অন্ধকূপ হত্যা
১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুন তারিখে অনুষ্ঠিত একটি বহুল আলোচিত ঘটনা।

১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দ তৎকালীন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব  সিরাজদ্দৌলা প্রায় ৩০ হাজার সৈন্যের একটি বিশাল বাহিনী নিয়ে ইংরেজেদের অধিকৃত কলকাতা নগরীকে উদ্ধার করার জন্য অগ্রসর হন। নবাবের বাহিনী ১৬ জুন ইংরেজদের ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ অবরোধ করে। দুই দিন যুদ্ধের পর, ১৯ জুনে ইংরেজ সেনাপতি এং গভর্নর ড্রেক ইংরেজদের একটি বড় অংশকে সাথে নিয়ে পালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত প্রায় ১৭০ জন সৈন্য দুর্গে থেকে যায়। এই ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে হলওয়েল দুর্গের ভিতর থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু নবাবের বন্দুকধারী সৈন্যদের আক্রমণের মুখে অধিকাংশ ওলন্দাজ সৈন্য পালিয়ে যায় এবং নবাবের বাহিনীতে যোগদান করে। ২০ জুন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ জন ইংরেজ সৈন্য নিহত এবং ৭০ জন আহত হয়। সন্ধ্যার নবাবের সৈন্যরা দুর্গের দেওয়ালে সরাসরি কামানের গোলা নিক্ষেপ করতে সক্ষম হয়। এই সময় জনৈক ওলন্দাজ সৈন্য নদী মুখের দুর্গ তোড়ন খুলে দেয়। এই পথে নবাবের সৈন্যরা দুর্গে প্রবেশ করে। উপায়ন্তর না দেখে হলওয়েল আত্মসমর্পণ করে।

বন্দীদের সাথে নবাবের সৈন্যরা দুর্গের সম্পদ লুণ্ঠন করে, তবে বন্দীদের সাথে ভালো ব্যবহারও করে। হলওয়েল নবাবের কাছ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাসও লাভ করেন। কিন্তু রাতে ইংরেজ সৈন্যরা মাতলামি শুরু করে এবং নবাবের বাহিনীর প্রহরীদের আক্রমণ করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে নবাব ইংরেজ সৈন্যদের বন্দী করে রাখার নির্দেশ দেন। হলওয়েলের মতে ১৮ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট ১০ ইঞ্চি প্রস্থবিশিষ্ট একটি কক্ষে ১৪৬ জন ইংরেজকে রাখা হয়। এই ঘরে একটি মাত্র জানালা ছিল। সকালবেলায় দেখা যায়, ঘরের ১২৩ জন মৃত্যুবরণ করে।

ইংরেজরা হলওয়েলের এই মত নির্বোধের বিশ্বাস করে, সিরাজদ্দৌল্লাকে চরিত্র হননের চেষ্টা করে। বাস্তবে এত ছোট একটি ১৪৬ জন ইংরেজকে কোনোভাবেই প্রবেশ করানোই সম্ভব না। যুদ্ধবন্দীরা যদি কোনো সুযোগ নিয়ে বিজয়ী বাহিনীর সৈন্যদেরকে আক্রমণ করে, তবে আন্তর্জাতিক বিধান অনুসারে অপরাধী যুদ্ধবন্দীদেরকে হত্যা করার বিধান আছে। এই বিচারে সিরাজদ্দৌল্লা ইংরেজ সৈন্যদের সাথে মহৎ আচরণই করেছিল।


তথ্যসূত্র:
বাংলাপেডিয়া। প্রথমখণ্ড