ছায়ানট
কাজী নজরুল ইসলাম


                      স্নেহ-ভীতু

ওরে         এ কোন্ স্নেহ-সুরধুনী নামল আমার সাহারায়?
               বক্ষে কাঁদার বান ডেকেছে, আজ হিয়া কূল না হারায়!
                            ণ্ঠে চেপে শুষ্ক তৃষা
                            মরুর সে পথ তপ্ত সিসা,
               চলতে একা পাইনি দিশা ভাই;
                বন্ধ নিশাস- একটু বাতাস!
                                    এক ফোঁটা জল জহর-মিশা!-
                            মিথ্যা আশা, নাই সে নিশানাই!
                            হঠাৎ ও কার ছায়ার মায়া রে? -
যেন         ডাক-নামে আজ গাল-ভরা ডাক ডাকছে কে ওই মা-হারায়!

              লক্ষ যুগের বক্ষ-ছাপা তুহিন হয়ে যে ব্যথা আর কথা ছিল ঘুমা,
                            কে সে ব্যথায় বুলায় পরশ রে?
ওরে         গলায় তুহিন কাহার কিরণতপ্ত সোহাগ-চুমা?
                            ওরে ও ভূত, লক্ষ্মীছাড়া,
                            হতভাগা, বাঁধনহারা।
               কোথায় ছুটিস! একটু দাঁড়া, হায়!
                            ঐ তো তোরে ডাকচে স্নেহ,
                            হাতছানি দেয় ওই তো গেহ-
                কাঁদিস কেন পাগল-পারা তায়?
এত           ডুকরে কিসের তিক্ত কাঁদন তোর?
                অভিমানি! মুখ ফেরা দেখ যা পেয়েচিস তাও হারায়!
হায়,          বুঝবে কে যে স্নেহের ছোঁয়ায় আমার বাণী রা হারায়।

দেওঘর
পৌষ ১৩২৭

গানটি মোহিনী সেনগুপ্তা-কৃত স্বরলিপি-সহ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল  ' মোসলেম ভারত' পত্রিকার ফাল্গুন ১৩২৭ (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৯২১) সংখ্যায়। পরে ছায়ানট -এর প্রথম সংস্করণে (১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ, আশ্বিন ১৩৩২) এবং পূবের হাওয়াৱ প্রথম সংস্করণে (১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ, ১৩৩২ বঙ্গাব্দ) অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।