বিরূপ আঁখির কি রূপই তুই আঁকলি হৃদয় পটে,
চাঁদের পাশে আগুন জ্বলে যাহার ললাট তটে॥
সে সোনার অঙ্গে ভস্ম মাখিয়ে
বেড়িয়ে বেড়ায় সাপ নাচিয়ে;
এই ভবঘুরে বেদে নিয়ে তোর কলঙ্ক না রটে॥
ঘটে ইহার বুদ্ধি হতে সিদ্ধি অনেক বেশি,
বিষ খেয়ে এর প্রশান্ত মুখ লীলা এ কোন্ দেশী,
আপনারে যে করে হেলা
তার সনে তোর একি খেলা,
তুই দেখলি কোথায় আত্মভোলা এই সে তরুণ নটে॥
"...অতি বড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ
কোন গুণ নাহি তার কপালে আগুন॥
কুকথায় পঞ্চমুখ কণ্ঠে ভরা বিষ।
কেবল আমার সঙ্গে দ্বন্দ্ব অহর্নিশ॥
গঙ্গা নামে সতা তার তরঙ্গ এমনি।
জীবনস্বরূপা সে স্বামীর শিরোমনি॥
ভূত নাচাইয়া পতি ফেরে ঘরে ঘরে।
না মরে পাষান বাপ দিলা এমন বরে॥
বিজয়া
মহাদেবের
রূপ বর্ণনার শুরুতেই বিস্ময় বা কতুহলে, সতীর কাছে প্রশ্ন রেখেছেন- যে
দৃষ্টিনন্দন নয়, তাকে কি করে তার ছবি হৃদয় পটে আঁকলো সে। সন্ধ্যাভাষায় বিজয়া
বলেন- 'চাঁদের পাশে আগুন যাহার জ্বলে ললাট তটে'। মূল অর্থ মহাদেবের মস্তকে থাকে
চন্দ্র আর তারই পাশে থাকে তাঁর বহ্নিময় তৃতীয় চোখ থাকে কপালে।
মহদেবের অঙ্গরূপকে বলা হয়েছে সোনার অঙ্গ। সে অঙ্গে থাকে শ্মশানের ছাই
ভস্ম। ভবঘুরে বেদেদের মতো তার কণ্ঠ বেষ্টন করে থাকে সাপ। এর সাথে জড়িয়ে
পড়লে কলঙ্ক ছাড়া সতীর আর কিছু জুটবে না, বিজয়ার এমনই ভাবনা। বিজয়া মনে করেন
মহাদেবের মাথায় বুদ্ধির চেয়ে সিদ্ধি বেশি। এখানে সিদ্ধি শব্দটি দ্ব্যর্থক।
সিদ্ধ হতে পারে মাদকদ্রব্য, হতে পারে সাধনায় সিদ্ধি লাভ অর্থে।
বিজয়া বিস্মিত- বিষপান করেও কিভাবে এঁর মুখ প্রশান্ত অথচ লীলামায় রূপে অবিচল
থাকে। উল্লেখ্য, এখানে পৌরাণিক কাহিনিতে বর্ণিত সমুদ্রমন্থন শেষে হলাহল নামক
তীব্র বিষ পান করার পরও যিনি প্রশান্ত ছিলেন, সেই মহদেবের বিস্ময়কর রূপের কথা
বলা হয়েছে।
গানের শেষে বিজয়ার আক্ষেপ- যে নিজেকে অবহেলা করে, সে কী করে সতীর যত্ন নেবে!?
বিজয়ার বিস্ময়- এমন ছন্নছাড়ার সাথে সতীর এ কী প্রেমের খেলা! কোথায়্ এই
আত্মভোলাকে তরুণ নটের (নায়ক) সাক্ষাৎ হলো সতীর সাথে- এটাও তাঁর কাছে বিস্মিত
প্রশ্ন।