আইফেল টাওয়ার

ফরাসি : La Tour Eiffel । ডাক নাম La dame de fer (লৌহ মানবী)।

ইংরেজি: Eiffel Tower
ভৌগোলিক অবস্থান : ৪৮.৮৫৮৩
° উত্তর ২.২৯৪৫°পূর্ব।
 

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত একটি শৈল্পিক কাঠামো। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এটিই ছিল মনুষ্য নির্মিত উচ্চতম কাঠমো। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Chrysler Building তৈরির পর এই টাওয়ারটি এই মর্যাদা হারায়।  স্থপতি গুস্তাফ আইফেল -এর নামানুসারে এই টাওয়ারের নামকরণ করা হয়েছে।

ফ্রান্স সরকারের উদ্যোগে ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত 'বিশ্বমেলা এবং বিপ্লবের শতবার্ষিকী' উপলক্ষে একটি স্মৃতি স্তম্ভ তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই স্তম্ভ তৈরির দায়িত্ব লাভ করেন
Compagnie des Establissments Eiffel

 

১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে এই কোম্পানির স্থপতি Maurice Koechlin একটি সরল নকশা তৈরি করেন। পরে এই নকশার পরিমার্জিত রূপ প্রণয়নে অপর স্থপতি Émile Nouguier তাঁকে সহায়তা করেন। এই দুইজন স্থপতি কোম্পানির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান Stephen Sauvestre-কে নকশাটি দেখান। এই সূত্রে এই কোম্পানির প্রধান আলেকজান্ডার গুস্তাফ আইফেল (Alexandre Gustave Eiffel) এই নকশার বিষয়ে উৎসাহ দেন, এবং এই নকশায় নান্দনিক উপাদান যুক্ত করার পরামর্শ দেন। এরপর Sauvestre এই নকশাটিতে কিছু নান্দনিক উপকরণ যুক্ত করেন। এই তিনজন স্থপতি তাঁদের কোম্পানির পক্ষে এই বর্ধিত নকশাটি ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দের শরৎকালে Exhibition of Decorative Arts-এ জমা দেন। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মার্চে  গুস্তাফ আইফেল এই নকশার নানাবিধ দিক নিয়ে Société des Ingiénieurs Civils-এর সভায় একটি পত্র পাঠ করেন।

 

Maurice Koechlin -কৃত প্রাথমিক নকশা

১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে জুলেস গ্রেভি (Jules Grévy) প্রেসিডেন্ট হিসাবে পুনরায় নির্বাচিত হন। এই  সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান লোক্রোয় (Édouard Lockroy)। ১৮৮৬ ক্রিষ্টাব্দের ১লা মে-তে, লোক্রোয় আইফেল টাওয়ারের  গুস্তাফ আইফেলের নকশার অনুমোদনের ঘোষনা দেন। ১২ই মে-তে এই নকশার বিষয়টির সাম্ভ্যবতা নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ দল পরীক্ষা করেন। ১২ই জুনে পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর আরও বহু বৈঠকের পর ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারিতে গুস্তাফ আইফেলের সাথে সরকারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর এই টাওয়ারটি তৈরির কাজ শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মার্চ তারিখে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

 

আইফেল টাওয়ারের ছাদের উচ্চতা ৩০০.৬৫ মিটার (৯৮৬ ফুট) আর এর উপরের এ্যান্টেনা-সহ উচ্চতা ৩২৪ মিটার (১০৬৩ ফুট)। এর সর্বোচ্চ তলার উচ্চতা ৩২৭ মিটার (৮৯৬ ফুট)। সমগ্র টাওয়ারটি তিনটি তলায় বিভাজিত। টাওয়ারে উঠা নামার জন্য রয়েছে ৯টি লিফ্টযন্ত্র। বর্তমানে এর মালিক ফ্রান্সের প্যারিস শহর কর্তৃপক্ষ।

 

আইফেল টাওয়ার তৈরির পরের কিছু ঘটনা
১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারিতে  ফ্রাঞ্জ রেইচেল্ট নামক একজন ফরাসি দর্জি তার নিজের তৈরী প্যারাস্যুট নিয়ে আইফেল টাওয়ারের ৬০ মিটার উচ্চতা থেকে লাফিয়ে পড়েন এবং মৃত্যু বরণ করেন।

১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে, এই টাওয়ারে অবস্থিত একটি রেডিও ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে মার্নের প্রথম যুদ্ধের
(The First War of Marne) সময় জার্মান বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল।

১৯২৫-১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে টাওয়ারের চারদিকের তিন দিকেই সিত্রোয়াঁ
(Citroen) মোটর গাড়ীর জন্য আলোক সজ্জিত করা হয়েছিল, এবং যা সেই সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতায় স্থাপিত বিজ্ঞাপন চিত্র ছিল।

১৯৪০-১৯৪৪ প্যারিস জার্মানির অধীনস্ত থাকাকালীন সময়ে ১৯৪০ খ্রিষ্টব্দে হিটলার এই টাওয়ার পরিদর্শন করতে আসেন। এই সময় ফরাসিরা টাওয়ারের লিফটের তার কেটে ফেলে। ফলে এডলফ হিটলার পায়ে হেঁটে চূড়ায় উঠেছিল।

১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জানুয়ারিতে টাওয়ারের উপরের অংশ আগুনে পুড়ে বিনষ্ট হয়। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান রেডিও অ্যানটিনাটি টাওয়ারের শীর্ষে স্থাপন করা হয়।

১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে টাওয়ারের মধ্যবর্তী উচ্চতায় রেস্তোরাঁ এবং তা তৈরীতে দরকারি লৌহগুলো খুলে পৃথক করে রাখা হয়।
১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এ. জে. হ্যাকেট আইফেল টাওয়ারের শীর্ষ থেকে প্রথমবারের মত বাঙ্গী লম্ফন
(bungee jumps) করেন, ভূমিতে পৌছানোর পর প্যারিস পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।

১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুলাই তারিখে জিন মাইকেল জার, ইউনেস্কোকে
(UNESCO) সহায়তা করার জন্য 'Concert For Tolerance' নামক একটি কনসার্টের আয়োজন করেন। সেখানে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ উপস্থিত ছিল।

১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে আইফেল টাওয়ারে প্যারিসের সহস্র বর্ষ উদযাপিত হয়।

২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ নভেম্বর টাওয়ারে ২০০,০০০,০০০তম অতিথি আগমন করে।

২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জুলাই টাওয়ারের সম্প্রচার কক্ষে আগুন ধরে যায়।

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে টাওয়ারের প্রথম স্তরে স্কেটিং খেলার আয়োজন শুরু করা হয়।

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয়বারের মত সভাপতিত্ব পায়। এই সময় ইফেল টাওয়ারে ১২টি দেশের পতাকা লাগানো হয় এবং নীল আলোতে সাজানো হয়।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর মাসে সম্ভব্য বোমা হামলার আশংকায় আইফেল টাওয়ার দর্শকদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। অবশ্য অনুসন্ধান করে কোন বোমা পাওয়া যায় নি। এরপর দর্শকদের জন্য আবার তা খুলে দেওয়া হয়। 


সূত্র :
http://en.wikipedia.org/wiki/Eiffel_Tower