বাংলাদেশের নদ- নদী


নদ-নদী বিধৌত বাংলাদেশকে বলা হয়- নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশের নদীগুলোর উৎস, উত্তরে হিমালয় পর্বতশ্রেণী, নেপাল, সিকিম ও ভুটান প্রভৃতি রাজ্য। উত্তর-পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার উপত্যকা, পূর্বে গারো, খাসিয়া, জয়ন্তিয়া, ত্রিপুরা ও মায়ানমারের পার্বত্যভূমি। উত্তর-পশ্চিমে দ্বারবঙ্গ বা দ্বারভাঙ্গা পর্যন্ত সমভূমি, পশ্চিমে রাজমহল, সাঁওতাল পরগনা, ছোটনাগপুর, মানভূম, সিংভূম, কেওঞ্জর, ময়ূরভঞ্জের পর্বতময় গৈরিক মালভূমি।

বাংলাদেশের মাটির মতোই এদেশের নদ-নদী অনবরত তাদের স্রোতধারাগুলি পরিবর্তিত করে সময়ে অনেক সভ্যতা গড়ে তুলেছে আবার সময়ে ধ্বংস করেছে। কাজেই নদ-নদীর স্রোতধারার সাথে শুধু বাংলাদেশের নয়, বৃহত্তর বাংলার সভ্যতা ও অর্থনৈতিক বুনিয়াদের অনেক কিছু জড়িত। তার প্রধান কারণ – নদ-নদী, জলাভূমি ও বন-জঙ্গলে পূর্ণ এই দেশে রাস্তা- ঘাট ছিল অত্যন্ত সীমিত। কাজেই ব্যবসা-বাণিজ্য, লেন-দেন, আদান-প্রদান, যাতায়াত সবই প্রায় গড়ে উঠেছে নৌপথকে কেন্দ্র করে। নদী পথেই মালপত্র পরিবহন ছিল সহজ এবং কোনো কোনো অঞ্চলে একমাত্র পরিবহন ব্যবস্থা ছিল নৌপথ।

বাংলার ভূ-প্রকৃতি গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। নদ-নদীর গতিপ্রকৃতি বাংলার আকার-আকৃতি নির্ধারণ করেছে। এই অঞ্চলের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি হিসেবে এই নদীসমূহ চিহ্নিত। বর্তমানের মতো প্রাচীনকালেও এই নদ-নদীসমূহের গতিপথ ঘন ঘন পরিবর্তিত হতো। বিশেষ করে সমতলভূমিতে নদীর খাত পরিবর্তন করা খুবই সাধারণ ঘটনা। এই নদীসমূহের তীরবর্তী অঞ্চলে শহর, বন্দর ও ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, তাছাড়া রাজনৈতিক কেন্দ্রও এদের তীরে স্থাপিত হতো। গৌড়, তাম্রলিপ্তি, গঙ্গার নদীতীরে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে গঙ্গানদীর খাত পরিবর্তন হয়। ফলে গৌড় ও তাম্রলিপ্তির যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে এদের প্রাধান্য হারিয়ে যায়। প্রাচীন বাংলার শাসকদের সামরিক বাহিনীর একটি শাখা হিসেবে নৌবাহিনী ছিল অন্যতম। নদীর খাত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোনো বন্দরের নৌঘাটির গুরুত্বও লুপ্ত হয়ে যায়।

শুধুমাত্র বাংলাদেশেই রয়েছে প্রায় সাত শতাধিক নদ-নদী। এসব নদ-নদী জালের মতো সারাদেশে বিস্তৃত। মোট নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২,১৫৫ কি.মি.। ৫৪ এসব নদ-নদীর মাধ্যমে বছরে প্রায় ১৩৫০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। পানির এ প্রবাহের সাথে বছরে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন টন পলিমাটি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। পূর্বে প্রবাহিত পানি ও তৎসঙ্গে বাহিত পলির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। এই পলিতেই গড়ে উঠেছে আবাদি জমি, লোকালয়, শহর ও বন্দর। আবার এই নদীই ধ্বংস করেছে বহু জনপদ ও চাষযোগ্য ভূমি। নদীর এই ভাঙ্গাগড়া বহু যুগ যুগ ধরে অপ্রতিহত গতিতে চলছে।

এক সময় অসংখ্য নদ-নদী সারা দেশে জালের মতো বিছানো ছিল। কালক্রমে সে সকল নদীসমূহের অনেকগুলোই বর্তমানে হারিয়ে গেছে। আরও বহু নদী এখন হারিয়ে যাবার পথে। সীমান্তের ওপাড়ে ভারতীয়দের বাঁধের কারণে বিভিন্ন বড় বড় জীর্ণ শীর্ণ হয়ে পড়েছে এবং সেই সাথে এই সকল বড় বড় নদীর শাখা নদীগুলোও দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। তারপরে এখনো যে সকল নদী অবশিষ্ট রয়েছে, সে সকল নদী নিয়ে এই অংশের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। নিচে এই সকল নদীর বর্ণনানুক্রমিক তালিকা তুলে ধরা হলো।

অর্পণগাছিয়া
আড়িয়াল খাঁ
আত্রাই
ইছামতি
কংস
কপোতাক্ষ
করতোয়া
কর্ণফুলী
কুমার
কুশিয়ারা
গড়াই
ঘাঘট
চিত্রা
ছোট যমুনা
জলঙ্গী
টাঙ্গন
টালমা
তিতাস
তিস্তা

তুরাগ
দয়া

দীপা
দুধকুমার
ধলেশ্বরী
নবগঙ্গা
নাগর
নাফ
নারদ
পদ্মা

পশুর
পাগলা
পুনর্ভবা
ফুলকুমার
বংশী
বড়াল
বরাহী
বানার
বুড়িগঙ্গা
বুড়িঘোড়া
বেতনা
ব্রহ্মপুত্র
ভদ্রা
ভৈরব
মধুমতি
মহানন্দা
মাতামুহুরী
মাথাভাঙা
মুসাখাঁ

মেঘনা

যমুনা
যমুনেশ্বরী
রূপসা
শঙ্খ
শীতলক্ষ্যা
সরস্বতী
সাগরদাড়ি
সাঙ্গু
সুরমা
সোমেশ্বরী
স্বরমঙ্গলা
হালদা

হুরসাগর
হোজা