বিষের বাঁশী
কাজী নজরুল ইসলাম

                    'তূয-নিনাদ'
                      [গান]

কোরাস্:     (আজ) ভারত-ভাগ্য-বিধাতার বুকে গুরু-লাঞ্ছনা-পাষাণ-ভার,
                আর্ত-নিনাদে হাঁকিছে নকীব, -কে করে মুশকিল্ আসান তার?

                            মন্দির আজি বন্দীর ঘানি,
                নির্জিত ভীত সত্য, বন্ধ রুদ্ধ স্বাধীন আত্মার বাণী,
                সন্ধি-মহলে ফন্দীর ফাঁদ, গভীর আন্ধি-অন্ধকার!
                হাঁকিছে নকীব, - হে মহারুদ্র, চূর্ণ কর এ ভণ্ডাগার॥

                           
রক্ত-মদের বিষপান করি'
                আর্তমানব; স্রষ্টা কাতর সৃষ্টির তাঁর নির্বাণ স্মরি'!
                ক্রন্দন-ঘন বিশ্বে স্বনিছে প্রলয়-ঘটার হুহুঙ্কার,-
                হাঁকিছে নকীব, - অভয়-দেবতা, এ মহাপাথার করহ পার॥  

                            কোলাহল-ঘাঁটা হলাহল-রাশি
                কে নীলকণ্ঠ গ্রাসিবে রে আজ দেবতার মাঝে দেবতা সে আসি?
                উরিবে কখন ইন্দিরা, ক্রোড়ে শান্তির ঝারি সুধার ভাঁড়?
                হাঁকিছে নকীব, - আন ব্যথা-ক্লেশ-মন্থন-ধন অমৃত-ধার॥

                       
কণ্ঠ-ক্লিষ্ট ক্রন্দন-ঘাতে
                অমৃত-অধিপ নর-নারায়ণ দারুময় ঘন মনো-বেদনাতে।
                দশভুজে গলে শৃঙ্খল-ভার দশপ্রহরণ ধারিণী মা'-
                হাঁকিছে নকীব, - 'আবিরাবির্ম এধি' হে নব যুগাবতার!

                           
মৃত্যু-আহত মৃত্যুঞ্জয়,
                কে শোনাবে তাঁরে চেতন-মন্ত্র? কে গাহিবে জয় জীবনের জয়?
                নয়নের নীরে কে ডুবাবে বল বল-দর্পীর অহঙ্কার?-
                হাঁকিছে নকীব, - সেদিন বিশ্বে খুলিবে আরেক তোরণ দ্বার॥


রচনা ও প্রকাশকাল:
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসের পুরো সময়টা নজরুল কুমিল্লায় কাটান। এই সময় তিনি তৎকালীন ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন এবং তা গান, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যদির মাধ্যমে প্রচার করে চলেছিলেন। এই সূত্রে তিনি রচনা করেছিলেন এই গানটি। গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মাসিক বসুমতী পত্রিকার বৈশাখ ১৩২৯ (এপ্রিল-মে ১৯২২) সংখ্যায়। [পৃষ্ঠা: ১১০] এরপর ' বিষের বাঁশী প্রথম সংস্করণে (শ্রাবণ ১৩৩১ বঙ্গাব্দ। আগষ্ট ১৯২৪) গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ' তূর্য-নিনাদ '  শিরোনামে।