : মওলানা আকরম খাঁ : তাঁর চিন্তা ও কর্ম, ভোরের কাগজ, ঈদ সাময়িকী ২০১৮)

পেশাদারি জীবনের শুরুতে তিনি কাজী আবদুল খালেক সম্পাদিত আহলে হাদিস পত্রিকায় কাজ করেন এবং পত্রিকা প্রকাশের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরে এই পত্রিকায় মওলানা আকরম খাঁ সহকারী সম্পাদকে উন্নীত হন। এ পত্রিকায় কাজ করার সময় স্ব-উদ্যোগে একটি পত্রিকা প্রকাশের ভাবনা আসে।

১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে ১৮ আগস্ট তিনি কলকাতা ১নং তাঁতী বাগানের এক প্রেস থেকে মোহাম্মদীর প্রথম সংখ্যা প্রকাশ করতে সক্ষম হন। কিন্তু প্রেস কর্তৃপক্ষ প্রথম সংখা প্রকাশের পর দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশে সম্মত না হওয়ায় সাময়িকভাবে মোহাম্মদীর প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে পত্রিকা প্রকাশের লক্ষ্যে মওলানা আকরম খাঁ ‘বসুমতি’ প্রেসের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ‘বসুমতি’র প্রতিষ্ঠাতা তাঁকে মোহাম্মদী প্রকাশের ব্যাপারে প্রথমে খুবই উৎসাহিত করেন। কিন্তু পরে তিনি তাঁর প্রেস থেকে মোহাম্মদী প্রকাশে অক্ষমতা প্রকাশ করেন। ফলে মওলানা আকরম খাঁর নিজস্ব উদ্যোগে পত্রিকা প্রকাশের প্রাথমিক প্রয়াস ব্যর্থ হয়।

তাঁর পিতৃবন্ধু কুষ্টিয়ার মওলানা আবদুল্লাহ ছিলেন ধনী তেল ব্যবসায়ী এবং কলকাতার বেলে পুকুর লেনের ‘আলতাফ প্রেসের’ স্বত্বাধিকারী। তাঁর সহায়তায় ‘আলতাফী প্রেসে’ চাকরি নিয়ে মওলানা আকরম খাঁ মোহাম্মদী প্রকাশ শুরু করেন। আকরম খাঁর সম্পাদনায় এবং মওলানা আবদুল্লাহর মালিকানায় ১৯০৩ সালের অক্টোবর মাসে মাসিক মোহাম্মদী দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এ ব্যবস্থাপনায় মাসিক মোহাম্মদীর পঞ্চম সংখ্যা পর্যন্ত বের হয়।

১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-রদ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতার সময় তিনি অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মূলত এই সময় তিনি পত্রিকা প্রকাশের চেয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষভাবে জড়িয়ে পড়েন।

১৯০৭ খ্রিষ্টব্দে সাপ্তাহিক মোহাম্মদী প্রকাশিত হয়। কিন্তু পত্রিকাটির ব্যবসায়িক অসফলতা লক্ষ্য করে মওলানা আবদুল্লাহ ক্রমে পত্রিকা প্রকাশের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এক সময় তিনি পত্রিকার মালিকানা, এমনকি ছাপাখানাও মওলানা আকরম খাঁকে প্রদান করেন। তখন পর্যন্ত পত্রিকা প্রকাশের মতো আর্থিক সঙ্গতি মওলানা আকরম খাঁর ছিল না। তবুও তিনি প্রাণান্তকর কায়িক পরিশ্রম করে নিজের কর্তৃত্বাধীনে সাপ্তাহিক মোহাম্মদীর প্রকাশ অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করেন।

১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে মওলানার সম্পূর্ণ নিজ কর্তৃত্বাধীনে সাপ্তাহিক মোহাম্মদীর প্রকাশ শুরু হয়।
১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা মে মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের আহ্বানে একটি সাহিত্য সংগঠনের জন্য একটি সভার প্রাথমিক কাঠামো তৈরি হয়। এই সভার সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন স্কুলসমূহের পরিদর্শক মৌলভী আব্দুল করিম বি.এ.। এই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে তৈরি হয়েছিল বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতিএই সভায় মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ উপস্থিত থেকে সমর্থন জানান। পরে (১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ এপ্রিল) এই সমিতি থেকে যখন 'বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা ' প্রকাশিত হয়েছিল, তখন তিনি এই পত্রিকার সমর্থন জুগিয়েছেন।
১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি
মোহাম্মদী পত্রিকার মাধ্যমে প্রচারাভিযান চালিয়ে মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলার বিভিন্ন মাজহাবের আলেমগণকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন। এর ফলে গঠিত হয় ‘আঞ্জুমানে ওলামায়ে বাঙ্গালা’ নামক আলেম সংগঠন।

১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে
 ‘আঞ্জুমানে ওলামায়ে বাঙ্গালা’ সমিতির পক্ষে প্রকাশ করেন আল এছলাম নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।
১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খেলাফত আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তিনি নিখিল ভারত খেলাফত আন্দোলন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনে খেলাফত আন্দোলনের অন্যতম নেতা মওলানা আবুল কালাম আজাদ, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এবং মওলানা মজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এই সময় আকরাম খাঁ তুর্কি খেলাফত থেকে ফান্ড সংগ্রহ করার দায়িত্ব নেন। ১৯২০-১৯২৩ সময়ের মধ্যে তিনি বাংলার বিভিন্ন স্থানে জনসভা বা সম্মেলনের আয়োজন করে খেলাফত আন্দোলন এবং অসহযোগ আন্দোলন গতিশীল করার চেষ্টা করেন।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা মে তিনি উর্দু ভাষায় জামানা নামে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করেন।
উর্দুভাষী মুসলমানদের মধ্যে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মুসলিম জাগরণের বার্তা পৌঁছানোর লক্ষ্যেই জামানা প্রকাশের মূল কারণ ছিল।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে 'আল এসলাম' পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। এই বছরের ১ ডিসেম্বর তিনি বাংলা দৈনিক সেবক প্রকাশ করেন। সরকার বিরোধী সম্পাদকীয় রচনার জন্য ১০ ডিসেম্বর মাসে সেবক বাজেয়াপ্ত হয় এবং তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক করে সাপ্তাহিক মোহাম্মদীর দৈনিক সংস্করণ হিসেবে দৈনিক মোহাম্মদী প্রকাশ করা হয়। এ দৈনিকের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলাম, আবুল কালাম শামসুদ্দীন প্রমুখ যুক্ত হয়ে তাঁদের মেধা ও শ্রম দিয়ে অচিরেই পত্রিকাটিকে প্রথম শ্রেণির দৈনিকে পরিণত করেন এবং ক্রমে এর প্রচার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। এ সময় মওলানা আকরম খাঁ কারাগারে থেকে পত্রিকা পরিচালনার ব্যাপারে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। ইতোমধ্যে দৈনিক সেবকের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে দৈনিক মোহাম্মদীর স্থলে পুনরায় দৈনিক সেবক প্রকাশ করা হয়।

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে মহাত্ম গান্ধী কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারের পর ক্রমশ দৈনিক সেবক ও জামানা জনপ্রিয়তা হারায়। এই কারণে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে দৈনিক সেবকের প্রকাশনা বন্ধ হয়। এর কিছুদিন পর দৈনিক জামানাও বন্ধ করে দেন।

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু-মুসলমানের মধ্য ঐক্য গড়ে তোলার জন্য তিনি চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ পার্টির পক্ষ নেন। অসহযোগ আন্দোলনের সময় মোহাম্মদী প্রকাশ করেন। এবারও ব্রিটিশ সরকার তা বন্ধ করে দেয়।

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে বেঙ্গল প্যাক্ট সন্ধির সময়ও তিনি একই পক্ষে ছিলেন।
১৯২৬-১৯২৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং সমসাময়িক অন্যান্য রাজনৈতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে আকরম খাঁ ভারতীয় জাতীয় রাজনীতির প্রতি আস্থা হারিয়ে স্বরাজ্য পার্টি ও কংগ্রেস উভয় দল থেকেই পদত্যাগ করেন। মোহাম্মদী পত্রিকার মাধ্যমে
মুসলমানদের সংগঠিত ও সচেতন করার পাশাপাশি মওলানা আকরম খাঁ মোহাম্মদীর মাধ্যমে হিন্দু বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দকেও দাঙ্গার জন্য দায়ী করেন। তাঁর এ প্রচারে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিপক্ষ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একাংশ তাঁকে আক্রমণ খাঁ নামে অভিহিত করেন। এতদসত্ত্বেও মওলানা আকরম খাঁ সাপ্তাহিক মোহাম্মদী পত্রিকার মাধ্যমে মুসলমানদের স্বার্থে সাংবাদিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সমগ্র বাংলায় সাপ্তাহিক মোহাম্মদীর জনপ্রিয়তার আরও বৃদ্ধি পায়।

১৯২৭ খ্রিষ্টব্দের ৬ নভেম্বর থেকে পুনরায় মোহাম্মদী পত্রিকার মাসিক সংস্করণ প্রকাশ করেন। এ সময় সাপ্তাহিক মোহাম্মদী নিয়মিত প্রকাশিত হতো।

১৯২৯ থেকে ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পর্জা বা গ্রাম্য রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে সেপ্টেম্বরে সুরমা ভেলি মুসলিম সম্মেলনে মওলানা আকরম খাঁ সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এ উপলক্ষে ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর ২৩ পৃষ্ঠার বৃহৎ অভিভাষণ মুদ্রিত হয়।
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের শেষদিকে ঢাকার নওয়াব হাবিবুল্লাহর নেতৃত্বে বাংলার বিশিষ্ট মুসলমান নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক দল গড়ে তুলতে সচেষ্ট হলে মওলানা আকরম খাঁ এর প্রশংসা করেন এবং এর সমর্থনে কাজ করেন।

১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে বাংলার বিশিষ্ট মুসলিম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সম্মিলিতভাবে একটি রাজনৈতিক দলে ঐক্যবদ্ধ হতে সম্মত হন। এই সূত্রে এপ্রিল মাসে সম্মিলিত মুসলিম দল বা ইউনাইটেড মুসলিম পার্টি আত্ম প্রকাশ করে। এই দলে তিনি দলের সাথে যুক্ত হন এবং দলের প্রচার কার্যে সক্রিয় ছিলেন।  এই বছরের ৩১শে অক্টোবর তাঁর সম্পাদনায় দৈনিক আজাদ প্রকাশিত হয়।

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ শে মার্চ লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর থেকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে পরিচালিত মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাস ভূমি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বঙ্গদেশে জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে, দৈনিক আজাদের মাধ্যমে তিনি বিরামহীন প্রচার চালান। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে বাংলার মুসলিম জনমত পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সহায়ক শক্তিতে পরিণত হয়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরও পূর্ব বাংলার রাজনীতিতে মওলানা আকরম খাঁ প্রতিষ্ঠিত দৈনিক আজাদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। এই বছরেই তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পাক-ভারত বিভাগের পর তিনি পূর্ব-পাকিস্তানে চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা ভাষা-আন্দোলন অংশ নিয়েছিলেন। আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যপদ ত্যাগ করেন এবং তিনি প্রথম শহীদ মিনার আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেছিলেন।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের গণপরিষদ ভেঙে দেওয়া হলে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান।
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত পাকিস্তান কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডোলজির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন।
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের  ১৮ই আগস্ট  মৃত্যুবরণ করেন।

রচনা

সম্মাননা ও পদক