ফণিমনসা
কাজী নজরুল ইসলাম


                            সত্যেন্দ্র-প্রয়াণ-গীতি

চল-চঞ্চল বাণীর দুলাল এসেছিল পথ ভুলে,
ওগো এই গঙ্গার কূলে।
দিশাহারা মাতা দিশা পেয়ে তাই নিয়ে গেছে কোলে তুলে
ওগো এই গঙ্গার কূলে।।
চপল চারণ বেণু-বীণে তা’র
সুর বেঁধে শুধু দিল ঝঙ্কার,
শেষ গান গাওয়া হ’ল না ক’ আর,
উঠিল চিত্ত দুলে,
তারি ডাক-নাম ধ’রে ডাকিল কে যেন অস্ত-তোরণ-মূলে,
ওগো এই গঙ্গার কূলে।।

ওরে এ ঝোড়ো হাওয়ায় কারে ডেকে যায় এ কোন সর্বনাশী
বিষাণ কবির গুমরি’ উঠিল, বেসুরো বাজিল বাঁশী।
আঁখির সলিলে ঝলসানো আঁখি
কূলে কূলে ভ’রে ওঠে থাকি’ থাকি’,
মনে পড়ে কবে আহত এ-পাখী
মৃত্যু-আফিম-ফুলে,
কোন ঝড়-বাদলের এমনি নিশীথে প’ড়েছিল ঘুমে ঢুলে।
ওগো এই গঙ্গার কুলে।।

তার ঘরের বাঁধন সহিল না সে যে চির বন্ধন-হারা,
তাই ছন্দ-পাগলে কোলে নিয়ে দোলে জননী মুক্তধারা!
ও সে আলো দিয়ে গেল আপনারে দহি’,
অমৃত বিলালো বিষ-জ্বালা সহি’,
শেষে শান্তি মাগিল ব্যথা-বিদ্রোহী
চিতার অগ্নি-শূলে!
পুনঃ নব-বীনা-করে আসিবে বলিয়া এই শ্যাম তরুমূলে
ওগো এই গঙ্গার কূলে

১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুন (সোমবার ১২ আষাঢ় ১৩২৯ বঙ্গাব্দ) কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের স্টুডেন্টস হলে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের স্মরণে শোকসভার আয়োজন করা হয়। ওই সভার সভাপতিত্ব করেছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। শোকসভায় নজরুল সদ্য রচিত এই গানটি পরিবেশন করেছিলেন। গানটি বিজলী পত্রিকার 'শ্রাবণ ১৩২৯' (জুলাই-আগষ্ট ১৯২২) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। তখন এর শিরোনাম ছিল-'সত্যেন্দ্র-প্রয়াণ'। মাসিক বসুমতী পত্রিকা'র 'শ্রাবণ ১৩২৯' সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। শিরোনাম '."সত্য"-প্রয়াণ-গীতি'। শিরোনামের নিচে ছিল '(বাউলের সুর)। পৃষ্ঠা: ৫৩৮। ফণি-মনসা প্রথম সংস্করণ [শ্রাবণ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই ১৯২৭) শিরোনাম: সত্যেন্দ্র-প্রয়াণ-গীতি']