মানব সভ্যতার ইতিহাসের আগের অধ্যায়কে সাধারণভাবে বলা হয়
প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতা। সমাজবিজ্ঞানীরা ঐতিহাসিক বিষয়টি নির্ধারণ করেছেন ইতিহাসের
লিখিত নমুনার বিচারে। তাই ঐতিহাসিক যে কোনো বিষয় উল্লেখ করতে গেলই প্রথম উঠে আসে
লিখন পদ্ধতির কথা।
হোমোগণের জীবযাত্রার নিরিখে প্রাগৈতিহাসিক অধ্যায় শুরু হয়েছিল- ২৬
লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
দিকে আবির্ভূত
হোমো হ্যাবিলিসদের
আমল থেকে। আর লিখে রাখার সূত্রে যদি ঐতিহাসিক যুগ বিবেচনা করা যায়, তাহলে এরূপ প্রথম নমুনা
পাওয়া যাবে প্রায় ২৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের সুমেরিয়ান সভ্যতার কিছু রচনায়। এই
বিচারে প্রাগৈতিহাসিক যুগের শেষ অধ্যায় হিসেবে ধরে নেওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব ২৬০০
অব্দ। বিজ্ঞানীরা প্রাগেতিহসিক যুগকে মোটা দাগে প্রস্তরযুগ বলে থাকেন।
এই বিচারে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বা সভ্যতার সময়সীমা দাঁড়ায় - ২৬ লক্ষ থেকে ২৬শ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।
প্রাচীনকালে হোমো গণের
প্রজাতিগুলো নিজেদের সম্পর্কে কোনো কিছু রচনা করার তাগিদ অনুভব করে নি। হতে পারে
লিখে রাখার মতো ভাষার উদ্ভব তখনো হয় নি। হতে পারে লেখার জন্য লিখন পদ্ধতিটি তখন
ছিল না। অর্থাৎ সেই সময়ের ইতিহাসের তথ্য হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে তেমন কিছুই পাই
না। তাই এই সময়ের পাওয়া কিছু উপকরণ দিয়ে এই সময়কে উপলব্ধি করার চেষ্টা করা হয়
মাত্র।
হোমোগণের আদিম জীবনযাত্রার অত্যন্ত সহায়ক
উপকরণ ছিল পাথর। খাবারের জন্য পশু শিকার এবং শিকারী পশুর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা
করার
জন্য এরা পাথরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা শিখেছিল। বিশেষ করে পাথর ছুঁড়ে শত্রুকে বা শিকারকে আঘাত করা যায়, সেটা
তারা সহজাত প্রবৃত্তির দ্বারা শিখেছিল। কিন্তু যখন এরা নিজেদের কৌশল খাটি
পাথরগুলোকে অস্ত্র হিসেবে তৈরি করা শিখলো, তখনই মূলত সভ্যতার পত্তন ঘটলো। আদিম
অস্ত্রগুলোর সুফল দেখে এরা বহু অস্ত্র তৈরি করলো এবং ব্যবহারের নতুন নতুন কৌশলও শিখে নিল।
এর ভিতর দিয়ে তৈরি হয়েছিল আদিম সংস্কৃতি। আর এই সংস্কৃতির অনুশীলন এবং
অনুশীলনের জন্য তৈরিকৃত অস্ত্রগুলো নিয়ে তৈরি হলো প্রাগৈতিহাসক যুগের আদিম যুগ।
আঞ্চলিকতার বিচারে প্রাগৈতিহাসিক যুগের শুরু একই সময়ে শুরু হয়েছিল, তেমনটা বলা
যায় না। কারণ হোমো গণের প্রজাতিসমূহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। এবং
প্রত্যেক জায়াগায় নিজেদের মতো করে সভ্যতা গড়ে তুলেছিল।
প্রাগৈতিহাসিক নমুনা হিসেবে সর্বপ্রাচীন পাথুরে অস্ত্র পাওয়া গেছে কেনিয়ার
লোমেক্উই প্রত্নক্ষেত্র থেকে।
পিয়াসেনজিয়ান
(৩৬-২৫.৮ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) আমলের প্রায় ৩৩ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই প্রত্নক্ষেত্রে প্রাপ্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতো
কেনিয়ান্থ্রোপাস
বা
অস্ট্রালোপিথেকাস আফারেনসিস
নামক হোমো গণের পূর্ববর্তী প্রজাতিরা। আর ২৬ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে হোমো গণের বিভিন্ন প্রজাতি এর উৎকর্ষ রূপ দিতে সমর্থ
হয়েছিল।
২৬ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে
আবিরভুত
হোমো হ্যাবিলিসদের
সূত্রে যে সভ্যতার পত্তন হয়েছিল। সভ্যতার নিরিখে এদের নাম উঠে আসে বিশেষ একটি
কারণে, তা হলো- এদের সৃষ্ট পাথরের অস্ত্রের দ্বারা প্রস্তরযুগের সূচনা হয়েছিল। এই বিচারে
প্রস্তরযুগকেই প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার বস্তুবাচক উপকরণগুলোকে দুটি প্রধানভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
ভাগ দুটি হলো-
(Prehistoric art) বলা হয়ে থাকে।১. ব্যবহার্য সামগ্রী: হোমো গণের প্রজাতিসমূহ তাদের জীবন নির্বাহের জন্য যে সকল উপকরণগুলো ব্যবহার করতো। যেমন পাথরে তৈরি কুঠার। এ সকল উপকরণকে সাধারণভাবে প্রাগৈতিহাসিক যন্ত্রপাতি (Prehistoric tools) বলা হয়ে থাকে।
২. শি্ল্পকর্ম: হোমো গণের প্রজাতিসমূহ তাঁর সৃজনশীল এবং নান্দনিকবোধ থেকে যে সকল উপকরণ সৃষ্টি করেছিল। যেমন গুহশিল্পকর্ম। এর ভিতরে ছিল চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি। এসকল উপকরণকে সাধারণভাবে প্রাগৈতিহাসিক শিল্পকর্ম