বিষের বাঁশী
কাজী নজরুল ইসলাম

                    শিকল-পরার গান

 এই    শিকল পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল।
    এই    শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল॥

তোদের    বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয়,
    ওরে    ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন-ভয়।
     এই    বাঁধন প'রেই বাঁধন-ভয়কে কর্‌ব মোরা জয়,
     এই    শিকল-বাঁধা পা নয় এ শিকল ভাঙা কল॥

তোমার    বন্ধ ঘরের বন্ধনীতে কর্‌ছ বিশ্ব গ্রাস,
    আর    ভয় দেখিয়েই ক'র্‌বে ভাবছ বিধির শক্তি হ্রাস
    সেই    ভয়-দেখানো ভূতের মোরা ক'র্‌বো সর্বনাশ,
  এবার    আন্‌বো মাভৈঃ বিজয়-মন্ত্র বল-হীনের বল॥

তোমরা    ভয় দেখিয়ে কর্‌ছ শাসন জয় দেখিয়ে নয়;
    সেই    ভয়ের টুঁটি ধর্‌ব টিপে কর্‌ব তারে লয়।
   মোরা    আপনি ম'রে মরার দেশে আন্‌ব বরাভয়,
   প'রে    ফাঁসি আন্‌ব হাসি মৃত্যু-জয়ের ফল॥

    ওরে    ক্রন্দন নয় বন্ধন এই শিকল-ঝঞ্ঝনা,
  এ যে    মুক্তি-পথের অগ্রদূতের চরণ-বন্দনা!
    এই    লাঞ্ছিতেরাই অত্যাচারকে হান্‌ছে লাঞ্ছনা,
মোদের    অশ্রু দিয়েই জ্ব'লবে দেশে আবার বজ্রানল॥

রচনাকাল: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। "ব্রহ্মমোহন ঠাকুর" -সম্পাদিত  নজরুল-সঙ্গীত, আদি স্বরলিপি সংগ্রহ' [নজরুল ইনস্টিটিউট, আশ্বিন ১৪০৬অক্টোবর ১৯৯৯)। পৃষ্ঠা: ৯-১০।] থেকে জানা যায়- "১৯২৩ সালে হুগলী জেলে থাকাকালীন রচিত এই গানটির স্বরলিপি কবি স্বয়ং করেছিলেন। পরবর্তীকালে প্রকাশিত অন্য স্বরলিপিকারের সুরে ঈষৎ পার্থক্য রয়েছে। কবিকৃত এই স্বরলিপিটির মূল্য ঐতিহাসিক।"

উল্লেখ্য, হুগলি জেলে থাকা অবস্থায় নজরুল জেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থা, অপমানমূলক আচরণ  ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এই কারণে ১৫ই এপ্রিল থেকে নজরুল মোট ২১জন রাজবন্দীদের নিয়ে অনশন শুরু করেন। ২৩শে মে তিনি বিরজাসুন্দরীর দেওয়া লেবুর সরবত পান করে অনশন ভঙ্গ করেন। এরপর হুগলি জেল কর্তৃপক্ষ নজরুলের প্রতি সদয় আচরণ করেন। ১৮ই জন তাঁকে বহরমপুর জেলে স্থানান্তর করা হয়। 

এই গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তারিখে সম্পর্কে কিছু জানা যায় নি। "ব্রহ্মমোহন ঠাকুর" -সম্পাদিত  নজরুল-সঙ্গীত, আদি স্বরলিপি সংগ্রহ' [নজরুল ইনস্টিটিউট, আশ্বিন ১৪০৬অক্টোবর ১৯৯৯)। পৃষ্ঠা: ৯-১০।] থেকে জানা যায়- "১৯২৩ সালে হুগলী জেলে থাকর সময়ে রচিত এই গানটির স্বরলিপি কবি স্বয়ং করেছিলেন। পরবর্তীকালে প্রকাশিত অন্য স্বরলিপিকারের সুরে ঈষৎ পার্থক্য রয়েছে। কবিকৃত এই স্বরলিপিটির মূল্য ঐতিহাসিক।"

এই স্বরলিপিটি প্রকাশিত হয়েছিল ভারতী পত্রিকার [৪৮শ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা। জ্যৈষ্ঠ ১৩৩১ (মে-জুন ১৯২৪)। পত্রিকায় বাণী অংশ মুদ্রিত হয়েছিল  'শিকলপরা' শিরোনামে [পৃষ্ঠা: ১৪৩]। পত্রিকার ১৪৩ পৃষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথের 'আমার মন চেয়ে রয় মনে মনে' গানটির দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর-কৃত স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছিল। এরপরে ১৪৫ পৃষ্ঠায় নজরুলের রচিত এই গানটির স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছিল। স্বরলিপির শুরুতে উল্লেখ আছে 'কথা, সুর ও স্বরলিপি:-নজরুল ইসলাম।' রাগ ও তালের উল্লেখ আছে 'খাম্বাজ- দাদরা'।

গানটি বিষের বাঁশি  প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ] 'শিকল-পরার গান' শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।