অভিমান
বানান বিশ্লেষণ: অ+ভ্+ই+ম্+আ+ন্+অ।
উচ্চারণ:
o.bhi.man (ও.ভি.মান্)
শব্দ-উৎস: সংস্কৃত অভিমান> বাংলা অভিমান
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:
মন্‌ (মনে করা) + অ (ঘঞ্), ভাববাচ্য
পদ : বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {| আবেগানুভূতি | মনোগত দশা |  দশা | অবস্থাসত্তাগুণ | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা |

অর্থ: আপনার প্রতি মান। প্রিয়জনের দ্বারা যখন এই মান উপেক্ষিত হয়, এবং এর ফলে ব্যক্তি বিশেষের মনে যে বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি হয়, তার দশাকে বলা হয় অভিমান। ক্রোধ স্নেহ মমতা, ভালোবাসা ইত্যাদির মিশ্র অনুভূতির ভাব হলো অভিমান। 

প্রকৃত অভিমানের ভাষা নৈঃশব্দ। যার প্রক্ষোভ প্রকাশ পায় অশ্রুমোচন, দীর্ঘশ্বাস বা গভীর মৌনতায়। প্রকৃষ্ট অভিমান অন্তর্মুখী। তাই কারো অভিমান বুঝতে হলে তার মনের গভীর তলকে অনুভব করতে হয়।  মানুষের মনের গভীর তল থেকে অভিমান যখন মনের উপরিতলে উঠে আসে তখন তার প্রকাশ ঘটে অভিমানী বাক্যে, অশ্রুমোচনে বা মুখভঙ্গীতে। অভিমানের অন্তরালে থাকে ক্রোধ মমতা, স্নেহ ইত্যাদি। অভিমানের উপরিতলে থাকে ক্রোধে এবং এই ক্রোধের অন্তরালে থাকে প্রেমপূর্ণ প্রশ্রয়। ফলে অভিমানের ক্রোধ হয় কপট। যে কোনো মানুষের উপর রাগ করা যায়, অভিমান সকল মানুষের উপর করা যায় না। গভীর মমতা বা স্নেহ, প্রগাঢ় ভালোবাসার জনের সাথে অভিমান করা যায়। তার চেয়ে বড় কথা, যে অভিমানের মর্যাদা দিতে পারে, তার কাছেই অভিমান করা যায়। শিল্পাঙ্গনে রসের তালিকায় অভিমান নেই। সম্ভবত একাধিক রসের সমাহারে অভিমানের  সঞ্চার ঘটে, তাই। এক্ষেত্রে অভিমান প্রকাশিত হয় অন্য রসের অনুষঙ্গ হিসেবে। যেমন- শৃঙ্গার বা বাৎসল্য রসের অনুষঙ্গ হিসেবে মেন অভিমানের সঞ্চার ঘটতে পারে।

ধরা যাক কোনো এক ব্যক্তি তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কোনো প্রিয়মানুষের যোগদানের আশা করছেন। ওই মানুষটি যদি না আসেন বা অনেক দেরিতে আসেন, তাহলে ওই ব্যক্তির মনে হবে যে তাঁর যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হলো না। তিনি ভাবতেই পারেন, তাঁকে মূল্য দিলে সকল কাজ ফেলে ওই ব্যক্তিটি আসতেনই। এই ভাবনা থেকে প্রিয়মানুষের প্রতি যে অনুযোগ মিশ্রিত ক্ষোভের সৃষ্টি হবে, তাকে অভিমান বলা হবে।

 অভিমান শত্রুর সাথে হয় না বা অবহেলা করা যায় এমন মানুষের সাথে হয় না। অভিমান করা যায় অতি প্রিয়জনের প্রতি। রাগ যে কারো উপরেই করা যায়, আর অভিমান করা যায় অভিমানের যোগ্য লোকের প্রতি। দাবি, অধিকার, আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মগৌরবের মিশ্র অনুভূতি থেকে ব্যক্তি বিশেষের প্রতি অভিমান করা যায়। তাই ক্ষমা প্রার্থনা, দোষ স্বীকারের মধ্য দিয়ে অভিমানী লোকের মানকে মান্য করলে অভিমান ভাঙে।