নর্মদা
মধ্য ভারতের একটি নদী। দৈর্ঘ্যের বিচারে এটি ভারতের পঞ্চম দীর্ঘ নদী। উল্লেখ্য এই নর্মদা নদীর দৈর্ঘ্য ১৩১০কিমি। এক সময় এই নদী আর্যাবর্ত ও দাক্ষিণ্যাতের ভারতের সীমান্ত নির্দেশক নদী হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

সংস্কৃত ভাষায় নর্মদা শব্দের অর্থ সুখপ্রদায়িনী। ভারতের মধ্যপ্রদেশের মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ (৩৪৯৩ ফুট)অমরকন্টক মালভূমির নর্মদা কুণ্ড থেকে উৎপন্ন হয়েছে। স্থানীয় ভাষায় এই নদীর 'রেওয়া'।

এই নদীর উৎপত্তিস্থলটি সাতপুরা পর্বতমালা উত্তর ঢালে অবস্থিত। উৎপত্তিস্থল থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার একটি তৃণপূর্ণ প্রান্তর বক্রপথ অতিক্রম করে অমরকণ্টক মালভূমিতে প্রবেশ করেছে। এই ৫ কিলোমিটারের বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলধারা মূলধারার সাথে মিলিত হয়ে অমরকণ্টক মালভূমিতে বড় জলধারায় পরিণত হয়েছে। এরপর মালভূমির ভিতর দিয়ে ২ কিলোমিটার অতিক্রম করার পর নর্মদার জল প্রায় ১০০ ফুট পতিত হয়ে কপিলধারা নামক জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছ। এরপর পতিত জল রাশি ৫০০ মিটার অতিক্রম করার পর দ্বিতীয় জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। এর আদি নাম দুগ্ধধারা। সাধারণ মানুষের মুখে এই জলপ্রপাতটি দুধধারা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানে একটি গুহা আছে। এটি দুর্বাশা মন্দির গুহা নামে পরিচিত। এরপর ছোটো ছোটো জলপ্রপাত সৃষ্টি করে নদীটি মধ্যপ্রদেশের রামনগরে প্রবেশ করেছে। রামনগর অতিক্রম করার পর নদীটি জব্বলপুরে প্রবেশ করেছে। এখানে নর্মদার প্রায় ৩০ ফুটু জল সজোরে পতিত হয়ে একটি জলপ্রপাত সৃষ্টি করেছে। এই জলপ্রপাতটির নাম ধুঁয়াধার (ধুয়ান্ধার)। এরপর প্রায় ৫ কিলোমিটার একটি সঙ্কীর্ণ গিরিপথ ধরে নদীটি অগ্রসর হওয়ার ওর, প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সমতলভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই জলপ্রবাহের ফলে এই সমভূমিটি উর্বরা ভূমিতে পরিণত হয়েছে। মূলত নর্মদা এই স্থানে এসে বিন্ধ্য পর্বতমালাসাতপুরা পর্বতমালা মধ্যবর্তী নিম্ন উপত্যাকাকে পৃথক করেছে। এখানে নদীটি মোহপানি কয়লার খনি, নিমাবার এবং যোগীগড় অতিক্রম করে নিমার জেলার জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এই জঙ্গল অতিক্রম করার পর, নদীটি মান্ধাতা দ্বীপ অতিক্রম করে গুজরাটে প্রবেশ করেছে।

গুজরাটে এই নদীটি গাইকোবাড় রাজ্য এবং রাজপিয়া রাজ্যকে পৃথক করে প্রায় ৪০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে। এরপর প্রায় ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে গুজরাটের ভারুচ জেলায় প্রবেশ করেছে। এই জেলার উপর দিয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে নদীটি খাম্বাত উপসাগরে পতিত হয়েছে।