আহলে হাদীস
ইসলাম ধর্মের সুন্নি পন্থীদের একটি শাখা।

ইসালাম ধর্মের সুন্নি পন্থীদের চারটি মাহযাব রয়েছে। এগুলো হলো- হানাফি, শাফেয়ি, মালিকি, ও হাম্বলি। সুন্নি পন্থীদের এই চার মাযহাবের বাইরের একটি বিশেষ দল হলো লা- মাযাহাবি। লা (নয়) মাযাহাবি, এই অর্থে এদেরকে বলা হয়- লা মাযাহাবি।  'হাদ িসের অনুসারী' হিসেবে এঁরা নিজেদেরকে 'আহলে হাদীস' বা 'সালাফী' হিসেবে পরিচয় দেন। মূলত এঁরা কোরান ও সহিহ হাদিসকে ইসলামের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।

আহলে হাদীসের মূল নীতি: উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের উত্তর প্রদেশে ইসলামি সংস্কারপন্থী আন্দোলনের সূচনা হয়। এই আন্দোলনটি  প্রাথমিকভাবে সূচিত হয়েছিল- সৈয়দ আহমদ ব্রেলভি'র ((১৭৮৬–১৮৩১)) ভাবাদর্শে। তিনি চেয়েছিলেন- হজরত মুহম্মদ (সাঃ),-এর প্রকৃত মত াদর্শ অনুসারে এটি তরিকা বা মতাদর্শ প্রণয়ন করা। তার আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভারতে একটি অখণ্ড ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তিনি মুসলমানদের কাছে আমিরুল মোমেনীন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তৎকালীন ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে শুরু করে মর্দান পর্যন্ত এ বিশাল অঞ্চলে তিনি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ইসলামি শাসনব্যবস্থা চালু করেন।

একই ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সৈয়দ নাজির হোসেন দেহলভী (১৮০৫-১৯০২ খ্রিষ্টাব্দ) একটি বিশেষ ধর্মাদ্শ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সৈয়দ আহমদ ব্রেলভি'র সাথে পরিচিত হন। এরপর তিনি ধর্‌মবিষয়ক অধ্যায়নের জন্য দিল্লীতে যান। সেখানে কিছুদিন তিনি ওহাবী স্কুল পরিচালনা করেন। ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লিতে ওহাবী বিদ্রোহীদের নেতা সন্দেহে ব্রিটিশরা তঁকে গ্রেপ্তার করে ছয় মাস আটক রাখে। কিন্তু বিদ্রোহীদের সমর্থন না করার বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর অবশেষে তাকে কোনও অভিযোগ ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে হজ পালনের জন্য জেদ্দায় ব্রিটিশ ভাইস কনসাল ভ্রমণের সময় সরকার তাকে সুপারিশপত্র প্রদান করে। তবে, ভারতীয় হানাফীরা তাকে ইতিমধ্যেই জেদ্দার অটোমান গভর্নরের কাছে ধর্মবিরোধী হিসেবে তাঁর নিন্দা করেছিলেন। তাই  ভাইস কনসালের চিঠিটি উপস্থাপন করার আগেই তাকে গ্রেপ্তার করে কারারুদ্ধ করেছিলেন। পরে ব্রিটিশ ভাইস কনসালের হস্তক্ষেপে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।

১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দের তিনি ভোপালের সিদ্দিক হাসান খান এবং মাদ্রাসা-ই রহিমিয়াহর দুই প্রভাবশালী প্রাক্তন ছাত্র মুহাম্মদ হুসেন বাতালভী (আনুমানিক ১৮৪০-১৯২০) এর সাথে মিলিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক - ধর্মীয় সংগঠন জামাত আহলে হাদিস, হাদিসের লোকদের দল নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠা করেন।