স্বস্তি=শোস্.তি (বাংলা শব্দের আদিতে স্ব থাকলে তা শ হিসেবে উচ্চারিত হয়। এই ধ্বনির পরবর্তী ই-ধ্বনির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শ ধ্বনি শো ধ্বনিতে পরিণত হয়। পরবর্তী স্তি ধ্বনি স্.তি হিসেবে বিভাজিত হয়ে স্ পূর্ববর্তী শো ধ্বনির সাথে যুক্ত হয়ে একাক্ষর শোস্ ধ্বনিতে পরিণত করে। অবশিষ্ট ইকারযুক্ত ত্ ধ্বনি একাক্ষর তি ধ্বনি হিসেবে প্রকাশ পায়)
অস্বস্তি= [অ অর্ধ-বিবৃত হয়। স্ব ধ্বনির কারণে অ-এর পরে শ্ দ্বিত্ব রূপ ধারণ করে প্রথমে অশ্ ধ্বনি সৃষ্টি করবে। অবশিষ্ট শ ধ্বনি স্ত-এর স-এর সাথে যুক্ত হয়ে শোস্ ধ্বনি তৈরি করবে। শেষের তি ধ্বনি একাক্ষর হিসেবে উচ্চারিত হবে।]
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:
স্বস্তি {সু- অস্তি {√অস্ (হওয়া) +তি}। + অস্বস্তি {অ-স্বস্তি {সু- অস্তি {√অস্ (হওয়া) +তি}
স্বস্তি ও অস্বস্তি/দ্বন্দ্ব সমাস
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | আরাম | তুষ্টি | আবেগানুভূতি | দশা | সত্তাগুণ | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা |}
'আমি' নামক সত্ত্বা'র অনুভূতির যে অবস্থানে থাকে, তাকেই দশা বলা যেতে পারে। এর আদি দশা পরিস্থিত নিরপেক্ষ এবং নিরাসক্ত। এই অবস্থাকে ধরা যেতে পারে শূন্যমান। এই দশায় 'আমি' বাহ্যিক অনু্ভূতিহীন অবস্থায় থাকে। এই অবস্থা 'আমি' স্বয়ং কোনো দশার ভিতরে প্রবেশ করতে পারে, আবার বাইরের কোনো অবস্থা দ্বারাও বিশেষ কোনো দশায় প্রবেশ করতে পারে। এই দুই দশার এক দিকে থাকে স্বস্তিদায়ক দশা, অপর দিকে অস্বস্তিদায়ক দশা। উভয়ের ভিতরে 'আমি' সব সময়ই স্বস্তিদায়ক দশায় থাকতে চায়। ঘটনাক্রমে তার কাছে কোনো অবস্থা অস্বস্তিদায়ক দশায় চলে গেলে, সে প্রথমে সে দশা থেকে নিরপেক্ষ বা শূন্য দশায় আসার চেষ্টা করে। এরপর সেটাকে স্বস্তিদায়ক দশায় উন্নীত করার চেষ্টা চালায়।
মূলত
কোনো মানুষ নিরবচ্ছিন্নভাবে স্বস্তি বা অস্বস্তিতে থাকে না। মানুষের সহজাত
প্রবৃত্তির ভিতরই রয়েছে এই স্বভাব। মস্তিষ্ক দ্বারা তাড়িত হয়ে সে প্রতিনিয়ত
অস্বস্তি থেকে স্বস্তি-অভিমুখী হয়। এর পিছনে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষসমূহের মধ্যবর্তী
ফাঁকা
জায়গায়
(সিন্যাপ্স) অবস্থিত
সেরোটোনিন জাতীয়
কিছু রাসায়নিক পদার্থ বিশেষ ভূমিকা রাখে।
ধরা যাক একজন মানুষ কোনো আরামদায়ক স্থানে বসে আছে। প্রাথমিক অবস্থায় লোকটি
স্বস্তিতে থাকবে। একইভাবে সে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর, তার অঙ্গের ভিতরে খুব সামান্য
মাত্রায় অস্বস্তির সৃষ্টি হবে। তখন সে একটু নড়ে চড়ে নিজেকে স্বস্তিদায়ক অবস্থানে
নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। মূলত একভাবে কিছুক্ষণ বসে থাকার কারণে, তার আসন সংলগ্ন
দেহাংশ এবং শরীরের অন্যান্য অংশে একধরনের অবসাদ তৈরি হবে। ফলে সিন্যাপ্স-এ
সেরোটোনিন জাতীয় পদার্থের ঘাটতি দেখা দেবে। ফলে সে অস্বস্তি অনুভব করবে। একটি
নড়েচড়ে বসলে, দেহের অবসাদ সাময়িকভাবে দূর হবে। এই সময়
সিন্যাপ্স-এ
সেরোটোনিন জাতীয় পদার্থের আধিক্য ঘটবে। ফলে সে একধরনের স্বস্তি অনুভব করবে।
মূলত একজন মানুষ যখন খুব আরামে থাকে, তখনও সে স্বস্তি-অস্বস্তির খেলার ভিতরে থাকে।
সাধারণভাবে আরামে থাকা হলো স্বস্তি-অস্বস্তির গড় মানে থাকা। এই গড় মানটা গড়ে উঠে
সময় অতিক্রমণ রেখার অভিমুখে।
সাধারণভাবে আমরা প্রাত্যহিক জীবনের
স্বস্তি-অস্বস্তির গড় মানে থাকাকে ভালো আছি বলি। কারণ জৈবিক
বিবর্তনের সূত্রে এই অনুভূতি জিনের অন্তর্গত হয়ে গেছে। ভালো থাকার এই সাধারণ মানকে
আমার শূন্য দশা বলতে পারি।
এই
স্বস্তিদায়ক এবং অস্বস্তিদায়ক দশারেখা অনুসরণ করেই 'আমি'র আনন্দ, বেদনা, রাগ, ক্ষোভ
ইত্যাদি দশায় পৌঁছায়।
ধরা যাক কেউ একজন একটি কাঁটার অগ্রভাগ
দিয়ে অন্য কারো শরীরে স্পর্শ করলো মাত্র। এই অন্য
আমি'র কাছে প্রাথমিকভাবে
তা একটি
স্পর্শের অনুভূতি হিসেবেই থাকবে। কিন্তু এই 'আমি' যদি তার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানে
যে, এই কাঁটা শরীরে প্রবেশ করলে কি হতে পারে। তাহলে এই 'আমি' একটি অস্বস্তিকর দশায়
পৌঁছাবে। ধরা যাক এই দশা '-১' । এবার এই কাঁটার অগ্রভাগের অতি সমান্য অংশ, শরীরের
ভিতর সত্যিই প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হলো। এর ফলে একটি ভিন্নরকম তথ্য সঙ্কেত মস্তিষ্কে
পৌঁছে যাবে। সঙ্কেত প্রক্রিয়াজাত হয়ে যে ফলাফল পাওয়া যাবে, 'আমি' তাকে একটি ভিন্নতর
অনুভূতি হিসেবে বিবেচনা করবে। গাণিতিক বিচারে আমরা তাকে -১, -১.২৫, -১.৫০ ইত্যাদি
যাই বলি না কেন, 'আমি' তাকে হয়তো বেদনা হিসেবে চিহ্নিত করবে। মূলত বেদনা এখানে একটি
দশার নাম মাত্র।
'আমি' তার উপলব্ধির ভিতর দিয়ে
নানা রকম দশায় পৌঁছায়। দশাকেই বলা হয়−
আনন্দ, বেদনা, দুঃখ, সুখ ইত্যাদি। এক্ষেত্রেও
সিন্যাপ্স-এ
সেরোটোনিন জাতীয় পদার্থের ভূমিকা থাকে আরও তীব্রভাবে।
স্বস্তি-অস্বস্তি দশা সৃষ্টির পিছনে কারণ থাকে। আমি ওই কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। অনেক সময় মনে হয় কারণ ছাড়াই মন খারাপ হয়। মূলত এই জাতীয় অনুভূতির পিছনেও কারণ থাকে, যা আমি নিরুপণ করতে পারে না। আমি' স্বস্তি-অস্বস্তির অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে নানা কারণে। যেমন-
স্বস্তি থেকে জন্ম নেয় সুখ ও আনন্দ। যে কোনো স্বস্তিবোধে মানুষ বার বার ফিরে আসতে চায়। যখন সে স্বস্তিবোধে ফিরে আসে তখন তাকে আমরা ভালো-লাগা বলতে পারি। স্বস্তিবোধ তুলনামূলক দশা। স্বস্তিদায়ক দশার প্রতিটি স্তরে জন্ম নেয় ভালো-লাগার বোধ। ধরা যাক একটি দৃশ্য দেখে কারো ভালো লেগেছিল। এর অর্থ এই নয় যে, ওই দৃশ্যটি দেখার আগে সে অস্বস্তিতে ছিল। কিন্তু দৃশ্যটিকে প্রথম দেখার আগে, তখন হয়তো তার দেহ ও মন সাধারণ স্বস্তিদশাতেই ছিল। সে যখন দৃশ্যটি দেখলো, তখন তার মনের ভিতর অধিকতর স্বস্তিদায়ক দশার দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করলো। যা থেকে সৃষ্টি হলো দেখার সুখ এবং সেখান থেকে আনন্দের অনুভূতি। এই আনন্দের অনুভূতি যদি তাকে প্রবল ভাবে আলোড়িত করে, তাহলে তার ভিতরে ভালোলাগার বোধ জাগাবে। এই বোধ যদি দৃশ্যটি বারবার দেখার জন্য তাড়িত করে, তাহলে মনের ভিতর জন্ম নেবে আকাঙ্ক্ষা। আকাঙ্ক্ষা পূরণের তীব্র ইচ্ছা লোভে পরিণত হয়। আকাঙ্ক্ষার গভীরে থাকে আকর্ষণ। যখন কোনো নান্দনিক বিষয় উপভোগ করার জন্য আকাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠে, তখন এক ধরনের আকৃষ্টজনিত টানের সৃষ্টি হয়। এই টানই হলো আকর্ষণ।