ইথিওপিয়া'র বৃহত্তম ওরোমো
জাতিগোষ্ঠির
ধর্মের নাম। এটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। এই ধর্ম মতে
সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা
ওয়াকা।
তিনি সকল ক্ষমতার উৎস এবং তিনিই এই বিশ্বজগৎ তৈরি করেছেন।
ওরোমো
জাতিগোষ্ঠির মতে ওয়াকা চান মানুষের ভিতরে সদা শান্তি, প্রেম, অহিংসতা, সৌহার্দ্য
বিরাজ করুক। এই
ওয়াকার প্রতি বিশ্বাস থেকে সৃষ্টি হয়েছে ওয়াকেফ্ফান্না ধর্মের।
এই ধর্মের ধর্মযাজকদের বলা হয় ওয়াকেফ্ফাত্তা
(Waaqeffataa)। এই ধর্মযাজক
একনিষ্ঠতার সাথে ওয়াকেফ্ফান্না ধর্মকে ধারণ করেন এবং ওয়াকার দেওয়া বিধি (সিরা
ওয়াকা) অনুসারে ধর্মীয় বিধান দেন। এই বিধি অনুসারে তিনি সাধারণ মানুষের নির্দেশনা
দেন, ধর্মভিত্তিক সুবিচার করেন। এরই ভিত্তিতে ওরোমাদের সমাজে প্রচলিত গাড্ডা
শাসনবিধি নিয়ন্ত্রণ। এই বিধিকে বলা হয় সিরা গাড্ডা।
তবে এই ধর্মের কোনো লিখিত গ্রন্থ নেই। এই ধর্ম কোনো ব্যক্তি বিশেষের দ্বারা
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন দাবি করা হয় না। অন্যান্য ধর্মের মতে মৃত্যর পর মানুষের
আত্মার কি গতি হয়, তা রহস্যময় এবং একমাত্র ওয়াকাই এই বিষয়টি জানেন। এই ধর্মে পাপ
পূন্যের জন্য স্বরগ্-নরকে বিষয় এই ধর্মে পাওয়া যায় না।
এই ধর্মে সকল মানুষকে সম-মর্যাদায় দেখা হয়। ভাষা, যে কোনো ধরনের সামাজিক মর্যাদা,
গাত্র বর্ণ ইত্যাদির বিচারে মানুষের ভেদাভেদকে স্বীকার করে না। এরা বিভিন্ন নতুন
শস্যকে ঘরে তোলার সময় উৎসব করে, ওয়াকার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, কিন্তু কোনো
ধরনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ওয়াকার পূজা করে না।
একেশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবে ইহুদী, খ্রিষ্টান এবং ইসলাম ধর্মে শয়তানের উল্লেখ রয়েছে,
কিন্তু ধর্মে কোনো শয়তানের অস্তিত্ব নেই। এই ধর্মে ওয়াকার সব সময়ই মানুষের কল্যাণ
চান। সুতরাং কোনো শয়তানি শক্তিকে তিনি সৃষ্টি করেন নাই।
খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতকে যখন আবসিনিয়ায় খ্রিষ্টান ও মুসলিম শক্তির মধ্যে সংঘর্ষ শুরু
হয়, তখন তার কোনো পক্ষেই যোগদান করে নি। তবে কিছু কিছু মানুষ উভয় ধর্ম গ্রহণ করলেও
বেশিরভাগ মানুষ ওয়াকেফ্ফান্না ধর্মতেই থেকে যায়।
বিংশ শতাব্দীর শুরু দিকে আবসিনিয়ায় গোঁড়া খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা খ্রিষ্টধর্ম
গ্রহণের জন্য ওয়াকেফ্ফান্না ধর্মাবলম্বীদের উপর ব্যাপক অত্যাচার চালিয়েছিল।
ওয়াকেফ্ফান্না
ধর্মমতে আদিকালের
পৃথিবী ছিল সমান। কোনো পাহাড় ছিল না, আগুন বা বৃষ্টি ছিল না। সে সময়ে ওয়াকা
মাটি ও আকাশের মিশ্রণে
একজন পুরুষ মানুষ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এই মানুষটি প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে টিকে
থাকার উপযোগী
ছিল না। তাই তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য, ওই আদিম মানুষটিকে একটি কফিন বানাতে বললেন। ওয়াকের
নির্দেশে
মানুষটি একটি কফিন তৈরি করলে, ওয়াক এই মানুষটিকেই কফিনে পুরে মাটিতে পুঁতে ফেললেন।
এরপর সাত বছর ধরে অগ্নি ও বৃষ্টি বর্ষণ করলেন। এর ফলে পৃথিবীতে পর্বতের সৃষ্টি হলো।
এরপর মাটির ভিতর থেকে কফিন তুলে, মানুষটিকে জীবন দান করলেন।
এরপর ওয়াকা দেখলেন এই মানুষটি নিঃসঙ্গ দশায় নিরানন্দে জীবনযাপন করছে। ওয়াক মানুষটির
একাকীত্ব ঘুঁচানোর জন্য তাঁর শরীর থেকে রক্ত গ্রহণ করেলেন। চারদিন পর এই রক্ত থেকে
পৃথিবীর নারীর সৃষ্টি হলো। পরে তিনি এই নারীপুরুষকে বিবাহ দিলেন। কালক্রমে এদের
৩০টি সন্তান জন্মগ্রহণ করলো। এই দম্পতি মনে করলেন যে, ওয়াক-কে এত সন্তান জন্মদানের
সংবাদ জানানোটা লজ্জার ব্যাপার। তাই তাঁরা ১৫টি সন্তানকে ওয়াকের কাছ থেকে লুকিয়ে
রাখলেন। কিন্তু বিষয়টি ঠিকই জানলেন। তিনি বিষয়টি ওই দম্পতিকে না জানিয়ে লুকানো
সন্তানদেরকে প্রাণী এবং দানবে পরিণত করেছিলেন।
সূত্র: