ধর্ম সঙ্গীত
মানুষের অলৌকিক বিশ্বাস এবং সৃজনশীল ক্ষমতার সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছিল ধর্মবিশ্বাস। কালপরিক্রমায় নানা দেশে দেশে নানা জাতিসমূহে যেমন নানান ধরনের ধর্মবিশ্বাসে উদ্ভব ঘটেছে। আবার একই ধরম স্থান-কাল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপ লাভ করেছে। সামাগ্রিকভাবে মানুষের ধর্মবিষয়ক ধারণাকে ধর্মদর্শন অভিহিত করা হয়।

সনাতন ধর্মকে বলা মানুষের আদি ধর্ম। মানুষের ক্রমবিবর্তনের ধারায় অলৌকিক বিশ্বাস এবং লোককাহিনির সমন্বয়ে, মানুষ তার সৃজনশীল ক্ষমতায় এই ধর্মের সৃষ্টি করেছিল। কালের বিবর্তনে এই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর দ্বারা এই ধর্মের বিবর্তন ঘটেছে। শুরুর দিকে এই ধর্মের আরাধ্য শক্তি ছিল প্রকৃতি। আদিম ধর্মে মানুষের এই ধর্মবিশ্বাসে ছিল- ভূমি, অরণ্য, সূর্য, চন্দ্র, সমুদ্র, জল, অগ্নি, বায়ু ইত্যাদি। এর সাথে মানুষের মৃত্যুভাবনা এই ভাবনা অধীশ্বর ছিল যমদেবতা। প্রথাগত বিশ্বাসের বিচারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ন্যায়-অন্যায়ের বিধি। আর এই বিধির বিচারক ছিলেন- মৃত্যু দেবতা যম।

ধর্মবিশ্বাসের বা ধর্মদর্শন সাথে সম্পর্কিত সঙ্গীতই হলো- ধর্মসঙ্গীত। আদিম মানুষের অলোখিক বিশ্বাসের সূত্রে সৃষ্টি আস্তিকতাবাদ। এই বাদের মূল সূত্র ছিল- প্রকৃতি কোনো বিশেষ শক্তির দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে এবং তাঁর দ্বারা জগৎসংসার নিয়ন্ত্রিত হয়। জগৎসংসার নিয়ন্ত্রক হিসেবে একাধিক অলৌকিক শক্তির আরাধনা বা পূজা থেকে এসেছিল বহু-ঈশ্বরবাদ। আর জগৎসংসার নিয়ন্ত্রক হিসেবে এক এবং অদ্বিতীয় সত্তার স্বীকর্য থেকে উদ্ভুত হয়েছিল একেশ্বরবাদ।

সনাতনধর্মের বিকাশের সূত্রে ধর্মীয় কাহিনি এবং স্তুতিমূলক মন্ত্রের উৎপত্তি ঘটেছিল। কালক্রমে এই স্তুতিসমূহ সুরারোপিত হয়ে গানে পরিণত হয়েছিল। খাদ্যাভাব, মহামারী, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সূত্রে আদি-মানবগোষ্ঠী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল দেশান্তরিত এ সকল মানুষের ভাষার পরিবর্তনের সাথে সাথে- স্থানীয় প্রাকৃতিক বৈরী-অবস্থার সূত্রে সনাতন ধর্মের পরিবর্তন ঘটেছিল। ফলে সনাতন ধর্মের সঙ্গীতেরও পরিবর্তন ঘটেছিল। সাধারণভাবে এসকল ধর্মীয় সঙ্গীতকে বড় পরিসরে ভৌগোলিক সনাতন ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যেমন- আফ্রিকার সনাতন-ধর্মসঙ্গীত, মধ্য-এশিয়ার সনাতন-ধর্মসঙ্গীত, ভারতীয় সনাতন-ধর্মসঙ্গীত, চীনের সনাতন-ধর্মসঙ্গীত ইত্যাদি। এসকল ধর্মসঙ্গীতের সাথে জড়িয়ে আছে স্থানীয় মানুষের ধর্ম বিশ্বাস, ভাষারীতি, সুরাঙ্গ, তালাঙ্গ, নৃত্যশৈলী, বাদ্যযন্ত্র এবং বাদনশৈলী।

আদিমকালের ধর্মসঙ্গীতের নমুনা পাওয়া যায় না। তাই শুধু যুক্তির বলে বলতে হয়- আদিম ধর্মচর্চার সাথে সঙ্গীতের সম্পর্ক ছিল। একালের প্রধান এবং অ-প্রধান সকল ধর্মোদর্শনের আদি দশা থেকে বর্তমান দশা পর্যন্ত ধর্মসঙ্গীতের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ধর্মসঙ্গীতের বিকাশে ভৌগোলিক অবস্থান, ভাষা, ধর্মপ্রকৃতি অনুসারে ধর্মসঙ্গীতগুলোকে নানাভাবে চিহ্নিত করা যায়। যেমন-