য়ো-আর্কিয়ান যুগ
 ৪০০-৩৬০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ

Eoarchean Era

আর্কিয়ান কালের প্রথম যুগ। গ্রিক  eos  অর্থ ঊষা আর archaios অর্থ প্রাচীন। দুইয়ে মিলে এর অর্থ দাঁড়ায় 'প্রাচীন যুগের ঊষাকাল'। এর পূর্ব্র্তী কাল ছিল হেডিন (৪৬০-৪০০ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ)। আগের হেডিন কালে পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডল গঠনের কাজ শুরু হয়েছিল। এই যুগে এই গঠনের কাজ শেষ হয়েছিল। কিন্তু এই কালের শুরু দিকে বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত তাপমাত্রা পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডল গঠনে বিশেষ সহায়ক ছিল না। তবে এই যুগে ভূত্বক জমাট বেধে তৈরি হয়ৈছিল আদিম ক্র্যাটন ও ঢালভূখণ্ড। যা পরব্র্তী সময়ে মহাদেশ ও মহামহাদেশ তৈরির পথকে সুগম করে তুলেছিল। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে নানা ধরনের গ্যাসীয় উপকরণ যুক্ত হয়েছিল এই সময়ে। এই কালের আগে পৃথিবীর ভূত্বকের উপর দিয়ে যে উত্তপ্ত বায়ু প্রবাহ হতো, তার তাপমাত্রা ছিল বর্তমান পৃথিবীর তাপমাত্রার ৩ গুণেরও বেশি। এই যুগের শুরুর দিকে মহাসাগর-সাগরগুলোর তরল পদার্থের সিংহভাগ দখল করে নিয়েছিল নানা যৌগিক পদার্থ মিশ্রিত জলরাশি এবং এই সাগরের পানিতেই সূচনা ঘটেছিল আদি প্রাণের।

এ যুগের জড় জগৎ

৪০০ থেকে ৩৯৬ কোটি খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দ: এই সময়ে ব্যাপক অগ্ন্যুৎপাতের ফলে পৃথিবীর উপরিতলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এর ফলে ভূ-গোলকের উপরিতলের ম্যাগ্‌মা অপেক্ষাকৃত কম ঘন ছিল এবং ভূত্বকও বেশ পাতলা ছিল। এর ফলে সে সময়ের প্রায় অখণ্ড জলরাশির তলদেশের শীতলতা, তরল ম্যাগ্‌মাকে দ্রুত শীতল করে আগ্নেয়শিলাস্তরের পুরুত্ব বৃদ্ধি করেছিল। কিন্তু পৃথিবীজলাশয়ের বাইরের পাতলা ভূত্বকের উপরিতলের আবরণের নিচের ম্যাগ্‌মা যথেষ্ঠ কঠিন না হয়ে উঠায়, সেখান থেকে উৎপন্ন গ্যাস প্রবল ভাবে ভূত্বকে চাপের সৃষ্টি করেছিল। এর ফলে ভূত্বকের কোনো কোনো অংশ বেলুনের মতো ফুলে উঠেছিল। আবার ভূত্বকের কোনো কোনো অংশ ফেটে গিয়ে লাভা স্রোত সৃষ্টি করেছিল। এর ফলে ভূত্বকের কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছিল উঁচু-নিচু ভূখণ্ড। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছিল আগ্নেয় দ্বীপ। সে সময়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আগ্নেয়-দ্বীপগুলো বার বার প্লাবিত হয়েছে লাভাস্রোতে অগ্ন্যুৎপাতঘটিত ছাই ভস্মের অধঃক্ষেপের কারণে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আগ্নেয়-দ্বীপগুলো জোড়া লেগে লেগে বড় বড় ভূখণ্ড তৈরি করেছিল।

তবে এর ভিতরেও চলছিল ভাঙাচোরার খেলা। নিচের তরল ম্যাগমার চাপে, উপরে ভাসমান ভূখণ্ডগুলো পরস্পরের ধাক্কায় ভেঙে পড়ছিল অবিরত। আবার নিচের তরল ম্যাগমার প্রবাহে ভূ-ভগ্নাংশগুলো ভাসতে ভাসতে যুক্ত হয়ে বড় ভূখণ্ডের ভিত্তি তৈরিও করছিল। প্রথম দিকের এই ভূখণ্ডগুলোর পুরুত্ব বেশি ছিল না। তবে এদের নিচের তরল পাথর ক্রমাগত তাপ হারিয়ে কঠিনতর হয়ে উঠছিল। এই সূত্রে ভূখণ্ডগুলো ভারি হয়ে উঠার পাশাপশি, নিচের তরল পাথরের সমুদ্রের প্রোথিত হচ্ছিল। এ সকল প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে নানাভাবে ভূখণ্ডগুলো সুদৃঢ় হয়ে উঠছিল। এরই মধ্য দিয়ে কিছু বড় বড় ভূখণ্ডের উদ্ভব হয়েছিল। ভূবিজ্ঞানীরা এই সুদৃঢ় বিশাল ভূখণ্ডগুলোকে ক্র্যাটন নামে অভিহিত করে থাকেন।

এই পরিবেশে সে সময়ের ক্র্যাটনগুলো আদিম দশায় ছিল। পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে এদের ভিতর ক্রমাগত ঠোকাঠুকি চলছিল। পরস্পরের দিকে অবিরাম ধাক্কা এবং চাপ সৃষ্টির কারণে, ৩৯৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ক্র্যাটনগুলোর সীমানা বরাবর উঁচু উঁচু টিলা তৈরি হওয়া শুরু হয়েছিল।  ৩৯৬-৩৯৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে ছোটো ছোটো টিলাগুলো বিশাল পর্বতমালায় রূপ লাভ করেছিল। ধারণা করা হয়, এগুলোর কোনো কোনোটির উচ্চতা বর্তমান পৃথিবীর যে কোনো পর্বতশৃঙ্গের চেয়ে উঁচু ছিল। কালক্রমে ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, বরফযুগের প্রভাবে এ সকল উচ্চতর শৃঙ্গ ভেঙে পড়েছিল।  ভূবিজ্ঞানীর এই জাতীয় পর্বতমালাগুলোকে বলে থাকেন গিরিজনি। এ সময়ে ক্র্যাটনের চলমান দশায় অনেক পাহাড় ভূগর্ভে প্রোথিত হয়ে উচ্চতা হারিয়েছিল।

ভূত্বকে যখন এই ভাঙা-গড়ার খেলা চলছিল, তখন বায়ুমণ্ডলে সঞ্চিত হচ্ছিল গ্যাসীয় নানা উপকরণ। এই সময়ের বাতাসে যুক্ত হয়েছিল জলীয় বাস্প (H2O), হাইড্রোক্লোরিক এ্যাসিড (HCl), কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2), কার্বন মনো-অক্সাইড (CO), নাইট্রোজেন (N2) ইত্যাদির মতো গ্যাসীয় উপকরণ। পরবর্তী সময়ে এদের ভিতর রাসায়নিক বিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল মিথেন (CH4) এ্যামোনিয়া (NH3) এবং হাইড্রোজেন সায়ানাইড (HCN) জাতীয় যৌগ পদার্থ। এই সময় বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ খুবই কম ছিল।

জীবজগৎ
এই যুগের শুরুর দিকে মহাসাগর-সাগরগুলোর তরল পদার্থের সিংহভাগ দখল করে নিয়েছিল নানা যৌগিক পদার্থ মিশ্রিত জলরাশি এবং এই সাগরের পানিতেই সূচনা ঘটেছিল আদি প্রাণের। সে সময়ের সাগরের পানির উপযুক্ত তাপমাত্রা, পানিতে দ্রবীভূত বা ভাসমান রাসায়নিক উপকরণ, আর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশকৃত অতি-বেগুনরশ্মি-সহ বিভিন্ন ধরনের মহাজাগতিক রশ্মির আঘাতে, নূতন ধরনের জটিল অণু সৃষ্টি করেছিল। এই জটিল অনগুলোর ভিতর ছিল ফসফরিক এ্যাসিড, নানা ধরনের চিনি, নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারক (পিউরিন ও পিরামিডিন)। আদি সমূদ্রের উপযুক্ত পরিবেশে এই সকল জটিল অণুসমূহের ক্রম-সংযোজনে সৃষ্টি হয়েছিল আদি নিউক্লেইক এ্যাসিড। এই এ্যাসিডে বংশগত তথ্য সংরক্ষণ করা ও সুনির্দিষ্ট প্রোটিন অণু তৈরি করার ক্ষমতার সূত্রে এক ধরনের আক্ষেপ সৃষ্টি হয়েছিল। রাসায়নিক আসক্তির সূত্রে এই এ্যাসিডগুলো গড়ে তুলেছিল আরএনএ [ribonucleic acid (RNA)] মূলত এই সৃষ্টি প্রক্রিয়ার ভিতর মধ্য দিয়েই তৈরি হয়েছিল আদি জীবকোষ।

এই যুগের কালানুক্রমিক জীবজগতের বিবর্তনসমূহ

এই যুগের পরে শুরু হয় প্যালেয়োআর্কিয়ান যুগ। এর ব্যাপ্তীকাল ছিল ৩৬০ কোটি থেকে ৩২০ কোটি পূর্বাব্দ।


সূত্র
http://en.wikipedia.org/wiki/Paleogene