বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: গাহ নাম অবিরাম কৃষ্ণনাম কৃষ্ণনাম
গাহ নাম অবিরাম কৃষ্ণনাম কৃষ্ণনাম।
মহাকাল যে নামের করে প্রাণায়াম॥
যে নামের গুনে কংস কারার খোলে দ্বার।
বসুদেব যে নামে যমুনা হ'ল পার।
যে নাম মায়ায় হল তীর্থ ব্রজধাম॥
দেবকীর বুকের পাষাণ গলে,
যে নাম দোলে যশোদার কোলে।
যে নাম ল'য়ে কাঁদে রাই রসময়ী,
কুরুক্ষেত্রে যে নামে হল পাণ্ডব জয়ী।
গোলকে নারায়ণ, ভূলোকে রাধাশ্যাম॥
- ভাবসন্ধান: এই গানে কৃষ্ণের নামজপের সূত্রে তাঁর মহিমা উপস্থাপন করা
হয়েছে- তাঁর জন্মলগ্ন থেকে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ পর্যন্ত। এসবের মধ্য দিয়ে গানটি
নামজপের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে, তাঁর মহিমার বন্দনা।
এই গানর শুরুতে অবিরত কৃষ্ণনাম জপ করার জন্য-
কৃষ্ণভক্তদের আহ্বান করা হয়েছে। কারণ এই সেই নাম, যাকে মহাকালও প্রাণায়াম করে। সাধারণ
অর্থে-প্রাণায়াম হলো ধ্যানযোগে জীবনীশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রক্রিয়া। এই গানের
প্রাণায়াম হলো- ধ্যানস্থ দশায় ভক্তিঅর্ঘ প্রদান।
রাজা কংস শিশু কৃষ্ণকে হত্যার করার জন্য, তাঁর মা দেবকীকে কারাগারে বন্দী করে
রেখেছিল। জন্মের পরপরই তাঁর পিতা বসুদেব কংসের ভয়ে এই শিশুটিকে ব্রজধামে নন্দের
বাড়িতে রেখে আসেন। কবি মনে করেন রুদ্ধ কারাগার খুলে শিশু কৃষ্ণ অবমুক্ত হতে
পেরেছিলেন তাঁরই নামের গুণে। এমন কি ঝড়-ঝঞ্ছার রাতে যমুনা পার বসুদেব ব্রজধামে
নন্দের বাড়িতে পৌঁছাতে পেরেছিলেন তাঁরই নামের গুণে। পরবরতী সময়ে এই নামের গুণেই
সাধারণ অখ্যাত ব্রজধাম হয়ে উঠেছে- তীর্থ-ব্রজধাম।
কংসকে হত্যা করার জন্য কৃষ্ণের জন্ম হবে, এমন সংবাদ পেয়ে কংস দেবকীর সকল
সন্তানদের হত্যা করা শুরু করেছিল। সন্তান হত্যার বেদনায় এবং আশঙ্কায় দেবকীর
হৃদয় পাষাণের মত ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল। কৃষ্ণের জন্মের কারণে, পাষাণসম দুঃখ ও
ভয় দুরীভূত হয়েছিল।
বৃন্দাবনে শিশু কৃষ্ণ যশোদার কোলে মাতৃস্নেহে দুলেছেন। আর কৈশোরে যাঁকে পাওয়া
না পাওয়ার দুরাশায় ব্যথিত হয়েছে রসময়ী রাধা। কুরুক্ষেত্রে কৌরবদের বিরুদ্ধে
পাণ্ডবরা জয়ী হয়েছিল কৃষ্ণেরই কল্যাণে।
ভণিতার মতো করে কবি এই গানের উপসংহার টেনেছেন- নামজপের মহিমা নিয়ে সংশয় দূরীকরণে।
কবির শেষ এবং পরমযুক্তি- পরম রক্ষাকরতা বিষ্ণু নারায়ণ তাঁর গোলকধামে। আর
পৃথিবীতে তিনি রাধাশ্যাম রূপে বিরাজ করেন।
- রচনাকাল ও স্থান:
গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ ১৩৪২) মাসে,
এইচএমভি
রেকর্ড কোম্পানি এই গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করেছিল।
এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৬
বৎসর ৫ মাস।
-
গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১২৫৪ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা:
৩৮১।
-
নজরুলের হারানো গানের খাতা [নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা। আষাঢ় ১৪০৪/জুন ১৯৯৭।
গান সংখ্যা ১০১।
for Kamal Gupta (HMV)
। ভজনা। পৃষ্ঠা:
১২৮।]
রেকর্ড:
- এইচএমভি [নভেম্বর ১৯৩৫
(কার্তিক-অগ্রহায়ণ
১৩৪২)। এন ৭৪৩৪। শিল্পী: কমল দাশগুপ্ত]
- রেকর্ড কোম্পানির সাথে চুক্তি। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর (শনিবার
৫ পৌষ ১৩৪২)।
স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
আহসান মুর্শেদ
[নজরুল
সঙ্গীত স্বরলিপি সাতচল্লিশতম খণ্ড। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। ফাল্গুন ১৪২৫/ফেব্রুয়ারি
২০১৯] পৃষ্ঠা: ৪৩-৪৪। [নমুনা]
পর্যায়
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম, বৈষ্ণব। কৃষ্ণ।
নামবন্দনা
- সুরাঙ্গ: ভজন
- তাল:
কাহারবা
- গ্রহস্বর: ণ্