গৌতম
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে, এই নামে একাধিক চরিত্র পাওয়া যায়।

১. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {ঋষি |  হিন্দু পৌরাণিক সত্তা | ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা | পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিক সত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | কর্মক্ষমতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা | বিমূর্তন  | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

ঋষি বিশেষ। এই ঋষি মানুষের আচার-আচরণ, রীতিনীতি বিষয়ক সংহিতা প্রণয়ণ করেন। তিনি ছিলেন- দশরথের রাজসভার বিশিষ্ট যাজক ও মন্ত্রী
        [সূত্র: সপ্তম সর্গ। বালখণ্ড। বাল্মীকি রামায়ণ]।

ব্রহ্মা এঁর অলৌকিক ব্রহ্মচর্য দেখে সন্তুষ্ট হয়ে অহল্যা নামক এক সুন্দরী কন্যাকে এঁর কাছে প্রেরণ করেন। কিন্তু ইনি অহল্যাকে দীর্ঘদিন কাছে রেখেও স্পর্শ না করে ব্রহ্মার কাছে ফিরিয়ে দেন। এরপর ব্রহ্মা অহল্যাকে গৌতমের হাতেই সমর্পণ করেন। গৌতমের ঔরসে অহল্যার গর্ভে শতানন্দ নামক এক পুত্রের জন্ম হয়।

গৌতমের অবর্তমানে ইন্দ্র গৌতমের রূপ ধরে অহল্যাকে ধর্ষণ করেন। এই কারণে, ইনি ইন্দ্রকে নপুংশক হওয়ার অভিশাপ দেন। অন্য দিকে অহল্যাকে অন্যের অদৃশ্য হয়ে দীর্ঘকাল বায়ু ভক্ষণ করে ভস্মশয্যায় অতিবাহিত হওয়ার অভিশাপ দেন। অহল্যা এই অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য অনুনয় বিনয় করতে থাকলে ইনি- ইনি বলেন যে, বিষ্ণুর অবতার রামের স্পর্শে তাঁর মুক্তি হবে।

গৌতম-রচিত ন্যায়শাস্ত্র পাঠ করে, মহাভারতের স্রষ্টা ব্যাসদেব গ্রন্থের ত্রুটি বের করেন। এর ফলে গৌতম ক্রুদ্ধ হয়ে বলেছিলেন যে, তিনি চোখ দ্বারা ব্যাসদেবের মুখ দেখবেন না। পরে ব্যাসের অনুনয়-বিনয়ে গৌতম তাঁর মুখদর্শনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। কিন্তু প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হবে,- এই বিবেচনায় গৌতম তাঁর পায়ে চোখ স্থাপন করে ব্যাসদেবের মুখ দেখেছিলেন। সেই থেকে গৌতমের অপর নাম অক্ষপাদ।
 

২. ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {ব্যক্তি |  হিন্দু পৌরাণিক সত্তা | ভারতীয় পৌরাণিক সত্তা | পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিক সত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | কর্মক্ষমতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা | বিমূর্তন  | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

জনৈক পাপী ব্রাহ্মণ। ইনি প্রথম জীবনে বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ হিসাবে জীবনযাপন করতেন। একবার এই ব্রাহ্মণ ভিক্ষার জন্য এক দস্যুর বাড়িতে যান। দস্যু তাঁকে নূতন কাপড় ও একটি বিধবা যুবতী দান করেন। এরপর ইনি দস্যুদের আশ্রয়েই থেকে যান। এই সময় ইনি দস্যুদের সাথে থেকে থেকে নিষ্ঠুর আচরণে অভ্যস্থ হয়ে পড়েন। কিছুদিন পর সেখানে তাঁর বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ-বন্ধু আসেন এবং গৌতমের এরূপ পরিবর্তন দেখে তাঁকে তিরস্কার করেন। এরপর গৌতম দস্যুদের সঙ্গ ত্যাগ করে একদল ব্যবসায়ীর সাথে সাগর-অভিমুখে রওনা দেন। পথে বন্য হস্তীর আক্রমণে ব্যবসায়ীরা নিহত হলে - ইনি প্রাণে রক্ষা পেয়ে একাকী যাত্রা শুরু করেন। পথে একটি বট গাছের নীচে আশ্রয় নিতে বসলে- বকরাজ (রাজধর্মা) ব্রহ্মলোক থেকে পৃথিবীতে নেমে গৌতমের সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং গৌতমের অতিথি হন। পরে রাজধর্মা গৌতমের ধনলাভের ইচ্ছা জেনে তাঁর বন্ধু রাজা বিরুপাক্ষের কাছে পাঠান। গৌতম বিরুপাক্ষের সাথে দেখা করলে, বিরূপাক্ষ তাঁকে আচারভ্রষ্ট ব্রাহ্মণ জেনে দুঃখিত হন। কিন্তু সহস্র ব্রাহ্মণের সাথে তাঁকে আহার করিয়ে স্বর্ণময় ভোজনপাত্র ও প্রচুর ধনরত্ন উপহার দেন। গৌতম সকল সম্পদ নিয়ে বটতলায় ফিরে আসেন। রাত্রিকালে উভয়ে ঘুমিয়ে পড়লে- এই ব্রাহ্মণ বকরাজকে হত্যা করেন এবং পথের খাদ্য হিসাবে হিসাবে বকরাজের মাংস নিয়ে উক্ত স্থান ত্যাগ করেন। পরদিন বিরুপাক্ষ বকরাজের সন্ধানে নিজের ছেলেকে পাঠান। এই ছেলে বকরাজের অস্থি দেখে তাঁর অনুচরদের সাথে করে দ্রুত গৌতমের অনুসরণ করেন এবং তাঁকে গ্রেফতার করে বিরূপাক্ষের কাছে নিয়ে যান। বিরূপাক্ষ সকল বিষয় অবগত হয়ে- তিনি গৌতমকে খাওয়ার জন্য অন্যান্য রাক্ষসদের আদেশ দেন। কিন্তু রাক্ষসরা গৌতমের পাপ দেহ খেতে অস্বীকার করেন। তখন বিরূপাক্ষ গৌতমের শরীর খণ্ড খণ্ড করে দস্যুদের খেতে দিলে তাঁরাও উক্ত মাংস খেতে অস্বীকার করেন।

বিরূপাক্ষ বকরাজের দেহ সত্কারের জন্য চিতা সাজান। এই সময় দক্ষকন্যা সুরভী এসে তাঁর মুখ থেকে দুগ্ধফেনা ছড়িয়ে দিয়ে বকরাজকে জীবিত করেন। এরপর ইন্দ্র এসে জানান যে- একবার বকরাজ ইন্দ্র ব্রহ্মার সভায় না যাওয়ার জন্য তাঁর এই শাস্তি হয়েছিল। পরে বকরাজের অনুরোধে গৌতম পুনর্জীবন লাভ করেন। এরপর রাজার কাছ থেকে বহু ধনরত্ন নিয়ে, ইনি তাঁর দ্বিতীয় শুদ্র পত্নী'র কাছে ফিরে যান। এই স্ত্রীর গর্ভে তাঁর বহু দুষ্ট সন্তান জন্মে। তাঁর মৃত্যুর পর দেবতাদের শাপে, এঁর নরকবাস হয়।