গিরিবালা দেবী
কাজী নজরুল ইসলামেরশাশুড়ী এবং , প্রমীলা নজরুলের মা।

গিরিবালার পৈত্রিক বাড়ি ছিল বিহারের সমস্তিপুরে। জাতিতে ছিলেন বৈদ্য। বিবাহ হয়েছিল ত্রিপুরা রাজ্যের নায়েব বসন্তকুমার সেনগুপ্তের সাথে। উল্লেখ্য, তিনি ছিলেন বসন্তকুমার সেনগুপ্তের দ্বিতীয় স্ত্রী।
বসন্তকুমার সেনগুপ্তের পৈত্রিক নিবাস ছিল-
মানিকগঞ্জ জেলার শিবলায় উপজেলার তেওতা গ্রাম। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে এই গ্রামেই এঁদের একমাত্র সন্তান ছিলেন আশালতা সেনগুপ্তের (প্রমীলা নজরুল, ডাক নাম দুলি বা দোলন) জন্ম হয়েছিল।

এর কিছু পরে  বসন্তকুমার সেনগুপ্তের মৃত্যু হলে, তিনি পুরোপুরি আশ্রয়হীনা হয়ে পড়েন। তাই বাধ্য হয়ে
বিধবা
গিরিবালা সেনগুপ্তা তাঁর কন্যা আশালতাকে, তাঁর দেবর ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের বাসায় আশ্রয় গ্রহণ করেন।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দেরএপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতায় পরিচিত আলী আকবর খানের সাথে কুমিল্লায় আসেন এবং কান্দিরপাড়ে ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে ওঠেন। এখানে তাঁর কন্যা দোলনকে গিরিবালা থাকতেন। এই বাড়িতে ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের স্ত্রী বিরজাসুন্দরী নজরুলকে পুত্রস্নেহে কাছে টেনে নেন। নজরুলও তাঁকে মায়ের স্থানে বসিয়েছিলেন।  আর গিরিবালাকে মাসিমা সম্বোধন করেছিলেন। এই সময় দোলনের বয়স ছিল ১৩ বৎসর।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই এপ্রিল  (মঙ্গলবার, ২৩ চৈত্র ১৩২৭) আলী আকবর খান নজরুলকে সাথে নিয়ে, তাঁর গ্রামের বাড়ি  দৌলতপুরের যান। আলী আকবরে পরিবারের কর্ত্রী ছিলেন, তাঁর বিধবা মেজ বোন একতারুন্নেসা। এই বোনের কন্যা সৈয়দা খাতুনকে দেখে নজরুল মুগ্ধ হন। আলী আকবর বিষয়টি বুঝতে পরে তাঁর এই ভাগ্নীর সাথে মেলামেশার সুযোগ করে দেন। মুগ্ধ কবি সৈয়দা খাতুনের নাম দিলেন 'নার্গিস'। পরে আলী আকবর খান নজরুলের সাথে নার্গিসের বিবাহের ব্যবস্থা করেন। পরে বিয়ের রাতে বিবাহ আসর ত্যাগ করে নজরুল দৌলতপুর থেকে কান্দিরপাড়ে চলে আসেন।

এই ঘটনার প্রায় ৮ মাস পর, নজরুল ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসের শেষে বা নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে আবার কুমিল্লায় আসেন। এই সময় ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের পুত্র 
বীরেন সেনগুপ্তের বাড়িতে উঠেন। উল্লেখ্য, বীরেন সেনগুপ্ত তখন কুমিল্লা জাতীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেনএই সময় আশালতার সাথে নজরুলের পুনরায় দেখা হয়। প্রায় এক মাসের বেশি নজরুল এই বাড়িতে ছিলেন। এর ভিতরে নজরুল ও আশালতার মধ্যে প্রণয় গড়ে উঠে। বিষয়টি গিরিবালা বুঝতে পেরেছিলেন এবং এই প্রণয়কে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর
মাসে দিকে নজরুল কলকাতার তাঁর ৩/৪ সি তালতলার বাসায় আসেন। এরপর তিনি আবার কুমিল্লায় যান ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে। এবারও তিনি কুমিল্লার কান্দরপাড়ে বীরেন্দ্র সেনগুপ্তের বাড়িতে ওঠেন। এই সময় তিনি প্রায় ৪ মাস কান্দিরপাড়ে ছিলেন।  নজরুল ইসলামের ২৩তম জন্মদিন (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩২৯ বঙ্গাব্দ, মে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ) পালিত হয়েছিল কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে। বিদ্রোহী কবিতার সূত্রে নজরুল অসম্ভব জনপ্রিয়তার লাভ করেছিলেন, তা তিনি কুমিল্লাতে চুটিয়ে উপভোগ করেছেন। স্থানীয় মানুষের কাছে পরম বরণীয় হয়ে উঠেছিলেন। এই সময় বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিয়েছেন কিন্বা গান ও কবিতায় আসর মাতিয়ে রেখেছেন। এর ভিতরে আরও এক দিয়ে নজরুলের জীবন রসে পূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

এই সময়
নজরুলের সাথে আশালতার ঘনিষ্টতা বৃদ্ধির সূত্র বিষয়টি প্রণয়ের পর্যয়ে চলে যায়। প্রথম দিকে সকলের কাছে স্বাভাবিকই মেলামেশা মনে হয়েছিল। কিন্তু যখন এঁদের কাছে এই মেলমেশাকে প্রণয়ের সম্পরক হিসেবে ভাবতে শুরু করলেন, তখন শুরু হলো গুঞ্জন। নজরুল ও আশালতার আচরণ সে ভাবনাকে অনেকটা উসকে দিয়েছিল। ধীরে ধীরে ঘটনাটি কান্দিরপাড়ের স্থানীয় মানুষের কাছে এট একটি প্রাত্যহিক আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। বিষয়টি রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ সহজভাবে মেনে নিতে পারলেন না। তাঁদের বাদ-প্রতিবাদে অচিরেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নজরুল-বিদ্বেষী উঠেছিল। ফলে তাঁর পক্ষে কুমিল্লায় থাকাটাই মুসকিল হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থার ভিতর দিয়ে তাঁর পক্ষে কুমিল্লায় থাকাটা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থায় তিনি জুন মাসের শেষের দিকে নজরুল কুমিল্লা থেকে কলকাতায় চলে আসেন। তবে তাঁর কলকাতায় প্রত্যাবর্তনের সঠিক তারিখ জানা যায় না। তবে ২৬ জুন (১২ আষাঢ়), কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের স্টুডেন্টস হলে, সদ্য-প্রয়াত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের স্মরণসভায় নজরুল উপস্থিত ছিলেন। তাই ধারণা করা যায়, নজরুল কলকাতায় ফিরেছিলেন ২৫শে জুনে বা তার আগে। অন্যদিকে কুমিল্লার ্থানীয় লোকদের সমালোচনার মুখে, আশালতার মা গিরিবালা কুমিল্লার কান্দিরপাড় থেকে সমস্তিপুরে তাঁর পিতার বাড়িতে চলে যান।

এই বছরে নজরুল সম্পাদিত 'ধূমকেতু' প্রকাশিত হয়। ব্রিটিশ বিরোধী রচনা প্রকাশের জন্য, পত্রিকা বাজেয়াপ্ত হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। নজরুল গ্রেফতার এড়ানোর জন্য সমস্তিপুরে এসের গিরিবালার আশ্রয়ে এসে উঠেছিলেন। ২২শে নভেম্বর (বুধবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৩২৯) নজরুল বিহারের সমস্তিপুর থেকে গিরিবালা দেবী ও আশালতা দেবীকে নিয়ে নজরুল কুমিল্লার পথে রওনা দেন। পথে বেলুরে  এক বন্ধুর বাড়িতে দু'দিন ছিলেন। এখানে তিনি আর্য পাবলিশিং হাউসের শরচ্চন্দ্র গুহের কাছ থেকে কিছু টাকা পান। এরপর তিনি গিরিবালা দেবী ও আশালতা দেবীকে নিয়ে কুমিল্লা চলে যান। ২৩শে নভেম্বর (বৃ্হস্পতিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৩২৯) বেলা ১২টার সময় নজরুলকে পুলিশ ইন্ডিয়ান পেনালকোড ১২৪-ক ধারায় কুমিল্লা থেকে গ্রেফ্তার করে।

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের
১৬ই জানুয়ারি (মঙ্গলবার ২রা মাঘ ১৩২৯) নজরলকে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। হুগলি জেলে থাকাকালে জেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থা, অপমানমূলক আচরণ  ও নির্যাতনের পরিমাণ এতটাই তীব্রতর হয়ে উঠেছিল যে, শেষ পর্যন্ত নজরুল ১৫ই এপ্রিল (রবিবার, ২ রা বৈশাখ ১৩৩০) থেকে নজরুল-সহ মোট ২১জন রাজবন্দী অনশন শুরু করেন। এর ফলে তিনি প্রায় মরণাপন্ন দশায় চলে যান। পরে ১০ জ্যৈষ্ঠ (২৩শে মে) বিরজাসুন্দরী দেবী এসে নজরুলের অনশন ভঙ্গ করিয়েছিলেন।  ১৫ই ডিসেম্বর (শনিবার ২৯ অগ্রহায়ণ ১৩৩০ বঙ্গাব্দ), কারাবিধি অনুসারে নজরুল এক মাসের রেয়াত লাভ করেছিলেন। সেই সূত্রে নজরুল মুক্তি লাভ করেন।

বহরমপুরে দুদিন নজরুল কাটান নলিনাক্ষ সান্যালের বাড়িতে। তাঁর প্রেয়সী আশালতার দীর্ঘ-অদর্শনে ব্যাকুল হয়ে উঠেন। এই সময় আশালতার এবং তাঁর মা গিরিবালা কুমিল্লায় ছিলেন। তাই তিনি ১৮ই ডিসেম্বর (মঙ্গলবার, ২ পৌষ ১৩৩০) বহরমপুর থেকে কুমিল্লায় আসেন। আশালতার সাথে নজরুলের প্রণয়ের বিষয়টি তখন কুমিল্লায় আবার সরব হয়ে উঠে। ফলে নজরুল এবং আশালতা, গিরিবালা এবং পরিবারের অন্যান্যরা বেশ অস্বস্তিতে  পড়ে যান। এছাড়া কারাবিধি ভঙ্গের মামলায় ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জানুয়ারি (বুধবার, ২৪ পৌষ ১৩৩০) পুনরায় আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল। তাই তিনি সত্বর কলকাতায় ফিরে এসেছিলেন এর কিছু পরে আশালতা গিরিবালা সমস্তিপুরে ফিরে গিয়েছিলেন।

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষার্ধে বা মার্চ মাসের প্রথমার্ধের ভিতরে নজরুল খুব স্বল্ব সময়ের জন্য সমস্তিপরে
আশালতা, গিরিবালার সাথে দেখা করার জন্য গিয়েছিলেন। পথে রেল গাড়িতে তিনি রচনা করেন একটি কবিতা। এটি হলো-

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসের শুরুতেই গিরিবালার সম্মতিতে নজরুল ও আশালতার বিবাহের বিষয়টি নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। এই বিষয়টি কোনো কোনো পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছিল। বিষয়টি অনুমান করা যায়- ছোলতান পত্রিকার '১১ই এপ্রিল ১৯২৪' সংখ্যায় প্রকাশিত একটি একটি সংবাদ থেকে। জনৈক কমরুজ্জামান এই সংবাদটি যেভাবে লিখেছিলেন, তা হল-

'সংবাদপত্র পাঠে জানিতে পারিলাম যে, বাঙ্গালার নবযুগের তরুণ কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছাহেবের সহিত জনৈক বিদুষী সম্ভ্রান্ত হিন্দু মহিলার শুভ-বিবাহ স্থির হইয়াছে।'

ই সংবাদ থেকে অনুমান করা যায় যে, সংবাদটি কিছু পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৬ এপ্রিল (বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৩৩১) নজরুলের বন্ধু নলিনাক্ষ সান্যালের বিয়ে থেকে একরকম বিতারিত হয়ে, কলকতায় ফিরে আসেন এবং বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সমস্ত আয়োজন শেষে নজরুল সমস্তিপুরে যান এবং  গিরিবালা দেবী ও আশালতা'কে সাথে নিয়ে কলকতার অদূরে বালীগ্রামে, ড, অবনী চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে থাকা ৬ নম্বর হাজী লেনের একটি বাড়ি ভাড়া করা বাসায় ওঠেন।

এই বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ এপ্রিল (শুক্রবার ১২ বৈশাখ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ), কলকাতার বেনিয়াপুকুরের ৬ নম্বর হাজী লেনের বাড়িতে। এই সময় আশালতার বয়স ছিল ১৬ বৎসর আর নজরুলের বয়স ছিল ২৪ বৎসর। বিয়ের সময় আশালতা ধর্মান্তরিত হন নি, তাই ইসলামী রীতিতে এই বিবাহ হয় নি। মূলত একটি বৈবাহিক চুক্তির মাধ্যমে এই বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। বিবাহের পর, নজরুল আশালতার নাম দেন প্রমীলা। বিবাহের পর তিনি কয়েকদিন বিজলী পত্রিকার অফিসে ছিলেন। এই সময় কলকাতা স্ত্রী ও শাশড়িকে নেয় একটি ভদ্রোচিত বাসার সন্ধান করা শুরু করেন। বিবাহের পর প্রবাসী, ছোলতানের মতো পত্রিকা এই বিবাহের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। এর প্রভাব পড়েছিল নজরুলের বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে যদিও কবি হিসেবে নজরুলের জনপ্রিয়তা হিন্দু-মুসলমান সমাজে ছিল। সে সময় অধিকাংশ বাড়ির মালিক ছিলেন হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। ফলে এই বিবাহের পর হিন্দু বাড়িওয়ালারা তাঁর কাছে বাসাভাড়া দিতে রাজি হন নি। শেষ পর্যন্ত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে নজরুল কলকাতা ছেড়ে হুগলীতে কংগ্রেসে-কর্মী খগেন ঘোষের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিলেন। এই সময় গিরিবালা এঁদের সাথে ছিলেন। হুগলীতে গিয়েও নজরুলের এই বিড়ম্বনা কাটে নি। এ প্রসঙ্গে নাসিরউদ্দীন তাঁর 'সওগাত যুগে নজরুল ইসলাম' গ্রন্থে [পৃষ্ঠা: ৫৭-৫৮] লিখেছেন-

'...হুগলীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা নজরুলকে বাড়ি ভাড়া দিতে অসম্মত হয়। তখন একজন বিপ্লবী দেশসেবক নজরুল পরিবারকে হামুদুন্নবী নামক এক মোক্তারের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।...'

এই সময় প্রমীলা একটু-আধটু লেখালেখি শুরু করেছিলেন। দ্বিমাসিক সাম্যবাদী পত্রিকার বৈশাখ ১৩৩২ (এপ্রিল-মে ১৯২৫) সংখ্যায় প্রমীলার একটি কবিতা ছাপা হয়েছিল। কবিতাটির নাম ছিল 'শঙ্কিতা'। এই কবিতাটি দ্বিতীয় বার প্রকাশিত হয়েছিল সওগাতের মহিলা সংখ্যায়। এরপর দ্বিমাসিক সাম্যবাদী পত্রিকার আষাঢ় ১৩৩২ (জুন-জুলাই ১৯২৫) সংখ্যায় আরও একটি কবিতা ছাপা হয়েছিল। কবিতাটির শিরোনাম ছিল-করুণা

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসের শেষের দিকে নজরুল-প্রমীলার প্রথম পুত্রের জন্ম হয়। হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে পুত্রের নাম রেখেছিলেন কৃষ্ণ মহম্মদ। অবশ্য পুত্রের জন্য তিনি আরও একটি ইসলামী নাম রেখেছিল। তাহ হলো আজাদ কামাল।
ডিসেম্বর আজাদ কামালের মৃত্যু হয়।

১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে (রবিবার ১৯ পৌষ ১৩৩২) নজরুল ইসলাম হুগলী থেকে বসবাসের জন্য সপরিবারে কৃষ্ণনগরে চলে আসেন। আগষ্ট মাসে নজরুল কৃষ্ণনগরের গোলাপপট্টির বাসা ছেড়ে চাঁদ সড়ক এলাকার 'গ্রস কটেজ'-এ চলে আসেন। সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ডা আবুল কাসেমের আমন্ত্রণে খুলনায় যান এবং সেখান থেকে তিনি খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, দৌলতপুর, বনগ্রাম প্রভৃতি স্থান ঘুরে কৃষ্ণনগরে ফিরে আসেন ৯ই অক্টোবর (শনিবার ২২ আশ্বিন ১৩৩৩)।  এই দিন তাঁর দ্বিতীয় পুত্র অরিন্দম খালেদের (বুলবুল) জন্ম হয়। নজরুল বাসায় ফিরে তাঁর সন্তানকে দেখতে পান। এই দিনই তিনি মুরলীধর বসুকে পুত্র সন্তান লাভের সংবাদ জানিয়ে একটি চিঠি লেখেন।

'প্রিয় মুরলীদা!

আজ সকালে ৬টায় একটি 'পুত্ররত্ন' প্রসব করেছেন শ্রীমতী গিন্নি। ছেলেটা খুব 'হেলদি' হয়েছে। শ্রীমতীও ভালো। আমি উপস্থিত ছিলাম না। হয়ে যাওয়ার পর এলাম খুলনা হতে। খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, দৌলতপুর, বনগ্রাম প্রভৃতি ঘুরে ফিরলাম আজ।...'

১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই মার্চ (রবিবার ২৯ ফাল্গুন ১৩৩৩) কৃষ্ণনগরে পুত্র বুলবুলের অন্নপ্রাসন হয়।
১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসের শুরুর দিকে নজরুল কণ্ঠের ক্ষত রোগে আক্রান্ত হন। এই কারণে ৬ই মার্চ (মঙ্গলবার, ২৩ ফাল্গুন ১৩৩৪) তিনি সপরিবারে কলকাতায় চলে আসেন এবং ১৫ জেলিয়াটোলা স্ট্রিটের নলিনীকান্ত সরকারের বাড়িতে ওঠেন।
এখানে নানা রকম অসুবিধার কারণে তিনি সওগাত পত্রিকার ১১ ওয়েলসলি স্ট্রিটে অফিসের নিচ তলায় উঠে আসেন। 
এই সময় নজরুলের স্ত্রী প্রমীলা সন্তানসম্ভবা ছিলেন। ১১ ওয়েলসলি স্ট্রিটের বাসায় প্রমীলার অসুবিধা হওয়ায়, তিনি ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে ৮/১ পানবাগান লেনের একটি দোতলা বাসায় ওঠে আসেন।

১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই অক্টোবর (আশ্বিন ১৩৩৬),  ৮/১ পানবাগান লেনের দোতলা বাসায় নজরুলের তৃতীয় সন্তান সব্যসাচী জন্মগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, চৈনিক দার্শনিক সান ইয়াৎ সান-এর নামানুসারে নজরুল এই সন্তানের ডাকনাম রেখেছিলেন সানি।

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মে (বুধবার ২৪ মে ১৯৩০) নজরুল-প্রমীলার দ্বিতীয় সন্তান বুলবুলের বসন্ত রোগে আক্রান্ত মৃত্যু হয়।

১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের  প্রমীলা পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হন। এই বছরের শেষের দিকে তিনি এই রোগে সন্পূর্ণ শয্যাশায়ী হন। এই সময় নজরুল স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেও কোনো লাভ হয়নি। স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহের জন্য নজরুল তার শেষ সম্বল বালিগঞ্জের জমি বিক্রি করে দিয়েছিলেন।

১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে নজরুল নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘকাল ডাক্তাররা তার রোগ ধরতে পারেননি। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ই জুন দীর্ঘ রোগভোগের পর প্রমীলার
ৃত্যু হয়।