বাংলা ব্যাকরণে ব্যবহৃত সংস্কৃত উপসর্গ। পাণিনী ব্যাকরণ মতে-উপসর্গ ক্রিয়াযোগে (১।৪।৫৯)।
কারিকা : প্রপরাপসমন্ববনির্দুরভিব্যধিসূদতিনিপ্রতিপর্যপয়ঃ।
উপ আঙতি বিংশতিরেষ সখে উপসর্গবিধিঃ কথিতঃ কবিনা ॥
[প্র, পরা, অপ, সম, অনু, অব্, নির্ দুর্, অভি, বি, অধি, সু, উদ, অতি, নি, প্রতি, পরি, অপি, উপ, আঙ্- এই বিশ প্রকার উপসর্গবিধি]।
পাণিনী এবং পরবর্তী ভাষ্যকারদের মতানুসারে সংস্কৃত উপসর্গের সংখ্যা ২০টি। এগুলো হলো-প্র, পরা, অপ, সম, অনু, অব্, নির্ দুর্, অভি, বি, অধি, সু, উদ, অতি, নি, প্রতি, পরি, অপি, উপ, আঙ্। এর ভিতরে আঙ্ উপসর্গ, ব্যবহারিক ক্ষেত্রে আ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। যেমন-
আ-√দিশ্ (নির্দেশ করা) +অ (ঘঞ্)=আদেশ।
দুস্ এবং নিস নামে কোন প্রত্যয় তালিকায় পাওয়া যায় না। ভাষ্যকরাদের মতে, এই দুটি উপসর্গ যথাক্রমে দুঃ ও নিঃ উপসর্গের ভাগ এবং এই ভাগ দুটির প্রতিনিধি হিসাবে দুর ও নির তালিকায় আনা হয়েছে। এই সূত্রে আমরা যে চারটি উপসর্গ পাই তা হলো-
দুঃ (দুর) দুস্-√বুধ্ (জানা) +অ=দুর্বোধ
দুঃ (দুস) দুস্-√খন্ (খনন করা) +অ (ড)=দুঃখ
নিঃ (নির্) নির্ -√জি (জয়লাভ করা) +ত (ক্ত)=নির্জিত
নিঃ (নিস্) নিস্-√কৃষ (আকর্ষণ করা) +অ (ঘঞ্)=নিষ্কর্শ
ধাতুপূর্ব উপসর্গ সংযোগ বিধি :
এক বা একাধিক উপসর্গ ধাতুর পূর্বে ব্যবহৃত হতে পারে।
সে কারণে উপসর্গ ধাতুর সংলগ্ন হয়ে সব সময় বসে না।
যেমন- দুর্-আ-√চর
+অ=দুরাচার।
এখানে আ-উপসর্গ
√চর
ধাতুর আগে বসেছে, কিন্তু দুর্-উপসর্গ বসেছে আ-উপসর্গের পূর্বে।
শব্দ গঠন ও বানানরীতিতে উপসর্গের প্রভাব:
শব্দগঠনে উপসর্গ ও প্রত্যয় যুগপদ কাজ করে।
এর ভিতরে প্রত্যয়ের প্রভাব প্রধান।
প্রত্যয় ছাড়া ধাতু থেকে শব্দ গঠিত হয় না, কিন্তু উপসর্গ ছাড়া শব্দ গঠিত হতে পারে।
সেকারণে শুধু উপসর্গ-যুক্ত ধাতু শব্দ তালিকায় আসে না।
দুস্-√বুধ্
(জানা) দিয়ে কিছুই বুঝা যা না।
কিন্তু দুস্-√বুধ্
(জানা) +অ=দুর্বোধ হলে শব্দ হিসাবে বিবেচিত হবে।
গঠিত শব্দ
প্রকাশিত হয়- বানানরীতির নিয়মে।
উচ্চারণের পরিবর্তন ঘটে, ণত্ব-বিধান ও ষত্ব-বিধানের নিয়মে এক্ষেত্রে ব্যাখ্যা করাটা
যুক্তযুক্ত নয়।
কারণ, এই বিধান দুটি দ্বারা বাংলায় ব্যবহৃত তৎসম শব্দের বানান-প্রকৃতি বর্ণনা করা
যায়, কিন্তু উচ্চারণের বিধি প্রতিষ্ঠিত করা যায় না।
এই বিষয়ে ধ্বনিতত্ত্বে বাংলা বানানরীতি পাঠের ণত্ব-বিধান ও ষত্ব-বিধান আলোচনা করা
হয়েছে।
অর্থগত মান নির্ধারণে উপসর্গের প্রভাব :
উপসর্গ ধাতুর অর্থকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
এই বিষয়টি নির্ভর করে, উপসর্গ ও ধাতুর অর্থের বিচারে।
ধাতুর যেমন একটি ভাবগত অর্থ আছে।
এই অর্থকে যেমন প্রাধান্য দিতে হয়, তেমনি কোন উপসর্গ কোন অর্থে ব্যবহৃত হচ্ছে তাও
বিবেচনায় আনতে হয়।
এক্ষেত্রে উপসর্গ ও ধাতুর মানের পারস্পরিক ক্রিয়ায়, গঠিত শব্দের অর্থগত মান
প্রকাশিত হয়।
অর্থমান নির্ধারণে এই বিষয়টি দুটি ধারায় কাজ করে থাকে।
যেমন–
১.১ সমর্থক : ধাতুর অর্থকে যথাযথ মানে প্রকাশ করে বা গভীরভাবে অর্থকে উদ্ভাসিত করে। যেমন- প্রমাণ। প্রকৃষ্ট অর্থে প্র উপসর্গ √মান ধাতুকে প্রকাশ করে। তাই প্রমাণের সমার্থ হয়ে দাঁড়ায়- প্রকৃষ্ট রূপে প্রকাশিত মান। এখানে উভয় মিলে যে অর্থ প্রকাশ করে তা উপসর্গের অর্থ ধাতুর অর্থকে বিকশিত করে বটে কিন্তু তা ঘটে ধাতুর মানকে সমর্থন করেই।
১.২।
বিবর্তক :
উপসর্গ তার প্রভাব দ্বারা ধাতুর নিজস্ব অর্থ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
ফলে ধাতুর অর্থগত বিবর্তন ঘটে।
সংস্কৃত ব্যাকরণে উপসর্গের এই প্রভাবকে বলপূর্বক (উপসর্গেণ ধাত্বর্থো বলাদন্যত্র
নীয়তে) বলা হয়েছে।
এই সূত্রে উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ আছে- প্রহার, আহার, সংহার, বিহার, পরিহার।
লক্ষ্যণীয় বিষয় যে,
√হৃ
ধাতুর ভাবগত অর্থ হল- হরণ করা।
কিন্তু উল্লেখিত শব্দে প্র, আ, সং, বি, পরি উপসর্গগুলো বলপূর্বক ধাতুর অর্থকে
ভিন্নতর করে তুলেছে।
পাণিনীর সূত্রানুসারে উপসর্গগুলো -প্রপরাপসমন্ববনির্দুরভিব্যধিসূদতিনিপ্রতিপর্যপয়ঃ। উপ আঙতি। বাংলা বর্ণানুক্রমে এর ক্রমবিন্যাসে যে রূপটি পাওয়া যায়, তা হলো–
অনু
অব্
অপ
অপি
অভি
আ (আঙ্)
দুঃ (দুর্, দুস্),
নি, নিঃ ( নির্, নিস)
পরা,
পরি,
সম
সু