ওয়াহিদুল হক

বিি িি, সাংবাদিক, রবীন্দ্রসঙ্গীত গবেষক, সংগঠক। কর্মজীবনে ওয়াহিদুল হক ছিলেন সাংবাদিক। পরবর্তী ৫৪ বছরকাল তিনি সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ষাটের দশকে 'দি অবজারভার'-পত্রিকার শিফট্‌-ইন চার্জ ছিলেন। পরে 'মর্নিং নিউজ' ও 'দ্যা ডেইলি স্টার' পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। এক সময় তিনি 'দ্যা পিপলস্‌' পত্রিকার সম্পাদক। জীবনের শেষ দিকে 'অভয় বাজে হৃদয় মাঝে' ও 'এখনও গেল না আঁধার' শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখেছেন 'দৈনিক জনকণ্ঠ' ও 'দৈনিক ভোরের কাগজ' পত্রিকায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে ১০ বছরেরও বেশী সময় খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।

১৯৩৩ ির, ১৬ মার্চ ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের ভাওয়াল মনোহরিয়া গ্রা পিতার নাম  মাজহারুল হক (এমএলএ, ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি), ওয়া বেগম। শৈশবে তাঁর দাদা মৌলবী মোহম্মদ আলী আদর করে নাম রেখেছিলেন সুরুজ মিয়া। 

ইনি ছিলেন তাঁর ভাই-বোনদের মধ্যে বড়। তাঁর অপর দুই ভাইয়ের নাম ছিল- রেজাউল হক বাচ্চু (সাংবাদিক, প্রয়াত), জিয়াউল হক (প্রকৌশলী), ১৯৭১ খ্রি্টাব্দে পাক বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করেছিলেন। দুই বোনের নাম নীলুফার জীনাতুল হক ও নারগীস চৌধুরী

তাঁর দুই চাচা ছিলেন মারফতি গানের ভক্ত। পারিবারিক ঐতিহ্য সূত্রে তিনি সংগীতে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। পরে নাড়া বেঁধে তালিম নিয়েছিলেন ওস্তাদ তছর আলীর কাছে। এই সময় তিনি রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি আগ্রহের সূত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করেছিলেন

অল্প বয়সে
তিনি তাঁর বাবার সাথে ঢাকায় আসেন। এঁরা প্রথমে থাকতেন চাঁদনীঘাটে, পরে চলে আসেন ঊর্দু রোডে। এখানে ১৪ কক্ষ বিশিষ্ট একটি বাসার ৭টি কক্ষের একটি অংশে এঁরা থাকতেন। এর অপরাংশে থাকতেন বাবু রামেন্দ্র মোহন ও তাঁর পরিবার। এই হিন্দু পরিবারের সাথে ওয়াহিদুল হকদের ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক। শৈশবের সেই সূত্রে তিনি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন সর্বার্থে একজন অসম্প্রাদায়িক মানুষ। রাগ সঙ্গীতের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা ছিল। এই সূত্রে তাঁদের বাসায় ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু বহুবার রাগ সঙ্গীত পরিবেশন করকররছেন। শৈশবের সে সঙ্গীতের প্রভাবও ওয়াহিদুলের হকের উপর পড়েছিল নিঃসন্দেহে।

তিনি আরমানিটোলা গভর্ণমেন্ট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা কলেজে এবং এই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পঞ্চাশের দশকে তাঁর পরিচয় ছিল দক্ষ ফুটবলার ও টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে।

১৯৫২ খ্রিষ্তাব্দে তিনি মাতৃভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এই সময় তিনি হাসান হাফিজুর রহমান, আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন, বাহাউদ্দিন চৌধুরী, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম প্রমুখের সঙ্গে বাংলা ভাষার পক্ষে প্রচারপত্র বিলি করতেন।
 
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও গবেষক সন্‌জিদা খাতুনকে বিবাহ করেন। এই সময় ওয়াহিদুল হক মর্নিং নিউজ পত্রিকায় ৮০ টাকা বেতনে চাকরি করতেন।

১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে  ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে পালিত রবীন্দ্র-জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজকদের মধ্যে প্রধান আয়োজক ছিলেন। রবীন্দ্র-জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠান পালনের পরপরই সংগঠক ও শিল্পীরা সবাই মিলে জয়দেবপুরে গিয়েছিলেন আনন্দ-উৎসব করতে। সেখানেই বিকেলের আসরে মোখলেসুর রহমান (সিধু মিয়া) প্রস্তাব করলেন, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সবাই একমত হলে নতুন সংগঠনের প্রস্তাব গৃহীত হলো। সুফিয়া কামাল সভাপতি ও ফরিদা হাসান সাধারণ সম্পাদক। কমিটিতে আরও ছিলেন মোখলেসুর রহমান, সায়েদুল হাসান, শামসুন্নাহার রহমান,ওয়াহিদুল হক, আহমেদুর রহমান, দেবদাস চক্রবর্তী, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক প্রমুখ। নবগঠিত কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকেই সংগঠনের নাম ঠিক হয়েছিল 'ছায়ানট'।

ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়তন করার প্রথম প্রস্তাব রেখেছেলেন ওয়াহিদুল হক।  সে সময়ে এই প্রস্তাবে অনেকেই অনীহা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ওয়াহিদুল হক সদস্যদের মাসিক চাঁদা দেওয়ার প্রস্তাব রেখে- বলেছিলেন 'কমিটি মেম্বাররা মাসে মাসে চাঁদা দেব। আমি আর মিনু মিলে দেবো সত্তর টাকা। আপনার কে কত দেবেন? তখন মুখ খুলে কেউ বললেন পনেরো, কেউ দশ, কেউ পঁচিশ- এইরকম"।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় 'স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংস্থা'র প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ছায়ানটের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু তিনি এই পদে ছিলেন।


২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে জানুয়ারি বিকাল ৫টায় বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

প্রকাশিত গ্রন্থ

আবৃত্তি ও গানের সিডি

দাম্পত্য জীবন ও সন্তানাদি