মহুয়া নাটক ও মহুয়ার গান

'ময়মনসিংহ গীতিকা‌' অবলম্বনে নাট্যকার মন্মথ রায়ের রচিত ‌‌একটি পঞ্চাঙ্ক নাটক। মনোমোহন থিয়েটারের পরিচালক প্রবোধচন্দ্র গুহের অনুরোধে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা ডিসেম্বর (বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৩৩৬) নাট্যকার এই নাটকটি লেখা শুরু করেন। পক্ষকালের ভিতরে নাটকটি রচনা করে তিনি প্রবোধচন্দ্র গুহের কাছে তা জমা দেন। সম্ভবত নাট্যকার পুরো নাটক শেষ করেছিলেন
৪-১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে। এরপর প্রবোধচন্দ্র নাটকটি মঞ্চস্থ করার জন্য অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচন করে মহড়া শুরু করেন। এবং শেষ পর্যন্ত  ১৯২৯ বঙ্গাব্দের ৩১শে ডিসেম্বর (মঙ্গলবার, ১৬ই পৌষ ১৩৩৬) কলকাতায় মনোমোহন থিয়েটারে নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল।

গ্রন্থাকারে প্রকাশিত নাটকটির 'লেখকের কথা' অংশে নাট্যকার লিখেছেন- 'মহুয়া'র প্রথম সন্ধান পাই পরম শ্রদ্ধাভাজন দীনেশচন্দ্র সেন সঙ্কলিত মৈমনসিংহ গীতিকায়।' এই নাটকের জন্য গান লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে নাট্যকার '‌লেখকের কথা' অংশে লিখেছেন- যাহারা আমার দীনতায় আত্মপ্রকাশেই কুণ্ঠিত ছিল আজ তাহারা সগর্বে পাদপ্রদীপের সম্মুখে তাঁহারই গান গাহিতেছে যাঁহার গানে সারা বাঙলা মত্ত-মাতাল, তাঁহারই পরিকল্পিতরূপে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে, যাঁহার রূপ পরিকল্পনায় সারা দেশ মুগ্ধ। আমার লেখনীর অক্ষমতাকে এমনি করিয়াই সার্থক সুন্দর করিয়াছেন আমার গীত-সুন্দর বন্ধু কবি নজরুল ইসলাম...'।

গ্রন্থাকারে মহুয়া নাটকের প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জানুয়ারি। প্রকাশক: গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স্, ২০৩।১।১, কর্ণওয়ালিস স্ট্রীট, কলিকাতা। মূল্য ১টাকা। গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছিলেন অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়কে। উৎসর্গ পত্রের নিচে তারিখ ও স্থানের উল্লেখ ছিল- ৮ই জানুয়ারি-১৯৩০/"বরদা-ভবন"/বালুর ঘাট, পোষ্ট-টাউন, দিনাজপুর'।

এরপর তিনটি নাটকের সংকলন (কারাগার, মুক্তির ডাক ও মহু্য়) হিসেবে 'মন্মথ রায়ের নাটক' প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর নাটকটি স্থান পেয়েছিল- ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে মন্মথ রায় নাট্যগ্রন্থাবলী চতুর্থ খণ্ডে (মনমথন প্রকাশন। ২২১ সি, বিবেকানন্দ রোড। কলিকাতা -৭০০০০৬। পৃষ্ঠা: ১৭৭-২৫৪। পৃষ্ঠা: ১৭৭-২৫৪)।  মোট ১৪টি গান পাওয়া যায়। এই গানগুলো হলো-

  1. কে দিল খোঁপাতে ধুতুরা ফুল লো [প্রথম অঙ্ক। বেদে বেদেনীর গান] [তথ্য]
  2. বউ কথা কও বউ কথা কও [দ্বিতীয় অঙ্ক। মহুয়ার গান] [তথ্য]
  3. কত খুঁজিলাম নীল কুমুদ তোরে [দ্বিতীয় অঙ্ক। মহুয়ার গান] [তথ্য]
  4. ভরিয়া পরান শুনিতেছি গান [দ্বিতীয় অঙ্ক। মহুয়ার গান]  [তথ্য]
  5. একডালি ফুলে ওরে [দ্বিতীয় অঙ্ক। বেদেনীদের গান] [তথ্য]
  6. মহুল গাছে ফুল ফুটেছে [দ্বিতীয় অঙ্ক। বেদে-বেদেনীদের গান]  [তথ্য]
  7. খোলো খোলো খোলো গো দুয়ার  [তৃতীয় অঙ্ক। পালঙ্কের গান] [তথ্য]
  8. আজি ঘুম নহে, নিশি জাগরণ [তৃতীয় অঙ্ক। বেদেনীদের গান]  [তথ্য]
  9. ও ভাই এ নাও যাত্রী না লয়  [চতুর্থ অঙ্ক। রাধু পাগলের গান]
  10. [তথ্য]
  11. আমার গহীন জলের নদী  [চতুর্থ  অঙ্ক। রাধু পাগলের গান]  [তথ্য]
  12. তোমায় কূলে তুলে বন্ধু আমি নামলাম জলে [চতুর্থ অঙ্ক। রাধু পাগলের গান] [তথ্য]
  13. ফণির ফণায় জ্বলে মণি [চতুর্থ অঙ্ক। মহুয়ার গান] [তথ্য]
  14. মোরা ছিনু একেলা হইনু দুজন [পঞ্চম অঙ্ক। মহুয়ার গান] [তথ্য]
  15. নতুন নেশায় আমার এ মদ [পঞ্চম অঙ্ক। মহুয়ার গান]  [তথ্য]

সূত্র: মন্মথ রায় নাট্যগ্রন্থাবলী চতুর্থ খণ্ড। মনমথন প্রকাশন। ২২১ সি, বিবেকানন্দ রোড। কলিকাতা -৭০০০০৬। ১৯৫৮। পৃষ্ঠা: ১৭৭-২৫৪।

কলকাতা বেতারে মহুয়া নাটক
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার ১ পৌষ ১৩৩৯), 'মহুয়া ' কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত হয়েছিল। এই সম্প্রচার সম্পর্কে বেতার জগৎ-এর  [৪র্থ বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ২২১] 'আমাদের কথা' বিভাগে লেখা হয়েছিল-

'বেতার নাটুকে দল আজ শ্রীযুক্ত মন্মথ রায় মহাশয়ের সুবিখ্যাত নাটক "মহুয়া" অভিনয় করবেন।'

বেতারে প্রচারিত এই নাটকে নজরুলের রচিত কোনো গানের বিষয়ে কিছু লেখা হয় নি। বেতারজগৎ-এর [৪র্থ বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ২২৮] অনুষ্ঠান সূচীতেও নজরুলের নাম পাওয়া যায় না। এই সূচীতে এই নাটকের বিষয়ে যা উল্লেখ করা হয়েছিল, তা হলো-

সম্প্রচার কেন্দ্র: কলকাতা স্টেশন
সম্প্রচারের তারিখ ও সময়: শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৩২। ১ পৌষ ১৩৩৯। সান্ধ্য অনুষ্ঠান। ৭.৩০-১০.৩০ মিনিট
অভিনয়: শ্রীযুক্ত মন্মথ রায় প্রণীত মহুয়া

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রয়ারি মাসে কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে নাটকটি পুনরায় প্রচারিত হয়। এই সম্প্রচার সম্পর্কে বেতার জগৎ-এর  [১১শ বর্ষ, ৩য় সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ১১৫] 'আমাদের কথা' বিভাগে লেখা হয়েছিল-

"মহুয়া"
   "মহুয়া" নাটকখানি সুপ্রসিদ্ধ নাট্যকার মন্মথ রায়ের মহাশয়ের রচনা। গানগুলি লিখেছেন এবং তাতে সুরযোজনা করেছেন কবি  নজরুল ইস্‌লাম। এই নাটকখানি সঙ্গীতে ও সংলাপে আনন্দ-মুখর হ.য়ে উঠ্‌বে ৯ই ফেব্রুয়ারী শুক্রবার সন্ধ্যায়। অভিনয় করবেন- এ, আই, আর প্লেয়ার্স। অহীন্দ্র চৌধুরী, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, সরযুবালা প্রভৃতি অভিনতৃবৃন্দ বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন।

বাংলা একাডেমী, ঢাকা থেকে প্রকাশিত নজরুল-রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ডের (নতুন সংস্করণ ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪০০/২৫ মে ১৯৯৩) ৮৮৩ পৃষ্ঠায় প্রদেয় গ্রন্থপরিচয় অধ্যায়ে উল্লেখ আছে-

‌'নজরুল-রচনাবলীর নতুন সংস্করণে মহুয়ার গান সংযোজিত হলো। ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি এ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। গ্রন্থের প্রকাশক গোপালদাস মজুমদার, ডি, এম, লাইব্রেরি, ৬১ কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট, কলিকাতা। মুদ্রাকর কৃষ্ণপ্রসাদ ঘোষ, প্রকাশ প্রেস, ৬৬ মানিক-তলা স্ট্রিট, কলিকাতা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৩ এবং মূল্য দুই আনা।

মহুয়ার গান মন্মথ রায়ের মহুয়া নাটকের জন্য রচিত গানের সঙ্কলন। মহুয়া নাটক ১৯২৯ বা তার পূর্বে কোনো এক সময়ে প্রথম মঞ্চস্থ হয়। নাটকটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৩৯ সালে।

গীতিগ্রন্থ মহুয়ার গানে ১৫টি গান ছিল। তার মধ্যে ১৪ সংখ্যক গান (আমার গহীন জলের নদী) এবং ১৫ সংখ্যক গান (তোমায় কূলে তুলে বন্ধু আমি নামলাম জলে) চোখের চাতক (অগ্রহায়ণ ১৩৩৬) গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এখানে পরিবর্জিত হলো। মূল গ্রন্থের ১৩ সংখ্যাক গানটিও (ও ভাই আমার এ নাও যাত্রী না লয়) চোখের চাতক গ্রন্থে মুদ্রিত হয়, কিন্তু মহুয়ার গানে পাঠভেদ থাকায় গানটি এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। 

বাংলা একাডেমী, ঢাকা থেকে প্রকাশিত নজরুল-রচনাবলী অষ্টম খণ্ডে মহুয়া নাটকে ব্যবহৃত যে গানগুলো পাওয়া যায়, তা হলো-

  1. কে দিল খোঁপাতে ধুতুরা ফুল লো [প্রথম অঙ্ক। বেদে বেদেনীর গান] [তথ্য]
  2. একডালি ফুলে ওরে [দ্বিতীয় অঙ্ক। বেদেনীদের গান] [তথ্য]
  3. বউ কথা কও বউ কথা কও [দ্বিতীয় অঙ্ক। মহুয়ার গান] [তথ্য]
  4. কত খুঁজিলাম নীল কুমুদ তোরে [দ্বিতীয় অঙ্ক। মহুয়ার গান] [তথ্য]
  5. কোথা চাঁদ আমার  [তথ্য]
  6. ফণির ফণায় জ্বলে মণি [চতুর্থ অঙ্ক। মহুয়ার গান] [তথ্য]
  7. মহুল গাছে ফুল ফুটেছে [দ্বিতীয় অঙ্ক। বেদে-বেদেনীদের গান]  [তথ্য]
  8. আজি ঘুম নহে, নিশি জাগরণ [তৃতীয় অঙ্ক। বেদেনীদের গান]  [তথ্য]
  9. খোলো খোলো খোলো গো দুয়ার  [তৃতীয় অঙ্ক। পালঙ্কের গান] [তথ্য]
  10. ভরিয়া পরান শুনিতেছি গান [দ্বিতীয় অঙ্ক। মহুয়ার গান]  [তথ্য]
  11. নতুন নেশায় আমার এ মদ [পঞ্চম অঙ্ক। মহুয়ার গান]  [তথ্য]
  12. মোরা ছিনু একেলা হইনু দুজন [পঞ্চম অঙ্ক। মহুয়ার গান] [তথ্য]
  13. ও ভাই এ নাও যাত্রী না লয়  [চতুর্থ অঙ্ক। রাধু পাগলের গান]
  14. [তথ্য]
  15. আমার গহীন জলের নদী [চতুর্থ  অঙ্ক। রাধু পাগলের গান]  [তথ্য]