বিষয়:
নজরুল
সঙ্গীত।
গান সংখ্যা : ১৬৭৭.
শিরোনাম
:
মুকুর ল'য়ে কে গো বসি'
পাঠ ও পাঠভেদ:
১৬৭৭.
রাগ: মূলতানী, তাল: ত্রিতাল
মুকুর ল'য়ে কে গো বসি'
হেরিছে আপন ম্লান-মুখ-শশী॥
সখিরা ডাকে বেলা ব'য়ে যায়
দোপাটির ফুল ঝুরে আঙিনায়'
ধূলাতে লুটায় কাঁখের কলসি॥
হেরিয়া তারি অলস ছবি,
ডুবিতে নারে সাঁঝের রবি।
কমল-কলি ল'য়ে আঁচলে
ডাকিছে তারে গাঁয়ের সরসী॥
ভাবসন্ধান: 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যের জন্য রচিত এই গানটিতে মুলতান রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে রূপকতার আশ্রয়ে। এটি দিনের চতুর্থ প্রহরের রাগ। এই রাগ প্রসঙ্গে নজরুল বলেছেন- 'সকালের টোড়ি আর বিকালের মূলতান একই ঘরের ছেলে মেয়ে। শুধু চাল চলনের তফাতের জন্য দুই জনের স্বভাব দুরকমের হয়ে গেছে।'
গানটির স্থায়ীতে উঠে এসেছে দিনশেষের প্রকৃতির নিস্প্রভ রূপদর্শন। মুলতান রাগ প্রকৃতির সাথে একাকার হয়ে, যেন আয়নাতে নিজের নিস্প্রভ মুখচন্দ্র দর্শন করছে। দিনের বিদায়ের আয়োজন চলে প্রকৃতিতে। দোপাটির ফুল আঙিনায় ক্রন্দসী নারীর অশ্রুর মতো ঝরে পড়ে। সকালের জল আনার জন্য ব্যবহৃত কলসী অবহেলায় পড়ে থাক আঙিনায়। প্রকৃতির এ শিথিল রূপ দেখে যেন সন্ধ্যার সূর্য ডুব দেওয়ারও স্বস্তি পায় না। পদ্মকোড়ক আঁচলে নিয়ে যেন গ্রামের দীঘি মুলতানীকে আহ্বান করে। কিন্তু দিনশেষে তার যেন উৎসাহ নেই। এসবের ভিতর দিয়েই মুলতানর বিষণ্ণরূপ ফুটে উঠে।
তথ্যানুসন্ধান:
ক. রচনার প্রেক্ষাপট, কাল ও স্থান:
রচনার প্রেক্ষাপট: ভারতী রাগ সঙ্গীতে নানা দিক নিয়ে নজরুল ইসলাম নানা রকমের গবেষণা করেছিলেন। 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' হলো তার একটি। ভারতীয় রাগ-সঙ্গীত শাস্ত্রে রাগ-পরিবেশনায় দিনের বিভিন্ন সময় এবং ঋতু বৈচিত্র্যের প্রভাব রয়েছে। দিনের বিচারে ভারতীয় সঙ্গীতঋষিরা দিবারাত্রির বিভাজিত অংশ হিসেবে প্রহর বা যাম নামক এককটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এই গবেষণার সূত্রে তিনি রচনা করেছিলেন 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম নামক একটি গীতি আলেখ্য। এটি কলকাতা বেতারে প্রচারিত হয়েছিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন।
এই গীতি আলেখ্যের প্রথম ৮টি রাগাশ্রয়ী গানের চতুর্থ গানটিই ছিল 'মুকুর ল'য়ে কে গো বসি' । এই গানের শুরুতে যাম যোজনায় মূলতানী রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে। নিচে নজরুলের পাণ্ডুলিপি থেকে এই বিষয়ক পাঠ তুলে ধরা হলো।
গৌড় সারং-এর পরে অন্য প্রহরকে পরিচয় ক'রে দেওয়ার জন্য আসেন মূলতান রাগের তীব্র মধ্যম। মূলতান রাগের এক মা ─ অর্থাৎ এতে কেবল কড়ি 'মা' লাগে। সকালের টোড়ি আর বিকালের মূলতান একই ঘরের ছেলে মেয়ে। শুধু চাল চলনের তফাতের জন্য দুই জনের স্বভাব দুরকমের হয়ে গেছে। টোড়ি শুনেছেন, এখন মূলতানের খেয়াল শুনুন, তা-হলেই এদের চালের তফাৎ বুঝ্তে পারবেন। টোড়ির রাধা অর্থাৎ 'রে' আর 'ধা' প্রীতি প্রবল, পা দুর্ব্বল। মূলতানীর 'পা' বেশ প্রবল। রাধা প্রীতি খুব কম।
রচনাকাল ও স্থান:
'যাম-যোজনায়
কড়ি মধ্যম' নামক গীতি-আলেখ্যটি কলকাতা বেতারে প্রচারিত হয়েছিল ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন।
ধারণা করা হয়, এই গীতি-আলেখ্য উপলক্ষেই গানটি রচিত হয়েছিল। এই
ধারণা থেকে অনুমান করা যায়, গানটি রচনার সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪১ বৎসর।
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
বেতার:
১. অনুষ্ঠান: যাম
যোজনায় কড়ি মাধ্যম। তারিখ: ২২ জুন, ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ।
শিল্পী: চিত্ত রায়। রাগ: মূলতানী। তাল: ত্রিতাল।
২. প্রহর পরিচায়িকা।
তারিখ: ১১ অক্টোবর, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ।
গ. সঙ্গীত বিষয়ক তথ্যাবলী: